Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইতালি যেতে অনিশ্চিত অপেক্ষায় সিলেটের অনেকে!

admin

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪ | ১২:০২ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ | ১২:০২ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ইতালি যেতে অনিশ্চিত অপেক্ষায় সিলেটের অনেকে!

Manual1 Ad Code

নিউজ ডেস্ক:
ভিসা পেতে মাত্রাতিরিক্ত সময় বিলম্ব হওয়ায় উচ্চা শিক্ষার জন্য ইতালি যেতে পারছেন না সিলেট বিভাগের অনেকেই। ভিসা তো পাচ্ছেন-ই না, ফেরত পাচ্ছেন না নিজেদের পাসপোর্টও। এ অবস্থায় তারা হয়ে পড়েছেন হতাশ। অনেকে ভিসা জমা দিয়ে ছেড়েছিলেন চাকরি। কিন্তু ইতালির ভিসা হতে দেরি দেখে পাসপোর্ট ফেরত না পাওয়ায় অন্য কোনো দেশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায়ও যেতে পারছেন না। এখন সব কূল হারানোর শঙ্কায় এসব শিক্ষার্থী।

Manual1 Ad Code

সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শাহজাহান ইসলাম জনি। শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করেন। বাবা কৃষি কাজ করেন। ঘরে মা ছাড়াও এক ভাই ও বোন আছে। জনি পরিবারের বড় সন্তান। তার উপর দায়িত্বটাও বেশি। তাই লেখাপড়া ছেড়ে মামার মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন গত বছর থেকে। তার বাবার সঙ্গে কথা বলে মামা সবকিছুর ব্যবস্থা করেছেন। ইতালি প্রবাসী মামা ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করেছেন। তারপর থেকে তিনি লেখাপড়ায় মনযোগ দিতে পারছেন না।

জনি বলেন, ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর সেপ্টেম্বর মাসে ভিসার আবেদন করে অ্যাপয়মেন্ট নিয়ে জমা দিয়েছি। তারপর থেকে ভিসার অপেক্ষা করছি। শুনেছিলাম ২১ দিনের ভেতরে ভিসা হোক আর না হোক পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয়। কিন্তু এত মাস হয়ে গেলেও ভিসা হবে কিনা সেই খবরও পাচ্ছি না। ভিসা সেন্টারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা বলেন, পর্যায়ক্রমে সবার কাছে মেসেজ যাবে। তবে কবে সেই মেসেজ যাবে সেটি বলা হচ্ছে না। তাই খবর নেয়ার জন্য ঢাকায় আসতে হয়। এটা আমার জন্য ভোগান্তি। আমি ও আমার পরিবার এ নিয়ে খুব হতাশায় আছি। বড় পরিবার আমাদের। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও নাই। অনেক কষ্ট করে বাবা ইতালির টাকার বন্দোবস্ত করেছেন।

জমির মতো শ’ শ’ মানুষের অবস্থা একইরকম। তারা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ইতালি যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ঘটেছে বিপত্তি। অনেকে তাদের পূর্বের পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পরিবারের খরচ চালাতে অর্থনৈতিকভাবেও বিপর্যস্ত। তারা কেউই ভাবেননি পাসপোর্ট ফিরে পেতে এত সময় লাগবে। এরকম অবস্থায় তারা অন্য কোনো দেশেও চেষ্টা করতে পারছেন না। তাই একটু ভালো খবর শোনার অপেক্ষায় তারা ইতালি দূতাবাসের থার্ড পার্টি ভিএফএস গ্লোবালের গুলশানের অফিসের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রায় প্রতিদিন।

অনেকেই এই ভিসা সেন্টারের নিয়ম অনুযায়ী দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভেতরে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। কিন্তু প্রতিদিনই তাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ বা আশা দেয়া হয় না।

