শিল্প খাতে লোডশেডিংয়ের প্রভাব
০৭ জুন ২০২৩, ১২:৫৯ অপরাহ্ণ
সম্পাদকীয় :
কয়লা সংকটে দেশের বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চালু থাকা ইউনিটটি ৫ জুন দুপুরে বন্ধ হয়ে গেল। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপর ইউনিটটিও ২৫ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে লোডশেডিং পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের স্থায়ী সমাধান না হলে রপ্তানি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেহেতু ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি খাতের সমস্যা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেহেতু রপ্তানি খাত সচল রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। জানা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় দিনরাতের অধিকাংশ সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে না পারায় বড় অঙ্কের অর্থ জরিমানা গুনতে হচ্ছে অনেক উদ্যোক্তাকে।
এদিকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অনেকের অর্ডারও বাতিল হয়ে যাচ্ছে। শিল্প-কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বিকল্প হিসাবে জেনারেটর দিয়ে কারখানা সচল রাখতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। কিন্তু তাতেও শতভাগ উৎপাদন করা যাচ্ছে না, উৎপাদন কমে অর্ধেকে নেমেছে। ঘনঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ায় কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতিরও ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় লোডশেডিং কম করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তাদের অভিযোগ, লোডশেডিংয়ের আগাম তথ্য জানানোর কথা থাকলেও তা-ও মানা হচ্ছে না।
বস্তুত তীব্র ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে কয়লা ও গ্যাস আমদানির জন্য। এ অর্থ থেকে ইতোমধ্যে কয়লা আমদানির জন্য এলসিও খোলা হয়েছে। এ কয়লা চলতি মাসের শেষদিকে দেশে আসার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম নিম্নমুখী হলেও ডলার সংকটে সময়মতো তা আমদানি করা সম্ভব হয়নি। দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা ক্রমবর্ধমান। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাস পাওয়া না গেলে শিল্পোদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীসহ অনেকেই সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটের স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে।