বিয়ানীবাজারে আপসের চোরাবালিতে ঢাকা পড়ে ন্যায় বিচার

Daily Ajker Sylhet

admin

০৪ মে ২০২৩, ০৭:৫১ অপরাহ্ণ


বিয়ানীবাজারে আপসের চোরাবালিতে ঢাকা পড়ে ন্যায় বিচার

স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজারে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, ফৌজদারী অপরাধ, নারী নির্যাতন, হত্যাকান্ড এমনকি নানা গুরুতর অপরাধের ন্যায় বিচারও আটকে যায় সমাজপতিদের কাছে। আপস নামক চোরাবালিতে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। আপসযোগ্য নয়, এমন কর্মকান্ড করেও পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ায় উপজেলায় অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। কথিত আপসে বাদী-বিবাদী অনিচ্ছা স্বত্ত্ব্বেও রাজি হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীও বিপাকে পড়ে।

প্রায় মাস দু’য়েক আগে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের নয়াগ্রাম রোডের প্রবেশ মুখে প্রকাশ্যে দা’ দিয়ে কোপানো হয় পৌরসভার গাড়িচালক আবুল কাশেমকে। এ ঘটনায় তার একটি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অবশ্য এ ঘটনার ভিকটিম কাশেমও কিছুদিন আগে হামলাকারিকে মারধর করে মাথা ফাঁটিয়ে দেন। বিষয়টি আপসে রফাদফার চেষ্টা চলাকালে পাল্টাপাল্টি হামলার এমন ঘটনা ঘটে। প্রায় সপ্তাহখানেক আগে পৌরশহরের পোস্টঅফিস মোড়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন অটোরিক্সা চালক শ্রমিক সংগঠনের নেতা আব্দুল মন্নান। ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৬ রমজান রাতে একটি টমটম আটকের জের ধরে কয়েকজন পরিবহণ শ্রমিক মারধর করে সোহাগ-শান্ত গংকে। তখনও সমাজপতিরা বিষয়টি আপসে মীমাংসার জন্য ওঠেপড়ে লাগেন। আপস প্রক্রিয়ায় থাকাবস্থায় পাল্টা হামলায় আহত হন শ্রমিক নেতা মন্নান। গত ২০২১ সালে শেওলার ঢেউনগরে আপন ভাই-ভাতিজাদের হামলায় নিহত হন এক সিএনজি চালক। এটিও আপসে মীমাংসার চেষ্টা চলছে। কোনাগ্রামে আপন ভাইয়ের হামলায় খুন হন বড় ভাই।

 

সুজন বিয়ানীবাজার শাখার সভাপতি এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন বলেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে গরিব মানুষের জন্য কোর্ট-কাচারি করা একটা দুরূহ ব্যাপার। গরীব মানুষেরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল হওয়ায় অনেক ঘটনায় মামলাই হয় না। আর হলেও শেষ পর্যন্ত বিচার পাওয়া যায় না।

বিয়ানীবাজারে আপসের আবার রকমফের আছে। প্রথমদিন ঘটনায় জড়িত পক্ষ-বিপক্ষের জবানবন্দি শুনেই আমানত নির্ধারণ করা হয়। অপরাধের ধরণ বুঝে নির্ধারিত হয় আমানত। আমানত জমা দেয়ার পর সাদা স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেয়া হয় দুইপক্ষের। এরপর সমাজপতিদের পিছু পিছু ছুটতে হয় বিচারপ্রার্থীদের। বছরের পর বছর ঘুরে ক্লান্ত বিচারপ্রার্থীরা জমা দেয়া আমানতের আশা ছেড়ে দেন। আপসের নামে বিচার বঞ্চিত হয়ে একলা পথ চলা শুরু করেন সংষ্লিষ্টরা। তবে কোন ক্ষেত্রে বিচার মিললেও আমানতের টাকা ফেরত মিলেনা। নানা অজুহাতে ওই টাকা ব্যয় দেখিয়ে সমাজপতিরা আত্মসাৎ করে নেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, জামিন অযোগ্য ধারায় অনেক মামলা হলেও স্থানীয় সমাজপতিরা তা আপস করে ফেলেন। তারা স্ট্যাম্পে উভয়পক্ষের লিখিত সমঝোতার কথা জানিয়ে মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলে সুপারিশ করেন। কিন্তু আপস অযোগ্য ধারায় পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র প্রদান করা হয়। পরে আদালতে বাদী, বিবাদী এবং সাক্ষীরা দফায়-দফায় হাজিরা দিয়ে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পান।

জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বিচারপ্রার্থীদের কয়েক হাজার অভিযোগ পড়ে আছে। নানা কারণে স্থানীয়ভাবে বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদছে। ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে গ্রাম আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত এমন ফৌজদারী ঘটনাও দীর্ঘসময় থেকে ঝুলে আছে।

বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, ফৌজদারী অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর পুলিশের কানে আসলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। থানা পুলিশের বাইরে উভয়পক্ষ রাজি থাকলে আপস করা হয়। বাদী-বিবাদী সমঝোতায় সম্মত হলে পুলিশের কিছু করার নেই।

Sharing is caring!