Beanibazarer Alo

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে রাত বাড়লেই জমজমাট হয় ভারতীয় চিনি চোরাচালান

admin

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১২:৪১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১২:৪১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সুনামগঞ্জে রাত বাড়লেই জমজমাট হয় ভারতীয় চিনি চোরাচালান

Manual7 Ad Code

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সুনামগঞ্জের দুই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন আসছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় চিনি। সেই চিনি প্রতিদিন রাত ১২টার পর সুনামগঞ্জের পৌর শহর দিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি এসব এলাকায় দিন দিন বাড়ছে চোরাচালানিদের দৌরাত্ম্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জের বৈঠাখালী এলাকার সুরমা নদীর ওপর আব্দুজ জহুর সেতু নির্মাণের পর বদলে যায় এই অঞ্চলের অর্থনীতি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই সেতুর ওপর দিয়ে লক্ষাধিক মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছালেও রাত ১২টার পর থেকে বদলে যায় এই সেতুর চিত্র। নীরবতা ও অন্ধকার পুঁজি করে প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় চিনি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

Manual2 Ad Code

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২টা ১০ মিনিট। চারদিকে কুয়াশায় ডাকা। তবে দ্রুত গতির সারি সারি ট্রাকের হেডলাইটের আলোয় আলোকিত আব্দুজ জহুর সেতু। ট্রাকের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখা গেলো পলিথিনে মোড়ানো ট্রাকভর্তি ভারতীয় চিনি। এগুলো নিয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের দিকে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা।

আব্দুজ জহুর সেতু থেকে ঠিক ২ কিলোমিটার দূরে রাধানগর পয়েন্ট। সেই পয়েন্টে যেতেই অন্ধকারের মধ্যে চোখে পড়লো একটি মালভর্তি ট্রাক। সেই ট্রাকের সামনে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে গিয়ে ক্যামেরা অন করতেই দেখা যায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়েই ট্রাক রেখে দৌড়ে পালিয়ে যান তারা।

Manual5 Ad Code

ট্রাকচালক শিবুল জানান, গাড়িতে ভারতীয় চিনি আছে। সেগুলো জেলার জাওয়া বাজার এলাকায় যাবে। পুলিশ ট্রাক আটকে টাকা দাবি করেছিল, পরে আপনাদের দেখে চলে গেছে।

এদিকে রাধানগর পয়েন্ট থেকে আরও ৩ কিলোমিটার দূরে চালবন পয়েন্ট। সেখানে গিয়ে চোখে পড়ে রাস্তার দুই পাশে পুলিশের চেকপোস্ট বক্স বসানো। তবে সেখানে দায়িত্বরত কোনো পুলিশ সদস্যকে পাওয়া যায়নি।

Manual5 Ad Code

চালবন পয়েন্ট থেকে আরও ৫ কিলোমিটার দূরে বিশম্ভরপুর উপজেলার পলাশ বাজারে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চায়ের ব্যবসা করেন করম আলী। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখেন তিনি। তার চায়ের দোকানে প্রতিনিয়ত থাকে লোক সমাগম। তবে রাত ১২টার পর থেকে তার বেচাকেনা জমে ওঠে।

করম আলী জানান, শুধু পলাশ বাজার দিয়ে চোরাকারবারিরা ভারতীয় চিনি রপ্তানি করে না, এই উপজেলার অন্য সড়ক দিয়েও প্রতিদিন ভারতীয় চিনি বের হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।

করম আলীর মতো বাজারে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারাও জানালেন, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে কোটি কোটি টাকার চিনি-আলু দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

প্রতিদিন রাত ১২টার পর ধনপুর, চিকারকান্দি, বাঘবেড়, চেংবিল, শরীফগঞ্জ, মতুরকান্দিসহ বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ৮ থেকে ১০ ট্রাক চিনি বের করে চোরাকারবারিরা। প্রতিটি গাড়িতে ৩০০ বস্তা করে ভারতীয় চিনি থাকে। পরে রাধানগর এলাকায় এসে পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে সেসব চিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। সেইসঙ্গে চোরাকারবারিদের একটি চক্র মোটরসাইকেল মহড়ায় এসব অবৈধ ভারতীয় চিনির ট্রাক সুনামগঞ্জ পৌর শহরের প্রবেশ মুখ হাসনরাজা তোরণ পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে।

Manual5 Ad Code

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ভারতীয় চিনি চোরাকারবারি সাইফুল বলেন, সীমান্ত এলাকায় ২০ থেকে ২২ জন ব্যবসায়ী চোরাই পথে চিনি নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে। যার ভাগ সবাই পায়।

সম্প্রতি সুনামগঞ্জ আব্দুজ জহুর সেতুর ওপর থেকে ২৯৮ বস্তা ভারতীয় চিনি নিয়ে যাওয়া একটি ট্রাক স্থানীয় সাংবাদিকরা আটক করে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে ট্রাকটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ রিপোর্টাস ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, সুনামগঞ্জের সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারতীয় অবৈধ পণ্য যাচ্ছে, এদিকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো উচিৎ।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ অভিযানে সুনামগঞ্জে ১৯২.৯ মেট্রিক টন চিনি জব্দ করা হয়, যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৯২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সেইসঙ্গে ১৯৭ জন চোরাকারবারিকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্ বলেন, চোরাচালানের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন