Beanibazarer Alo

  সিলেট     বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জনগণের কথা বললেই কার্যকর হবে সংসদ

admin

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৩ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
জনগণের কথা বললেই কার্যকর হবে সংসদ

Manual6 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে-এমন কথা বলেছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যরা।

তারা আরও বলেন, সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, সংসদকে কার্যকর করতে চাইলে, সংসদে মানুষের দুঃখ-কষ্ট সমস্যা নিয়ে আলোচনা হতে হবে। জনগণের কথা বললেই কার্যকর হবে সংসদ।

তারা আরও বলেন, নির্বাচন ঘিরে দেশি-বিদেশি চক্র নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই চক্রটি সাংবিধানিক ধারা বানচাল করে দেশে অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ভেদাভেদ ভুলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৪৭ বিধিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শনিবার সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যরা এসব কথা বলেন।

Manual3 Ad Code

আলোচনায় অংশ নিয়ে কাউকে নির্বাচনে আনা সরকারের কাজ নয় উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন আয়োজক কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে সরকারি দল একটি পক্ষ। সব বিরোধী দলও একটি পক্ষ। সেখানে নির্বাচনে আনা না-আনা, নির্বাচনে কেউ আসবে কি আসবে না, সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে নির্বাচন কমিশন। এটি সরকারি দলের দায়িত্ব নয় যে সবাইকে দাওয়াত করে নির্বাচনে আনা।

চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আজ নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্র ও সংসদের পথচলা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য এবং সংসদীয় গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য কেউ নির্বাচনে আসুক কিংবা না আসুক নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হতে হবে।

Manual7 Ad Code

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, যখন নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করা হয়, তখন সরকারের হাতে কোনো ক্ষমতা থাকে না। নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন আয়োজন করবে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সব দল অংশগ্রহণ করবে। কাউকে দাওয়াত করে হাতে-পায়ে ধরে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব সরকারের নয়। কিংবা সরকারি দলের নয়।।

সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রকে প্রতিহত ও সংসদকে অবজ্ঞা করা এবং সংসদীয় গণতন্ত্র যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে না পারে, সেজন্য নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি আজ নানা ষড়যন্ত্র করছে। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচন ভন্ডুল করার জন্য ৫০০ ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। কয়েক ডজন মানুষকে হত্যা করে। তবে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সংসদের পথচলা অব্যাহত থেকেছে। গণতন্ত্রের পথচলা অব্যাহত থেকেছে। আজও সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সংসদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই সংসদের পথচলাকে এবং সংসদীয় গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কয়েকদিন আগে বিএনপির সংসদ-সদস্যরা যে পদত্যাগ করলেন, তারা দেশের গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এই পদত্যাগ করেছেন।

Manual6 Ad Code

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমাদের মতের দ্বিমত থাকতে পারে। তবে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, সংসদকে সত্যিকার কার্যকর করতে চাইলে এই সংসদের মধ্যে মানুষের দুঃখ-কষ্ট সমস্যা নিয়ে আলোচনা হতে হবে। সেই আলোচনা না হলে সবাই এখানে দাবি করলেও সংসদ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হবে না। সংসদের বাইরের কথাই কেন্দ্রবিন্দু হবে। যারা বাইরে আছে, তাদের কথাই গণমাধ্যমে প্রাধান্য পাবে। এটা কেবল বিরোধী দলের দায়িত্ব নয়। এটা আজ সরকারি দলেরও দায়িত্ব। সবাই মিলেই আমাদের জনগণের কথা বলতে হবে।

তিনি বলেন, দলের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে। কিন্তু দলের চেয়ে রাষ্ট্র ও জনগণ বড়। সরকারি দলের সদস্যদের বলব, এই দেশে কি কোনো ভুল হয় না? কই আপনারা তো সেই ভুল ধরিয়ে দেন না।

আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, নির্বাচনকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হবে। কে করবে? বলা হয়েছে এটা সরকারের দায়িত্ব নয়। এটা আমিও বিশ্বাস করি, সরকারের দায়িত্ব নয়। সব দলকে নির্বাচনে আনা সরকারের দায়িত্ব হতে পারে না। দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সেই আস্থা তৈরি করতে হবে। সেই আস্থা যদি তৈরি করা যায়, তারপরও যদি কোনো দল না আসে, কোনো কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যে সহায়তা দরকার, সরকারকে নির্বাচন কমিশনকে তা দিতে হবে। এটাই হচ্ছে সরকারের দায়িত্ব।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা রয়েছে, তা লঙ্ঘন করে সেখানে সাংঘর্ষিক বিষয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সংবিধানে যে জঞ্জাল জমে গেছে, তা দূর করতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি। রাশেদ খান মেনন বলেন, সত্যিকার অর্থে এই সংসদ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ফসল। তবে এই পার্লামেন্ট কখনো মসৃণ ছিল না। এই সংসদে কখনো আঘাত এসেছে, বাতিল হয়েছে, সংসদকে ঠুঁটো জগন্নাথ করা হয়েছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক খুনি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে সরকারকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অবৈধ ক্ষমতাধারী জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী করে সংবিধান পালটে দেন, অধিকার ক্ষুণ্ন করেন।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখছি, আমাদের পার্লামেন্টের মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এখানে এক ঘণ্টার বক্তব্যের মধ্যে ৩ মিনিট মাত্র গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা হয়। বাকি কথা হয় দলের নেতার কথা, নিজের কথা। এর বাইরে সংসদ এগোতে পারছে না।

সংবিধানের চার মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বিলোপ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জাতিগত বিভ্রান্তি দূরীকরণ এবং ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ-সদস্যদের ক্ষমতায়নে সংবিধান পর্যালোচনায় সংসদীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে তিনি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে এই সংবিধান পর্যালোচনা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।

Manual8 Ad Code

বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলতে বিএনপি যেটা বোঝায়, আদতে সেটা নয় বলে সরকারদলীয় সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষিতের হার ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান শাজাহান খান। তিনি বলেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন আছে। তার অধীনে নির্বাচন হবে। রাষ্ট্র চলবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে সরকারি দলের আরেক সংসদ-সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানা ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হচ্ছে, সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক থাকতে হবে।

 

শেয়ার করুন