Beanibazarer Alo

  সিলেট     রবিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার ঠেকাতে প্রাণ দিয়েছিলেন ‘খোকন’

admin

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৩ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার ঠেকাতে প্রাণ দিয়েছিলেন ‘খোকন’

Manual8 Ad Code

বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার ঠেকাতে প্রাণ দিয়েছিলেন ‘খোকন’
স্টাফ রিপোর্টার:
২৫ মার্চ কালরাতে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছিল বাংলার নিরীহ মানুষের। তবে তার আগেই হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন একজন। ইতিহাসের পাতায় যিনি আড়ালেই রয়ে গেছেন। এতদিন তাকে একজন পুলিশ সদস্য ভাবা হলেও, তিনি ছিলেন একজন ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠক। খোকন গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া এক চরিত্র। পুরো নাম আবু জাফর আকরাম উল্লাহ খোকন।

Manual6 Ad Code

খোকন স্বাধীনতা পূর্ব ঢাকা মাঠের ফুটবলার। তার চেয়ে বড় পরিচয় বঙ্গবন্ধু পাগল এক যু্বক। উত্তপ্ত ৭১ এর ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিরোধ গড়ায় হানাদার বাহিনীর বুলেট কেড়ে নেয় খোকনের প্রাণ। তিনি ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন তৃতীয় বিভাগের ফুটবল, ছিলেন সংগঠক। এছাড়া বর্তমান শেখ জামাল ক্লাবের ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও। অথচ সেখানে নেই তার কোনো স্মৃতিচিহ্ন, মেলেনি স্মৃতিও। যুদ্ধের সময় খোকনের পরিবার ধানমন্ডিতে ছিল সবার সুপরিচিত। বঙ্গবন্ধু পাগল খোকন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানেই যেতেন সেখানেই তার সঙ্গে থাকতেন। তাই বঙ্গবন্ধু তাকে খুব স্নেহ করতেন।

অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধু খোকনকে বললেন, এখন থেকে তোর দায়িত্ব ধানমন্ডিতে যারা আমরা বাঙালিরা বসবাস করি তাদের অবাঙালি বা পাকিস্তানিরা যাতে কোন ক্ষতি করতে না পারে তুই খেয়াল রাখবি। কোথায় কী হয় মনিটরিং করবি আমাকে খবরাখবর জানাবি। আর লিডারের এই নির্দেশনা পালনের খবরটি পাড়ার খোকনের বন্ধু-বান্ধব সবাই জানতেন। তাই ২৫ মার্চ ৭১-এ সন্ধ্যার পর থেকেই ঐ ধানমন্ডিতে খোকনের ব্যস্ততা ঘিরে বন্ধুরা ভাবছিলেন কী ঘটতে যাচ্ছে রাতে। খোকন কেন বারবার ৩২ নাম্বারের দিকে যাচ্ছে আবার অন্য রাস্তায় ফিরে আসছে? এমন নানান শঙ্কা নিয়েই বন্ধুরা রাতে যার যার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। রাত যত বাড়ছে ততই যেন বিপদের আশঙ্কা বেড়েই চলছে। এরই মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ল পাকিস্তানি সেনারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাস্তায় নামছে। সবার আশঙ্কা সেনারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করতে পারে। রাত ১১টার পর থেকেই রাস্তায় গোলাগুলির শব্দ।

চারদিকেই সুনসান নীরবতায় শুধু গুলির আওয়াজ ভেসে আসছে। ধানমন্ডির বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যেই রাত পার করলেন। এর মধ্যে কারফিউ জারির ঘোষণা। সকালেই ধানমন্ডির বাসিন্দারা জানতে পারলেন বঙ্গবন্ধু বাড়িতে নেই। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করল কিনা এটাই ধানমন্ডির বাসিন্দারা কেউ নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। ঐ রাতে ৭ নাম্বার রোডের খোকনের পরিবারের কারো ঘুম ছিল না। কারণ খোকন তো ঘরে ফিরেনি। সবাই উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রাত পার করলেন। পরে পাওয়া যায় এ তরুণ খেলোয়াড়ের লাশ। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেন শহিদ খোকনের বোন তাহমিনা খান ডলি। জানান, বঙ্গবন্ধু নিজেই জানিয়ে ছিলেন কীভাবে মারা গিয়েছিল খোকন।

Manual5 Ad Code

ডলি বলেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু সেখানেই খোকন, হয়তো বক্তৃতা শুনবে পিছে আর না হয় সঙ্গে সঙ্গে যাবে। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আপনার ছেলে খোকনকে তো আমি বাঁচাতে পারলাম না, আমার বুকেই তাকে গুলি করে মেরে ফেলল’ এরপর মায়ের হাত ধরে তিনি কেঁদে ফেলেছিল।

Manual5 Ad Code

এছাড়া বর্তমানে ধানমন্ডির ৪ নাম্বার রোডে বসবাসকারী ৭০ বছরের প্রবীণ ইয়াহিয়া মোহাম্মদ সেই ২৫ মার্চ রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, খোকন আমার ছোট ভাই প্রয়াত ইয়াকুবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও আমরা খেলাধুলা একসঙ্গেই করতাম। খোকন একজন দক্ষ সংগঠক ও ফুটবল খেলোয়াড় এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বঙ্গবন্ধু ভক্ত ছিলেন। আমরা জানতে পারি ঐ রাতে খোকন জিপ চালিয়ে কলাবাগান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের বাসায় গিয়ে তার গাড়িটি রাখেন এবং তাকে ছাড়া কাউকে যেন গাড়িটি না দেওয়া হয় এই কথা বলেন, এ সময় ঐ বাসার ভাড়াটিয়া দেওয়ান লুতফুর রহমানের ছেলে দেওয়ান আজিজুর রহমানকে বললেন, ৩২ নাম্বারে লিডার একা আমাকে সেখানে যেতেই হবে, এ সময় ওরা নিষেধ করে ৩২এ যেতে যে পাকিস্তানি সেনারা রাস্তায় নেমে গেছে গুলি করছে। কিন্তু খোকনের একটি ডায়লগ-লিডার একা আমাকে যেতেই হবে এই বলেই খোকন বের হয়ে যায়। আর ফিরে আসেনি। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে ইয়াহিয়া মোহাম্মদ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা পরে ডিএল সাহেব ও তার ছেলেদের কাছ থেকে এ ঘটনা জানতে পারি।

 

Manual1 Ad Code

শেয়ার করুন