Manual2 Ad Code

ঢাকার যুবক রায়হান উদ্দিন। প্রায় প্রতিদিনই এ অফিসের সামনে এসে মনমরা হয়ে বসে থাকেন। কখনো আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটান। ৩৬ বছর বয়সী এই যুবকের প্রতিটি দিন কাটে হতাশায়। কী হচ্ছে, কী হবে এমন চিন্তা তার সবসময়। তিনি চাকরিতে ছিলেন। ইতালিতে যাওয়ার আবেদনের পর চাকরি ছেড়ে দেন। আবার চাকরিতে যোগ দিবেন নাকি অপেক্ষা করবেন কাঙ্ক্ষিত সেই যাত্রার? পরিবারের কাছ থেকে বার বার সময় নিয়েছেন। এখন আর তাদেরকে কিছু বলার বা সময় নেয়ার মতো অবস্থা নাই। বন্ধুবান্ধবরাও এখন হাসাহাসি শুরু করেছেন। সবমিলিয়ে কঠিন এক সময় পার করছেন রায়হান।

রায়হান বলেন, উত্তরায় অনেক বছর ধরে। পেশাদার হেড শেফ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ছোটবড় অনেক রেস্টুরেন্টে চাকরি করেছি। বড় অংকের বেতনও পেতাম। কয়েকজন শুভাকাংক্ষী পরামর্শ দেয়- ইউরোপে গেলে মাসে কয়েক লাখ টাকা বেতন পাবো। প্রথম অবস্থায় তাদের কথার গুরুত্ব দেইনি। কিছুদিন যাবার পর মনে হলো একবার ইউরোপ ঘুরে এসে দেখি। তাই পরিচিত এক ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ইতালির ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করি। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে আবেদন করার পর কয়েক মাসের ভেতরে আমার পারমিট বের হয়ে যায়। তারপর আনুষঙ্গিক কাজ ও কাগজপত্র যোগাড় করে ওই বছরের আগস্ট মাসে ভিসার আবেদন করে পাসপোর্ট জমা দেই। আমাকে বলা হয়েছিল পাসপোর্ট জমা দেয়ার মাসখানেকের ভেতরে ভিসা হয়ে যাবে। তাই আমি সেই হিসাব মাথায় রেখে যেখানে চাকরি করতাম সেখান থেকে ইস্তফা দেই। তারপর প্রায় ১০ মাস হতে চললো। এখন পর্যন্ত কোনো খবর পাচ্ছি না। এতদিন ধরে চাকরিহারা হয়ে ঘুরছি। আর কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে সেটাও জানি না। ভাগ্য পরিবর্তনের যুদ্ধে নেমে এক অনিশ্চিত অপেক্ষায় দিন-রাত কাটাচ্ছি।

Manual3 Ad Code

উল্লেখ্য, ইতালি দূতাবাসের সামনে গত মাসে বিক্ষোভ করেন দেশটিতে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিরা। ভিসা দিতে সময় ক্ষেপণ করায় তারা তাদের পাসপোর্ট ফেরত পাওয়ার জন্য বিক্ষোভ করেন। ওই বিক্ষোভে শত শত ভুক্তভোগী প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান করেন।

তাদের অভিযোগ ছিলো- স্পন্সর নিয়ে ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন তারা। কিন্তু বছর পার হওয়ার পরও তারা ভিসা বা পাসপোর্ট কিছুই ফেরত পাচ্ছেন না। এদের মধ্যে অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী ছিলেন। তাদের পাসপোর্টে ওইসব দেশের ভিসা ছিল। কিন্তু পাসপোর্ট পেতে দেরি হওয়াতে তাদের ওই ভিসার মেয়াদও চলে গেছে।

Manual5 Ad Code

তারা জানান- ভিসার জন্য পাসপোর্ট ও কাগজপত্র জমা দেয়ার ক্ষেত্রে ভিএফএস থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় না। এ ছাড়া কিছু সময়ের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিংয়ের স্লট খুলে দেয়া হয়। অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিংয়ের জন্য আগে থেকে যারা ভিএফএস-কে অর্থ দিয়ে রেখেছেন, তারাই সে সময়টি জানেন এবং সে সময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পান। এসব অ্যাপয়েন্টমেন্টের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায়, যার কাছ থেকে যত পারে, তত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন