Beanibazarer Alo

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আরেক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু, কান্না থামছে না স্ত্রী-সন্তানের

admin

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
আরেক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু, কান্না থামছে না স্ত্রী-সন্তানের

Manual7 Ad Code

গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় গত বুধবার পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত জালাল উদ্দিন (৪২) নামে আরো এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহত জালাল উদ্দিন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। তিনি কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় ফজল মোল্লার বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করে স্থানীয় ইসলাম গ্রুপের সুইং সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। একই ঘটনায় আহত একই কারখানার নারী শ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুন (২০) গুরুতর আহত হলে ঐ দিন তাকে ঢামেক নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ পর্যন্ত মোট চার জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আশরাফ উদ্দিন জানান, গত বৃহস্পতিবার কোনাবাড়ীর তুসুকা গ্রুপের কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার রাতে শ্রমিক ও বহিরাগতসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরো অজ্ঞাতনামা ১০০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তুসুকা গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ বাদী হয়ে কোনাবাড়ী মেট্রো থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।

Manual2 Ad Code

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় ইসলাম গ্রুপসহ আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঐ ঘটনায় আঞ্জুয়ারা খাতুন ও জালাল উদ্দিনসহ অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হন। আহতদের মধ্যে শুরুতর অবস্থায় আঞ্জুয়ারা খাতুন ও জালাল উদ্দিনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঐ দিনই আঞ্জুয়ারা খাতুন মারা যান। একই হাসপাতালে চার দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শনিবার রাত ১২টার দিকে জালাল উদ্দিনও মারা যান।

Manual4 Ad Code

বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, কারখানাটি একটি শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এখানে তুসুকা জিন্স, তুসুকা ট্রাউজার, তুসুকা প্রসেসিং এবং তুসুকা প্যাকেজিং নামে চারটি কারখানা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আড়াইটার দিকে দুষ্কৃতকারীরা লোহার পাইপ, লোহার রড, কাঠের বাটাম, বাঁশের লাঠি হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে কারখানায় বিভিন্ন ফ্লোর ও অফিসরুমে ভাঙচুর চালায়। এতে থাই গ্লাস, ২৫টি ল্যাপটপ, ৩৫টি পিসি, দুটি ফটোকপি মেশিন, তিনটি প্রিন্টার, একটি এলইডি টিভি, ৩০টি এক্সসেস কন্ট্রোলসহ বিভিন্ন মেশিনসহ এয়ার কন্ডিশন ইউনিট, নভোএয়ার, ৫২টি সিসি ক্যামেরা, রপ্তানিযোগ্য পণ্য নষ্ট, ১২টি কাভার্ড ভ্যান, ১১টি প্রাইভেট কার, একটি অ্যাম্বুুলেন্স ভাঙচুর করে। এ সময় তারা কারখানায় অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায়। বাধা দিতে গেলে কারখানার কয়েক জন সিকিউরিটি গার্ড এবং কর্মকর্তাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। ভাঙচুরে ঐ কারখানার ৫ কোটি থেকে ৬ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন এবং নগদ ৮ লাখ ২ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

Manual7 Ad Code

কারখানার বাইরে এবং ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ছবি দেখে ঐ ২৪ জনকে শনাক্ত করেন বলে তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে রবিবার সকালে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকার গোন্ডেন রিপিট নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করেছে। পরে গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুরাদ আলী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

Manual5 Ad Code

ঢাকায় ফের বিক্ষোভ: রাজধানীর মিরপুর ১০ ও ১৩ এলাকার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে পোশাককারখানার কয়েক শ শ্রমিক। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রমিকরা মিরপুর ১৩ নম্বর সড়কের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তবে সাড়ে ১০টার দিকে তারা রাস্তা থেকে সরে যান। জানা গেছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেশির ভাগ মিরপুর-১৩ নম্বরের ভিশন, এমবিএম, লোডস্টার, সারোজ গার্মেন্টসসহ আশপাশের ১০টি গার্মেন্টসের শ্রমিক।

আশুলিয়ায় ১২ মামলায় আসামি সাড়ে ৩ হাজার : ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে পোশাকশ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের জেরে গত কয়েক দিনের বিক্ষোভ ও কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল রবিবার পর্যন্ত আশুলিয়া থানায় ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শেয়ার করুন