বিরল সম্মাননা পাচ্ছেন মেয়র আরিফ!

Daily Ajker Sylhet

admin

১২ অক্টো ২০২৩, ১২:৪০ অপরাহ্ণ


বিরল সম্মাননা পাচ্ছেন মেয়র আরিফ!

স্টাফ রিপোর্টার:
আগামী ৭ নভেম্বর মেয়াদ শেষ হচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন আইন), ২০০৯-এর ৬ ধারা মোতাবেক ৮ নভেম্বর দায়িত্ব নেবেন নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তবে মেয়রের চেয়ার ছাড়ার ঠিক আগে মেয়র আরিফ পাচ্ছেন ‘বিরল’ সম্মাননা।

কারণ- পৌরসভা থাকাকালীন এবং সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে সিলেটের কোনো মেয়রকে এভাবে আয়োজন করে বিদায় জানায়নি পরিষদ। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বেলায়-ই ঘটছে ব্যতিক্রম।

আগামী ১৩ অক্টোবর (শুক্রবার) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ দিবে সিসিক পরিষদ। এদিন দুপুরে মহানগরের সারদা হল প্রাঙ্গণে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ‘নাগরিক সংবর্ধনা’র ব্যানার-ফেস্টুন এরই মধ্যে মহানগরের সড়কগুলোতে টানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. একে আবদুল মোমেন।

চলতি বছরের ২১ জুন পঞ্চম সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১টি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম (বাবুল) পান ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট।

দলীয় নির্দেশনা মেনে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি টানা দুই বারের মেয়র, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। ৭ নভেম্বরের পর থেকে আর নগরপিতার দায়িত্বে থাকছেন না তিনি। তাই দায়িত্ব হস্তান্তরের আগের দিন আরিফকে ‘আয়োজন’ করে বিদায় জানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিসিক সূত্র।

গত ৬ আগস্ট নগরভবনে সিসিক পরিষদের অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ড থেকে টানা ৫ বার নির্বাচিত কাউন্সিলর, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাচ্ছে পরিষদ। সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত পরিষদ থেকে এমন উদ্যোগ আর নেওয়া হয়নি। আমরাই প্রথম মেয়রকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাচ্ছি।’

আগে আর এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর আজাদ বলেন- ‘শ্রদ্ধাভাজন রাজনীতিবীদ সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ভোটে হেরে যাবেন তা আমরা ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো- ২০১৩ সালের নির্বাচনে ফের মেয়র নির্বাচিন হবেন সিলেটবাসীর ভোটে টানা তিনবার জনপ্রতিনিধি হওয়া নন্দিত কামরান।’

উল্লেখ্য, পঞ্চম সিটি নির্বাচনের আগে গুঞ্জন ছিলো- এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন আরিফ। তাঁর পলিসি হবে- নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগ‌রিক সমা‌জের ব্যানা‌রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। বিজয়ী হওয়ার পর দল তাকে ‘এমনিতেই কাছে টেনে নেবে’।

তবে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত। ‘বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না’ এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েন আরিফ। তাই লন্ডনে থাকা দলের নীতি নির্ধারক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে রাজি করিয়ে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই সেখানে যান সিলেট সিটি মেয়র। ১০ এপ্রিল বিএন‌পির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তা‌রেক রহমা‌নের সঙ্গে সাক্ষাৎও ক‌রে‌ন মেয়র আরিফ। লন্ড‌নের কিংস্টন এলাকার এক‌টি ভেন্যুতে তাদের এই সাক্ষাৎ অনু‌ষ্ঠিত হয়।

তবে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষেই আরিফ ঘোষণা দেন- আর প্রার্থী হচ্ছেন না সিসিকে।

ওই সময় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়- সিসিকে প্রার্থী না হলেও নতুন চমক নিয়ে লন্ডন থেকে ফিরছেন আরিফ। হাই কমান্ডের নির্দেশনা মেনে সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী না হয়ে তাঁর এই ‘ত্যাগ স্বীকারে’ দল তাঁকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে। আগামীতে আরিফকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করার আশ্বাস দিয়েছেন তারেক রহমান। তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে সিলেটের একটি আসনে আরিফকে প্রার্থী করবে বিএনপি।

তবে দেশে ফিরে আরিফ শুরু করেন ‘নাটকীয়তা’। ফেরার দিন সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের দেওয়া সংবর্ধনাকালে তিনি বলেন- ‘হাই কমান্ড থেকে সিগন্যাল পেয়েছি। তবে কী সিগন্যাল তা খোলাসা করবো ঈদুল ফিতরের পরে।’

পরবর্তীতে ১ মে শ্রমিক দিবসের এক সমাবেশে মেয়র আরিফ বলেন- সারা দেশে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও সিলেটের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমি প্রার্থী হলে কেন হবো তা ২০ মে জনসভা করে সবার সামনে ব্যাখ্যা করবো।

আরিফের এই বক্তব্যে ফের শুরু হয় তোলপাড়, তাঁকে নিয়ে ফের শুরু হয় জোর আলোচনা।

তবে সব শেষে নগরবাসীর সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০ মে সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা দেন মেয়র আরিফ।

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি তাকে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠার পদ দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে আরিফুল হক সিসিকের একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের আশীর্বাদ হয়ে তিনি সিলেটের প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। সেসময় তাকে ‘ডিপ্লোম্যাটিক লিডার’ হিসেবে আখ্যা দেন সাইফুর। ওই সময় আরিফ সিটি কর্পোরেশনের নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

২০১৩ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন নিয়ে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন আরিফ। আওয়ামী লীগের শাসনামলেই তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র হন তিনি। ২০১৮ সালে ফের কামরানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ।

আরিফুল হকের জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৩ নভেম্বর সিলেটের কুমারপাড়ায়। তাঁর পিতা মো. শফিকুল হক চৌধুরী এবং মা আমিনা খাতুন।

Sharing is caring!