Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাপানে বাড়ছে ‘সেপারেশন ম্যারেজ’

admin

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৩ | ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৩ | ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
জাপানে বাড়ছে ‘সেপারেশন ম্যারেজ’

Manual5 Ad Code

নিউজ ডেস্ক:
ঘন ঘন বিয়ে ভাঙছে। বিচ্ছেদের পর বেছে নিচ্ছেন স্বাধীনচেতা জীবন। নতুন প্রজন্মের অবস্থা আরও ভয়াবহ। বিয়ের কথা শুনলেই গা জ্বলে। ১৮-৩৪ বছর বয়সি তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ- আগ্রহ নেই কোনো পক্ষেরই। সংসার-সন্তান-একই ছাদের নিচে বসবাস নিয়ে চলমান এ বিস্বাদ-বিতৃষ্ণার মধ্যেই জাপানের সমাজব্যবস্থায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এক অভিনব দাম্পত্যরীতি- দূরবাসী বিয়ে। ইংরেজিতে সেপারেশন ম্যারেজ। জাপানের ভাষায় সোটসুকন।

Manual7 Ad Code

স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জীবন এবং মূল্যবোধের প্রতি সম্মান রেখে একটি স্বাধীন জীবন অতিবাহিত করতে বেছে নিচ্ছেন বিবাহের এই ধরন। যেখানে উভয়ের সম্মতিতে আলাদা বাড়িতে বসবাস করেন। দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকেই ‘দূরবাসী বিয়ে’ ডাল-পালা ছড়াচ্ছে রাজধানী টোকিওসহ জাপানের বেশ কয়েকটি বড় বড় শহরেও। এটি বিয়ের এমন একটি রূপ যেখানে একটি দম্পতি আইনত বিবাহিত কিন্তু পৃথকভাবে বসবাস করে। তারা সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে বা কিছু দিন পরপর একে অপরের সঙ্গে দেখা করেন। এক সঙ্গে থাকেন। অর্থাৎ প্রচলিত নিয়মের বাইরে পারস্পরিক সম্মতিতে ভালো বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যই ইচ্ছাকৃতভাবে আলাদাভাবে বসবাস করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিয়ের পর একটি দম্পতি একই অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে আলাদা ঘর ভাড়া নিতে পারে বা অন্য কাছাকাছি জায়গায় থাকতে পারে।

Manual1 Ad Code

এই বিয়ের বড় সুবিধা হলো দম্পতিরা সঙ্গীর জীবনের ছন্দ নিয়ে চিন্তা না করে নিজের মতো একা সময় কাটাতে পারেন। দ্বিতীয়ত আর্থিক সংকট। উচ্চ জীবনমানের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে সংসার পাততে ভয় পান। একপর্যায়ে তারাই বেছে নিচ্ছেন ঝামেলাহীন ‘দূরবাসী বিয়ের’ সুখ। কারণ তারা তাদের কাজে আরও বেশি সময় দিতে চায়। একে অপরকে যতই ভালোবাসুক না কেন, এক সঙ্গে থাকতে গেলে মূল্যবোধের পার্থক্য ঘটতে বাধ্য- শুধুমাত্র এই আশঙ্কা থেকেও এ ধরনের বিয়েতে ঝুঁকছেন অনেকেই। দূরবর্তী বিয়ে সম্পর্কে টোকিওতে আন্তর্জাতিক নারী ও পরিবারের জন্য একটি অনলাইন গাইডের পরিচালক স্যাভি টোকিও তার ওয়েবসাইটে বলেন, বিয়ের পর দম্পতিদের নিজেদের স্থান তৈরি করার একটি সহজ উপায়। যাতে সহজেই তারা পূর্বের জীবনধারায় ফিরে যেতে পারে। তারা এমন একটি আনুষ্ঠানিক সংযোগ রাখে যেন বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনার জন্য আবার একসঙ্গে বসবাস করতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই ব্যবস্থার মূল দিক হলো এটি দম্পতিদের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

টরন্টো ফ্যামিলি থেরাপির থেরাপিস্ট এবং ক্লিনিকাল ডিরেক্টর জোয়ানা সিডেল গ্লোবাল নিউজকে বলেন, বিয়ের পর একসাথে থাকা বা না থাকার জন্য আমাদের চিন্তা-ভাবনা আরও উন্মুক্ত হওয়া উচিত। বলেন, তিনি অনেক দম্পতিকে দেখেছেন যারা মিশ্র পরিবার হিসাবে বসবাস করার পরিবর্তে আলাদাভাবে বসবাস এবং সন্তানদের পৃথকভাবে বড় করার সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে কানাডার অনেক দম্পতি বিয়ে না ভেঙে পরিস্থিতির কারণে ইতোমধ্যে আলাদা থাকার ব্যবস্থা বেছে নিয়েছে। এ ছাড়াও অনেককে আলাদা থাকতে হয় কারণ তারা বিভিন্ন শহরে কাজ করে। এমন চাকরিও রয়েছে যার জন্য তাদের সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় শহরের বাইরে থাকতে হয়। অর্থের অভাবে ইচ্ছে থাকলেও সঙ্গীকে নেওয়া যায় না।

Manual6 Ad Code

তারা শুধু সপ্তাহান্তে সময় কাটানোর জন্য একসঙ্গে হয়। তবে ব্যবস্থাগুলো কারও কারও জন্য খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে সম্ভব নাও হতে পারে। বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন টোকিওর এমন একজন বাসিন্দা কোব বলেন, এই ধরনের সম্পর্কের অংশীদাররা সবসময় একসঙ্গে থাকে না এবং এটা সত্যি যে দূরত্বের কারণে অনেকের সম্পর্ক উন্নতি লাভ করে। সরকার পরিচালিত ২০২২ সালের অক্টোবরের এক জরিপ বলছে, জাপানে প্রতি বছর আনুমানিক ৩৩% দম্পতি বিয়েবিচ্ছেদ করে।

এতে দেশটিতে পরিবার প্রথা টিকানো নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। যদিও দেশটির সিভিল কোডের অনুচ্ছেদ ৭৫২ স্পষ্টভাবে বলা আছে, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকবে। একে অপরকে সহযোগিতা করবে, সমর্থন করবে। তবু টিকছে না সংসার। এ থেকে পরিত্রাণ মিলতেই সহায়ক হতে পারে দূরবাসী বিয়ে-এমনটাই মনে করছেন দেশটির সমাজবিজ্ঞানীরা।

Manual5 Ad Code

শেয়ার করুন