Beanibazarer Alo

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউএনও’র বাসভবনে বান্ডিল বান্ডিল পোড়া টাকার ভিডিও ভাইরাল

admin

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪ | ১২:৩৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪ | ১২:৩৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ইউএনও’র বাসভবনে বান্ডিল বান্ডিল পোড়া টাকার ভিডিও ভাইরাল

Manual7 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবন থেকে বান্ডিল বান্ডিল পোড়া টাকার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এতে ধামরাইয়ের নাগরিক সমাজের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

ভিডিওটির কমেন্টে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন একজন সরকারি কর্মকর্তার বাসভবনে এত টাকা এলো কীভাবে? নিশ্চয়ই ঘুষ নেওয়ার টাকা, কেউ লিখেছেন অবৈধ ইটভাটা থেকে নেওয়া টাকা এগুলো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান ৫ আগস্ট। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার আগেই সেদিন ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও’র বাসভবন ও তার গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সে সময়ের ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তার বাসভবন থেকে পালিয়ে যান। জীবন বাঁচাতে বাসভবন থেকে দ্রুত পালাতে গিয়ে প্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্রই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। এমনকি নিজের অসুস্থ বাবা ও বৃদ্ধ মাকে রেখেই পালিয়ে যান তিনি।

পরে সাধারণ জনগণ বাসভবনে প্রবেশ করে তার বৃদ্ধ বাবাকে কোলে করে নিরাপদ স্থানে নেন এবং সেখান থেকে বের করেন বান্ডিল বান্ডিল পোড়া টাকা।

এ ছাড়াও ৫ আগস্টের পর ধামরাইয়ের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও’র) বাসভবন থেকে লোকজন হাঁস, মুরগি, জুতা, টিসুসহ যে যা পারছে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন আবার পোড়া টাকার বান্ডিল নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছেন এবং বলতে শোনা যাচ্ছে ভেতরে সিন্দুক ভরা টাকা। পোড়া টাকার বান্ডিলে ছিল ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট। তবে যিনি এই ভিডিওটি করেছেন তিনি ভেতরে গিয়ে কোনো সিন্দুক বা টাকা দেখতে পাননি। তিনি পৌঁছানোর পূর্বেই সিন্দুকসহ সব পোড়া টাকা লোকজন নিয়ে যায়। তবে সেই সিন্দুকে মোট কত টাকা ছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Manual1 Ad Code

গত ২৫ সেপ্টেম্বর নাজমুল হাসান নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এই ভিডিওটি প্রথম প্রকাশ করা হয়। পরে ভিডিওটি ছড়িয়ে যায় এবং বিভিন্ন নামের আইডিতে এই ভিডিও দেখা যায়। তবে এই ভিডিওটি যিনি রেকর্ড করেছেন তার ফেসবুক আইডি থেকে এখনো পোস্ট করা হয়নি।

ভিডিওটি ধারণ করা ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার খবর ছড়িয়ে পরার পূর্বেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয় শুনেছি। পরে হাসিনার পদত্যাগের খবর পেয়ে আমি প্রথমেই উপজেলায় আসি দেখতে। এসে দেখি ইউএনও’র বাসভবনে আগুনের ধোঁয়া উড়ছে এবং ভেতরে দুজন যুবক কী যেন খোঁজা খুঁজি করছে। তারা ভেতরে কাউকে প্রবেশও করতে দিচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর একজন লোক ওই দুই যুবককে ধমক দিয়ে বলল ওই তোরা কারারে ভেতরে ঢুকতে দেছ না। পরে ওই দুই যুবক বাসভবন থেকে বের হয়ে চলে যায়।

এর পরই সাধারণ জনগণ বাসভবনে ঢোকে দেখার জন্য। হঠাৎ করে একজন খাঁচা থেকে মুরগি ও হাঁস বের করে চিৎকার দেয়। এর পরই শুরু হয় লুটপাট। যে যা পারে সব নিয়ে যায়। আমি এসব কিছুই ভিডিও করছিলাম। তখন অনেক লোকজন দেখি ইউএনও’র বাসভবনের ভেতর থেকে পোড়া টাকার বান্ডিল নিয়ে বের হচ্ছে। একজন বলতেছিল ভেতরে সিন্দুক ভরা পোড়া টাকা রয়েছে। কিন্তু আমি সেখানে যেতে যেতে সিন্দুক, টাকা কিছুই পাইনি। লোকজন সব নিয়ে গেছে আগেই। পরে আমার কাছে অনেকে ভিডিও চাইলে ভিডিওটি আমি কেটে ছোট করে শুধু টাকার অংশটুকুই দিয়েছি। তারাই সেই ছোট ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করেছে।

Manual6 Ad Code

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট সকালের দিকে সেসময়কার ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম শেখ এর নেতৃত্বে ধামরাই থানার এক দল পুলিশ ৫টি গাড়িতে ধামরাইয়ের কালামপুর, জয়পুরা, ঢুলিভিটা শরিফভাগসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এসময় শরিফভাগ এলাকায় কয়েকজন সাধারণ লোক গুলিবিদ্ধ হন। এর প্রতিবাদে ওই এলাকার সর্বস্তরের জনগণ ও ছাত্র-জনতা মিলে মিছিল বের করে ধামরাই থানার উদ্দেশে রওনা দেয়। পরে মিছিলটি উপজেলার সামনে এলে ইউএনও’র বাসভবনের নিরাপত্তায় থাকা আনসাররা বাধা দেয় এবং একপর্যায়ে জনগণের দিকে গুলি ছুড়ে।

পরে মিছিলে অংশ নেওয়া সাধারণ জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলার গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে এবং ইউএনও’র বাসভবনে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগেই সেসময়ের ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তার বৃদ্ধ বাবা মা এবং সিন্ধুক ভরা টাকা রেখেই বাসভবন থেকে পালিয়ে যায়। পরে কয়েকজন সাধারণ জনগণ তার বাবাকে কোলে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। এর প্রায় এক ঘণ্টা পরে ইউএনও’র বাসভবন থেকে বান্ডিল বান্ডিল পুড়ে যাওয়া টাকা বের করে সাধারণ জনগণ।

ধামরাইয়ের সচেতন নাগরিকরা বলছেন, একজন ইউএনও’র বাসায় সিন্দুক ভরা টাকা থাকবে কেন? তিনি কত টাকা বেতন পান- তার সিন্দুক ভরা টাকা থাকবে। তিনি নিশ্চয়ই এসব টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছিলেন। যা জনতার আগুনে পুড়ে গেছে।

Manual1 Ad Code

ধামরাই পৌরসভার বাসিন্দা ইসরাফিল বলেন, সেসময় ইউএনও’র বাসভবনে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ছিল। ৫ আগস্টে যারা বাসভবন ভাঙচুর করছে আগুন দিছে তারাই না কি এ টাকা লুট করছে আর কিছু টাকা আগুনে পুড়ে গেছে।

৫ আগস্টের ঘটনার পর বেশ কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকেন খান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। পরে দেশ স্বাভাবিক হলে কর্মস্থলে যোগদান করেন তিনি। এর কিছুদিন পর ইউএনওকে ধামরাই থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন বদলি করা হয়।

এ বিষয়ে খান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

Manual3 Ad Code

এই বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. তানভীর আহমেদ বলেন, উপজেলা পরিষদে ইউএনও’র বাসভবন থেকে পুড়ে যাওয়া টাকার বিষয়টি আমি জেনেছি। এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

শেয়ার করুন