Beanibazarer Alo

  সিলেট     বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অপহৃত জাহাজ থেকে স্ত্রীর কাছে বার্তা/‘এখনো অক্ষত আছি, বেঁচে ফিরলে দেখা হবে’

admin

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪ | ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ | ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
অপহৃত জাহাজ থেকে স্ত্রীর কাছে বার্তা/‘এখনো অক্ষত আছি, বেঁচে ফিরলে দেখা হবে’

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ফাইটার হিসেবে কর্মরত আহমেদ মো. সালেহ (৪৮) তার স্ত্রী তানিয়া আক্তারকে অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘একটু আগে সেহেরি খেয়েছি। এখনো অক্ষত আছি, বেঁচে ফিরলে দেখা হবে।’

অপহৃত আহমেদ মো. সালেহ নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের সিংবাহুড়া গ্রামের মুন্সি বাড়ির মৃত সাখাওয়াত উল্লাহর ছেলে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে মো. সালেহ সবার বড়। তার স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান রয়েছে।

বুধবার (১৩ মার্চ) বিকেলে আহমেদ মো. সালেহের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার স্ত্রী, তিন কন্যা ও ভাই-বোনরা সবাই কান্নাকাটি করছেন। তাদের কান্নায় চারপাশ ভারী হয়ে উঠছে।

আহমেদ মো. সালেহের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, আমার স্বামীসহ সবার মোবাইল ফোন জলদস্যুরা নিয়ে গেছে। তারা সেহেরি খেতে দিয়েছে। আমার স্বামী আমাকে অডিও বার্তা পাঠাইসে। সেখানে বলেছে, একটু আগে সেহেরি খেয়েছি। এখনো অক্ষত আছি, বেঁচে ফিরলে দেখা হবে। আর যোগাযোগ করতে পারব কিনা জানি না। আমার মেয়েদের দিকে নজর রাখিও। আমার জন্য দোয়া কইরো।

Manual3 Ad Code

আহমেদ মো. সালেহের মেয়ে তাসফি (১৪) বলেন, আমার বাবা আমাকে কল দেয় না। আমাদের সঙ্গে কথা কয় না। কই পামু তারে। কবে আসবে বাবা? আমার বাবারে আইনা দেন।

আহমেদ মো. সালেহের ভাই তানজিমুল হাসান ফাহিম বলেন, আমাদের বাবা-মা নেই। আমরা চার ভাই এক বোন। আমার ভাই অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি কারো সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কথা পর্যন্ত বলতেন না। তিনি আমাদেরকে বড় করেছেন। তার অপহরণের খবর পেয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। উনার মতো মানুষ হয় না। যত দ্রুত সম্ভব সরকার সবাইকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক। এটাই আমাদের চাওয়া।

সালেহের একমাত্র বোন জান্নাতুল ফেরদাউস রানী বলেন, আমার ভাইয়ের তিনটা মেয়ে ও স্ত্রী আছে। তার মেয়ে খালি কান্না করতেছে। আর বাবার খবর জিজ্ঞেস করছে। আমার ভাবি বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। আমার ভাই অত্যন্ত ভালো মানুষ। তার মতো ভালো মানুষ আমি আর দেখি নাই। সব সময় তিনি হাসিমুখে কথা বলতেন।

আহমেদ মো. সালেহের চাচাতো ভাই মনির হোসেন সোহেল বলেন, সালেহ নামাজি মানুষ। সে প্রচুর দান করতো। এলাকার মসজিদ-মাদরাসায় সে প্রতিনিয়ত দান করতো। তার অপহরণের খবর শুনে এলাকার সবাই কান্নাকাটি করতেসে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই তাদের যেন সুস্থভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ২৩ জন জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি নাবিকের মধ্যে দুইজনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। অ্যাবল সিম্যান (নাবিক) হিসেবে মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক রাজুর (২৯) বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ ও ফাইটার আহমেদ মো. সালেহের বাড়ি চাটখিলে। তাদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের কাছে বিস্তারিত জানিয়েছি।

Manual1 Ad Code

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে জিম্মি হন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, অপহৃত জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। যার নাম এমভি আবদুল্লাহ। পণ্যবাহী জাহাজটি কয়লা নিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। গন্তব্য ছিল দুবাই। বুধবার (১৩ মার্চ) মালিকপক্ষ জিম্মি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

এদিকে বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশি জাহাজটি এখন উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে। সোমালিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

Manual5 Ad Code

এমভি আব্দুল্লাহ দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএম’র মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।

Manual6 Ad Code

বৈশ্বিক জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী সাইট মেরিন ট্রাফিক জানিয়েছে, জাহাজটি ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই এর দখল নেয় জলদস্যুরা।

জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরকলে, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলার মধুখালি থানার বাসিন্দা, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন টাঙ্গাইল জেলার নাগপুর থানার বাসিন্দা, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ ও ইলেকট্রিসিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ ফেনী জেলার বাসিন্দা, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানায়।

এছাড়া ক্রুদের মধ্যে রয়েছেন- শরিফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায়, আসিফুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, মোশাররফ হোসেন শাকিল ও আইনুল হকের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়। সাজ্জাদ হোসেন, নুর উদ্দিন ও মোহাম্মদ সামসুদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলি উপজেলায়। আনোয়ারুল হকের বাড়ি নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জ, আহমেদ মো. সালেহের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল, জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া, মো. নাজমুল হকের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারাখন্দ ও মো. আলী হোসেনের বাড়ি বরিশালে বানাড়িপাড়া গ্রামে।

শেয়ার করুন