Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুলাউড়ার ‘জঙ্গি আস্তানা’ নিয়ে যেসব তথ্য দিলো সিটিটিসি

admin

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩ | ০৭:০৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩ | ০৭:০৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
কুলাউড়ার ‘জঙ্গি আস্তানা’ নিয়ে যেসব তথ্য দিলো সিটিটিসি

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামের পাহাড়ি একটি বাড়ি থেকে ১০ জঙ্গিকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা। কথিত ‘ইমাম মাহমুদের’ আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেখানে ৫০ শতাংশ জমি কিনে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল।

Manual8 Ad Code

রবিবার (১৩ আগস্ট) এ বিষয়ে ঢাকায় প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য দেন সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

Manual7 Ad Code

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ এবং প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য হিজরতের মাধ্যমে আটককৃতরা নিজ বাড়ি ছেড়ে পার্বত্য এলাকায় আসে এবং প্রশিক্ষণ শুরু করে। কথিত ইমাম মাহমুদের এক অনুসারী জামিল কুলাউরা থানাধীন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ৫০ শতাংশ জমি কিনেছিল। সেখানেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়।

এর আগে শনিবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউরা থানাধীন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘অপারেশন হিলসাইড’ অভিযান চালানো হয়। ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে চারজন পুরুষ এবং ছয়জন নারীসহ মোট ১০ জনকে আটক করা হয়। অভিযানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র, কমান্ডো রুট, পাঞ্চিং ব্যাগ ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সামগ্রী, উগ্রবাদী বই, নগদ অর্থ এবং স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় থানায় মামলা হলে আটককৃতদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে- কথিত ইমাম মাহমুদ, ‘ইমাম মাহাদী’র অগ্রবর্তী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা বিশ্বাস করে- বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে ইমাম মাহাদীর পূর্ব যে ‘দুর্বল প্রকৃতির’ ব্যক্তির আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে- তাদের নেতা ‘ইমাম মাহমুদ’ সেই ব্যক্তি। আর এই কথিত ইমাম মাহমুদ ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদে নেতৃত্ব দিবেন। গ্রেপ্তার আসামীরা জানিয়েছেন- কথিত ইমাম মাহমুদ তাদের বলেছেন- যারা এই জিহাদে অংশগ্রহণ করবেন তারা সকলেই পরকালীন পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন। জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের প্রথম ধাপ হল গৃহত্যাগ তথা হিজরত। তাই জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দশ্যে ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে সংগঠিত হবার জন্য তারা সকলে ঘটনাস্থলে মিলিত হয়েছিল।’

Manual2 Ad Code

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন- জনৈক জামিল নামক কথিত ইমাম মাহমুদের এক অনুসারী কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ৫০ শতাংশ জমি কিনেছিল। সেখানেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে যশোর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী লোকদের পরিবারসহ এবং পরিবার ছাড়া নিখোঁজ হবার বিষয়ে তথ্য পেয়ে এ সংক্রান্তে অনুসন্ধান শুরু করে সিটিটিসি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।

এদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থেকে ডা. সোহেল তানজীম রানা, যশোর থেকে ঢাকার নটরডেম কলেজ শিক্ষার্থী ফাহিম, জামালপুর থেকে এরশাদুজ্জামান শাহিনসহ আরও অনেকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে ৭ আগস্ট রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে কথিত ইমাম মাহমুদের আহবানে কথিত হিজরতের মাধ্যমে সপরিবারে গৃহত্যাগ করে আসা ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের সাথে থাকা ৮ শিশুকে হেফাজতে নেওয়া হয়।’

সিটিটিসি প্রধান বলেন- অভিযুক্তদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, কথিত ইমাম মাহমুদের আহবানে উদ্বুদ্ধ হয়ে মোট ছয়টি পরিবার হিজরতের জন্য গৃহত্যাগ করে। তাদের মধ্যে মেহেরপুর জেলা থেকে হিজরত করা পাঁচটি পরিবার এবং ঝিনাইদহ থেকে হিজরত করা একটি পরিবার আছে।

গত ১২ আগস্ট মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই গ্রুপের আরও এক সদস্য মো. ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ জানায়, মৌলভীবাজার কুলাউড়ার একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় লোকচক্ষুর অন্তরালে কথিত ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে তার বেশকিছু অনুসারী আস্তানা স্থাপন করেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ‘অপারেশন হিলসাইড’ অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হলে অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন- ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামেই তারা বিভিন্ন লোকজনদের উদ্বুদ্ধ করেছে। আরও বলা হয়, ইমাম মাহাদী’র আগমনের পূর্বে যে ইমাম মাহমুদ-এর কথা বলা হচ্ছে, তিনিই সেই ইমাম মাহমুদ।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ইমাম মাহমুদ বলে যে নিজেকে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন তিনিসহ এই সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। ইফতার করা গেলেই সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার পাওয়া যাবে।’

আস্তানাটি কতদিন আগে স্থাপন করা হয়েছিল জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দু-মাস আগে রাস্তাটি স্থাপন করা হয়েছিল। আস্তানা তৈরি করার জন্য ৫০ শতক জায়গা কেনা হয়েছিল। যার নামে ওই জমির দলিল করা হয়েছিল সেই দলিল গ্রহীতার নামও আমরা পেয়েছি।’

Manual1 Ad Code

শেয়ার করুন