Beanibazarer Alo

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার রেললাইন ছাড়াও আজ ১৬ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

admin

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ১১:২১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
কক্সবাজার রেললাইন ছাড়াও আজ ১৬ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
১৮ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প আজ শনিবার (১১ নভেম্বর) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের এই রেললাইনের পাশাপাশি কক্সবাজারে ৫৩ হাজার কোটি টাকার আরও ১৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তিনি।

Manual6 Ad Code

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, ‘রেললাইন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী যে ১৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন, তাতে রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযুক্তি প্রকল্প। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ, কক্সবাজার সদরে খাল লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চারটি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প। এছাড়াও রয়েছে জনস্বাস্থ্য, গণপূর্ত ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নাধীন তিনটি প্রকল্প।’

মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র: সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি জাপানের আর্থিক সহায়তায় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ২৯ জুলাই দুপুরে। ৬ মেগাওয়াটের পরীক্ষামূলক উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এটি ১২ মেগাওয়াটে উৎপাদন শুরু করে অক্টোবরের শুরুতে।

Manual7 Ad Code

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোওয়ার হোসেন মজুমদার জানান, উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। মহেশখালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের মাঝামাঝি স্থানে এক হাজার ৬০৮ একর জমির ওপর স্থাপিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দুটি ইউনিটে বিভক্ত। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) বাস্তবায়ন করেছে।

প্রকৌশলী মনোওয়ার হোসেন জানান, ২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া মাতারবাড়ী আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোলপাওয়ার প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) এই প্রকল্পের জন্য ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এই অর্থ বৃদ্ধি করে জাইকা মোট ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা দিয়েছে। এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার অবশিষ্ট অর্থ ব্যয় করেছে।

সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযুক্ত প্রকল্প: কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযুক্ত হয়েছে। সমুদ্রের নিচ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে গত ১৩ এপ্রিল চালু করা হয়। ওই দিন থেকে দ্বীপটির দেড় হাজার গ্রাহক পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে শুরু করে।

Manual7 Ad Code

প্রকল্পটির পরিচালক ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৯৮০ সাল থেকে জেনারেটরের মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। ওই দেড় হাজার গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ চালু করা হয়েছে। দ্বীপের ২০ হাজার গ্রাহককে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, ‘দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে ২০২০ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ৪০০ কোটি টাকায় ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপে শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের আগেই কুতুবদিয়ায় পৌঁছে গেল জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ।

প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে কুতুবদিয়া। সাগরতলে দুই লেনে গেছে দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার ক্যাবল। সেখানে ১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র, ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে।

বাঁকখালী নদীতে ৫৯৬ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কক্সবাজার অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কস্তুরাঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ‘কক্সবাজার-খুরুশকুল’ সংযোগ সেতু। এটি হচ্ছে বক্স গার্ডার সেতু।

মামুন খান জানান, ৫৯৬ মিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৫৯ কোটি টাকা। সেতুটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ২০২১ সালের আগস্টের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও নানা জটিলতায় কাজ শেষ হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত লেগেছে।

Manual4 Ad Code

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের ফলে পর্যটন শিল্প খাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কক্সবাজার শহরকে সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে এই সেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজার শহরের উত্তর দিকে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সেখানে যারা জমি দিয়েছে, তাদের চার হাজার ৪০৯টি পরিবারকে খুরুশকুল প্রান্তে আবাসন ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সরকার। তাদের যাতায়াতে এই সেতুটি ব্যবহৃত হবে। এছাড়া, সেতুটি নির্মাণের ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব অনেক কমে যাবে।’

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আজ উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদরে খাল লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প। যেখানে রয়েছে চার কোটি টাকায় নির্মিত কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল ঠাণ্ডা চৌকিদার পাড়ার ৬০ মিটার সিসি গার্ডার ব্রিজ, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চকরিয়া বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্প, উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প ও ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীতে গোরকঘাটা-জনতা বাজার সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রী আরও যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প- ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদরের জাহারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, ২ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীর ইউনুসখালি নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়ার রত্নাপালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও মারিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৫ কোটি টাকায় বাস্তবায়নকৃত রামু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা রয়েছে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকনাফ মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর নন্দাখালীতে ১৮৪ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ ও প্রাথমিক স্কুলগুলোতে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্প।

শেয়ার করুন