গণধর্ষণের পর দুই পা ভেঙে নারীর বিরুদ্ধে মামলা ইউপি সদস্যের!

Daily Ajker Sylhet

admin

০৮ অক্টো ২০২৩, ০৬:২৮ অপরাহ্ণ


গণধর্ষণের পর দুই পা ভেঙে নারীর বিরুদ্ধে মামলা ইউপি সদস্যের!

স্টাফ রিপোর্টার:
আমতলীতে গণধর্ষণের মামলা করায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে এসে ওই নারীর পা ভেঙে দিয়েছেন আসামিরা। এরপর ওই নারীর বিরুদ্ধে উল্টো মামলাও করেছেন।

ধর্ষণ মামলার আসামি ইউপি সদস্য এনায়েত প্যাদার ভাই হারুন প্যাদার দায়ের করা নন-জিআর মামলায় রোববার আদালতে হাজিরা দিতে আসেন ওই নারী।

জানা গেছে, তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের ওই নারীকে গত ৮ এপ্রিল রাতে ইউপি সদস্য এনায়েত প্যাদাসহ ৩-৪ জনে পালাক্রমে গণধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় এনায়েত প্যাদাকে প্রধান আসামি করে ওই নারী গত ৯ এপ্রিল তালতলী থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। এ মামলা দায়েরের পরপরই ইউপি সদস্য এনায়েত তাকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আসামি এনায়েত প্যাদা এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। জামিনে এসেই আসামি এনায়েত প্যাদা তাকে মামলা তুলে নিতে আবারো হুমকি দেন।

এ ঘটনায় গত ২৩ মে ওই নারী তালতলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় এনায়েত প্যাদা ও তার সহযোগীরা তাকে ঘর থেকে তুলে আনেন। পরে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার দুই পা ভেঙে দেন। ওই নারীর চিৎকারে লোকজন ছুটে আসলেও তারা ভয়ে এগিয়ে আসেননি।

স্বজনরা ওই নারীকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই হাসপাতালে গত চার মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

এদিকে ইউপি সদস্য এনায়েত প্যাদা তার দুই পা ভেঙে দিয়েই ক্ষান্ত হননি উল্টো তার বিরুদ্ধে তার ভাই হারুন প্যাদাকে দিয়ে তালতলী থানায় নন-জিআর মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে গত ১৭ জুলাই আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। পরে আদালতের বিচারক ওই নারীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। রোববার এ মামলায় তিনি আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা দিতে আসেন।

আদালতের বারান্দায় তিনি রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় অবস্থান করছিলেন। তার দুই পায়ে এখনো ক্ষত দগদগ করছে। বাম পায়ে পচন ধরেছে। ডান পায়ের ক্ষত কিছুটা শুকালেও বাম পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। স্ত্রীর ওপর এমন বর্বর নির্যাতনের আঘাত সইতে না পেরে গত এক মাস পূর্বে ওই নারীর স্বামী মারা গেছেন।

আদালতের বারান্দায় ইউপি সদস্য এনায়েত প্যাদার বর্বরোচিত নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই নারী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমাকে ইউপি সদস্যসহ ৩-৪ জনে গণধর্ষণ করেছে। মামলা দিয়েছি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। উল্টো পুলিশ আমাকে হয়রানি করেছে। এনায়েত আমাকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে, আমি পুলিশকে জানালেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হাইকোর্ট থেকে এনায়েত প্যাদা আগাম জামিনে এসে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়েছে। আমি মামলা তুলে না নিলে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করবে, আমার পা ভেঙে দিবে, অ্যাসিড মেরে পরিবারসহ পুড়িয়ে দেবে। পুলিশকে এমন ঘটনা জানালেও একটি ডায়েরি করেই তারা থেমে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, যে দিন থানায় ডায়েরি করেছি, সেই দিনই সন্ধ্যায় আমাকে এনায়েত ও তার সহযোগীরা তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দুই পা ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। উল্টো পুলিশ আমার বিরুদ্ধে এনায়েতের ভাই হারুনের দায়ের করা নন-জিআর মামলায় আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে আদালত আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আমি সেই মামলায় ভাঙা দুই পা নিয়ে স্বজনদের কোলে আদালতে হাজিরা দিতে এসেছি।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য এনায়েত প্যাদা তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ওই নারীর পা ভেঙে দেয়নি। উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে।

তালতলী থানার ওসি মো. শহীদুল ইসলাম খান বলেন, আসামি জামিনে এবং মামলাটি তদন্তাধীন আছে।

তিনি আরও বলেন, আমি থানায় যোগদান করার আগের ঘটনা এটি। তারপরও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

Sharing is caring!