অর্থ পাচারের বিকল্প গন্তব্য, ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে জোরালো পদক্ষেপ নিন
২৩ জুন ২০২৪, ১২:০২ অপরাহ্ণ
উপ-সম্পাদকীয়:
দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এদিকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানত কমলেও সম্প্রতি অন্য কয়েকটি দেশে অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েছে।
অর্থ পাচারকারীদের কাছে সুইস ব্যাংকের আকর্ষণ কমে যাওয়ার কারণ হলো, এখন অনেক দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা যায় এবং অর্থ পাচার আগের তুলনায় সহজ হয়েছে। জানা যায়, সুইস ব্যাংক আগের নিয়মে চলছে না। তারা এখন বিভিন্ন দেশকে তথ্য দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে যারা একসময় পাচারকৃত অর্থ গোপনে রাখার জন্য সুইস ব্যাংককে নিরাপদ মনে করত, তারা এখন সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশকিছু দেশ প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ওইসব দেশের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে আমাদের দেশের অর্থ পাচারকারীরা। অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থের কর দিতে হয় না। আবার এমন কিছু দেশ আছে, যেখানে অর্থ ব্যয় করলে সহজেই পাসপোর্ট মেলে এবং সম্পদেরও মালিক হওয়া যায়।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি কাঠামো আগের তুলনায় অনেক সক্রিয় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্তৃপক্ষের জোরালো তৎপরতা থাকলে পাচারকৃত অর্থ শনাক্ত, ফেরত আনা এবং পাচারের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা অবশ্যই সম্ভব। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের সন্দেহে প্রায় সাড়ে ৫০০ ব্যাংক-হিসাব শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনার জন্য যৌথভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে বিনিময় করা হয়। জানা যায়, আরও প্রায় ১১ হাজার লেনদেনকে সন্দেহজনক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে ব্যক্তিগত ২৭ হাজারের বেশি মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) স্থগিত এবং ৫ হাজার ২৯টি এমএফএস এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে। জানা যায়, পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন দেশে ৬৫টি চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ।
অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ দুর্নীতি। দুর্নীতি রোধ করা গেলে অর্থ পাচারের প্রবণতা কমবে। দেশে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে অর্থ পাচার কমবে। অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা জরুরি। বস্তুত যেসব উপায়ে অর্থ পাচার হয়, তা বহুল আলোচিত। কাজেই পাচার রোধে কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে। অর্থ পাচার রোধে ইতঃপূর্বে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কেন দেশ থেকে অর্থ পাচার কমছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। অর্থ পাচার রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। একইসঙ্গে অর্থ পাচারের ছিদ্রগুলো শনাক্ত করতে হবে। কীভাবে, কোন কোন চ্যানেলে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেই ফাঁকগুলো বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থ পাচার রোধে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।