Beanibazarer Alo

  সিলেট     বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চোরাচালানের নেপথ্যে কথিত ‘দরবেশ বাবা’

admin

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪ | ০২:১৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৭ মে ২০২৪ | ০২:১৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
চোরাচালানের নেপথ্যে কথিত ‘দরবেশ বাবা’

Manual3 Ad Code

আবুল খায়ের:
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন একজন সিবিএ নেতা, যিনি কথিত ‘দরবেশ বাবা’ হিসেবে পরিচিত। তার বাবা হলো স্বীকৃত রাজাকার। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকায় এই রাজাকারের পুত্র এলাকাবাসীর কাছে ‘দরবেশ বাবা’ হিসেবে পরিচিত। হত্যাকাণ্ডের শিকার আনোয়ারুল আজীম আনারের সঙ্গে সখ্য ছিল। একই সঙ্গে ঐ দরবেশ বাবা এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আকতারুজ্জামান শাহীনেরও বন্ধু।

চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটের অন্যতম শক্তিধর সদস্য হলেন আকতারুজ্জামান শাহীন। তিনি এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের একজন নেপথ্য কারিগর। কোর্ট চাঁদপুরে তার একটি রিসোর্ট রয়েছে। শাহীনের রিসোর্টে সুন্দরী নারী সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন ঐ কথিত দরবেশ বাবা। স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িতদের এবং তাদের সহযোগিতাকারী কাস্টমস কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনোরঞ্জনের কাজ করত। অপরাধের রাজার কারণে দরবেশ বাবা হিসেবে পরিচিত সে।

Manual3 Ad Code

আনার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে প্রতিদিন কোনো না কোনো নতুন নতুন কাহিনী বের হয়ে আসছে। পেশাদার খুনি শিমুল ভূঁইয়া হলো আকতারুজ্জামান শাহীনের ফুপাতো ভাই। দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের মাঠ পর্যায় নিয়ন্ত্রণ করেন তারা। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলের কাজও করেন। তাদের বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া করে ভোটের সময় নেওয়া হয়। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক রাজনৈতিক নেতাও এই স্বর্ণ চোরাচালান ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

এদের নেপথ্যের গডফাদাররা রাজধানী ঢাকায় প্রায় এক ডজন শীর্ষ ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে স্বর্ণ বিমানবন্দরের মাধ্যমে ঢাকায় নিয়ে আসেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পার করার কাজটা করেন শাহীন, আনার গ্রুপ। এই গ্রুপের হাতে কত মানুষ যে খুন ও নিখোঁজ হয়েছেন, তার হিসাব নেই-এলাকাবাসীর মুখে মুখে এই কথা। অনেকে নিখোঁজ হয়েছে, তাদের হদিস আদৌ মিলেনি। আনার এবং শাহীন গ্রুপের সঙ্গে সাবেক দুই এমপি ও বর্তমান একাধিক জনপ্রতিনিধি জড়িত রয়েছেন। গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

শাহীনের রিসোর্টে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করার বৈঠকে দরবেশ বাবাও ছিলেন, সেখানে আরো কয়েক জন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ছিলেন। কালীগঞ্জ অঞ্চলে ২০১৪ সাল থেকে ভাগাভাগি কোন্দলে দলীয় নেতাকর্মীও খুন হন। তাদের একটা সংগঠন ছিল বন্ধুমহল। এটা হলো যত খুনী আছে, তাদের একসঙ্গে করা। বন্ধুমহল হলো স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কামেয় করা। শাহীন, দরবেশ বাবা ও আনাররা পরিচালনা করত বন্ধুমহল।

Manual5 Ad Code

শাহীনের রিসোর্টে ঢাকা থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ যেত। অনেকের আমেরিকা যাওয়ার ব্যবস্থাও করত শাহীন। এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের পুরো বিষয় শিমুল ভূঁইয়া জানতো। শিমুল যখন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিল, তার দলের অস্ত্র সাপ্লাই দিত এরা। কতগুলো খুন ও নিখোঁজ হয়েছে, সেগুলো তার জানা আছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আন্ডারওয়ার্ডে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন চলে আসছে। এই অঞ্চলে আরো দুই জন সাবেক এমপি স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। বন্ধুমহল তারাও নিয়ন্ত্রণ করত। ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়, একক আধিপত্য বিস্তার দিয়েও দ্বন্দ্ব ছিল। এই স্বর্ণ চোরাচালানিদের দুবাই, মালয়েশিয়া ও আমেরিকায় তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তাদের কেউ বিরোধিতা করলে খুন করা হয়। নিয়মের বাইরে গেলে বা কোনো তথ্য পাচার করলে হত্যা অবধারিত।

এলাকাবাসীর দাবি, শাহীনকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যেসব মাফিয়া জড়িত, তাদেরকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। তাহলে এই অঞ্চলে অপরাধমুক্ত হবে বলে তাদের দাবি। এদিকে এই খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে নেপথ্যে মাফিয়া চক্র। এর আগেও অনেক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কারিগররা নিখোঁজ ও হত্যার ঘটনাও একই কায়দায় ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। এমপি আনারকে এমনভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

Manual4 Ad Code

অথচ হত্যাকারী নিজেই স্বীকার করেছে যে, এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে টুকরা টুকরা করে বেশ কিছু সংখ্যক ব্যাগে ভরে খালে ফেলে দেওয়ার বিস্তারিত তথ্য তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে শিমুল নিজেই জানান। তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, লাশ পাওয়া না গেলে এটা হত্যা মামলা হবে না। এতে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অথচ যারা ঘরে প্রবেশ করেছেন, তাদের মধ্যে কত জন বের হয়েছেন, আর এমপি আনার প্রবেশ করেছেন কিন্তু বের হননি। সিসি ক্যামেরায় সব প্রমাণ রয়েছে।

Manual4 Ad Code

শেয়ার করুন