Beanibazarer Alo

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘অসহযোগ’ কর্মসূচির ভাবনা বিএনপির

admin

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ | ০১:২৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ | ০১:২৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
‘অসহযোগ’ কর্মসূচির ভাবনা বিএনপির

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
নির্বাচন কমিশনের তফশিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। তবে তফশিল হলেও সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে আন্দোলন থেকে পিছু হটছে না বিএনপি। আপাতত চলমান আন্দোলনকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত টেনে নিতে চায় দলটি।

তাই সামনের দিনগুলোতে প্রতি সপ্তাহে দু-এক দিন বিরতি দিয়ে আরও কয়েক দফা হরতাল কিংবা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে যে কোনো সময় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন নেতারা।

তখন তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতির আলোকে ‘অসহযোগ’ নাম দিয়ে হরতাল ও অবরোধ একই সঙ্গে পালনেরও প্রস্তাব আছে। এজন্য বিদেশিদের তৎপরতার দিকেও নজর রাখছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি চলমান কর্মসূচিসহ আগামী দিনের আন্দোলনে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। তারা আরও জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। তারা এ সময় পর্যন্ত চলমান আন্দোলনকে টেনে নিতে চান। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর মনোভাবও বোঝার চেষ্টা করবেন। নির্বাচনের পথে কারা হাঁটলেন তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে এই সময়ে। তারপর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চান। তবে তফশিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ের আলোচনা ছিল। এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের পর ‘অসহযোগ’ কর্মসূচির মধ্যেই কমিশন ঘেরাওয়ের কথা আলোচনায় রয়েছে।

Manual7 Ad Code

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু তারা ভাবছেন না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। চলমান আন্দোলন সফল হবেই।

Manual4 Ad Code

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চলমান আন্দোলন সামনে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে জনগণ প্রাণ হাতে নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। জনগণের ক্ষমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন সব স্বৈরাচারীর জন্য হবে সতর্কবার্তা। দেড় দশকের রাজনৈতিক সংকট এখন এক চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণই বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা। সরকারের পতন না ঘটিয়ে এবার তারা ঘরে ফিরবে না।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক গণতন্ত্রের যুগে এ লড়াই শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, এ লড়াই পৃথিবীর গণতন্ত্রকামী সব মানুষের। এ লড়াই বাংলাদেশের মানুষের হারিয়ে যাওয়া, অজস্র মৃত্যু, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া জনগণের ভোটাধিকার অর্জনের লড়াই। বিশ্ব বিবেক আজ জাগ্রত। বাংলাদেশের মানুষকে নিষ্ঠুর সরকারের শোষণ-অত্যাচারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামকে সমর্থন দিচ্ছে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষও।

এদিকে বিএনপি ও তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো এখনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে আছে। পাশাপাশি তারা সরকারের বিরুদ্ধে থাকা অন্য দলগুলোকে নিজেদের পক্ষে রাখতে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ঘনিয়ে এলে কোনো দল মত বদলায় কিনা-তা নিয়েও শঙ্কা আছে বিএনপির মধ্যে।

Manual6 Ad Code

বিএনপি নেতারা মনে করেন, আন্দোলন থেকে হঠাৎ সরে আসতে হলে সংলাপে বসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রও শর্তহীন সংলাপের তাগাদা দিয়ে তিনটি দলকে চিঠি লিখেছে। বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ওই চিঠির জবাব দিয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে হলে সংলাপ একমাত্র পথ। এজন্য নির্বাচনের তফশিল পিছিয়ে নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে পরিবেশ তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। তবে এ বিষয়ে সরকার বা অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

Manual8 Ad Code

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তফশিল ঘোষণা হওয়ার পর এখন সরকার ছোট দলগুলোকে ভোটে টানতে চাইবে। এজন্য নানা ধরনের ‘প্রলোভন’ ও চাপে থাকবে দলগুলো। তারপরও সরকারবিরোধী দলগুলোর বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে তার বিশ্বাস।

অবশ্য সমমনা রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কয়েকজনের বিষয়ে কিছুটা সন্দেহও আছে বিএনপির। বিষয়টি এখনই প্রকাশ্যে আনতে চায় না তারা। যে দল যে মনোভাবই দেখাক, সবাই যাতে সরকারবিরোধী মনোভাব ধরে রাখে, সেজন্য দলের নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, গত এক সপ্তাহে স্থায়ী কামিটি, কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, আন্দোলনের সফলতা নিয়ে হাইকমান্ড খুব আত্মবিশ্বাসী। খুব শিগগিরই বিদেশি প্রভাবশালী একটি দেশের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ আসতে পারে বলেও তাদের ধারণা দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলন প্রসঙ্গে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, সাবেক সংসদ-সদস্য, সম্ভাব্য প্রার্থী ও পদে থাকা নেতারাসহ সব স্তরের নেতাকর্মীদের মাঠে থেকে কর্মসূচি সফলের। এই আন্দোলন বিএনপির জন্য বাঁচা-মরার উল্লেখ করে আরও বলা হয়েছে, যারা পদ-পদবি পাননি, দলের সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো তা করতে হয়েছে। কিন্তু সবার এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে মাঠে থাকতে হবে। আন্দোলন সফল হলে আগামী দিনের মাঠে থাকা পদবিহীন নেতাদেরও যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।

তৃণমূল নেতারা জানান, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে দেশব্যাপী গ্রেফতার অভিযান চলছে। যে কারণে বেশিরভাগ নেতাকর্মী ঘরে কিংবা আত্মীয়ের বাসায়ও থাকতে পারছেন না। ইউনিয়ন থেকে মহানগর পর্যায়েও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েও গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও প্রতিটি নেতাকর্মী মাঠে থাকার বিষয়ে অনড়। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তারা যে কোনো মূল্যে আন্দোলনের সফলতা চান।

একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে তার একটি খসড়াও হাইকমান্ডের কাছে দেওয়া হয়েছে। যতই তফশিল ঘোষণা করা হোক না কেন, নির্বাচন প্রতিহতের জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। আগামী দিনে ঢাকা মহানগরেও কর্মসূচি জোরদারভাবে পালনের নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ীই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করছেন।

২৯ অক্টোবর থেকে ১ দিনের হরতালসহ ইতোমধ্যে পাঁচ দফা দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। রোববার ভোর ৬টা থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি শুরু হবে। একই কর্মসূচি পালন করছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, এলডিপিসহ অন্তত ৩৯টি রাজনৈতিক দলও। যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও পৃথকভাবে একই কর্মসূচি পালন করছে জামায়াতে ইসলামীও।

শেয়ার করুন