Beanibazarer Alo

  সিলেট     বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব হারাচ্ছে সিলেট

admin

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৩ | ০২:০৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০২ মে ২০২৩ | ০২:০৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব হারাচ্ছে সিলেট

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
দেশের জাতীয় রাজনীতিতে একসময় দাপুটে অবস্থান ছিল সিলেটের রাজনীতিকদের। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বে ছিল তাঁদের অবস্থান। দলগুলোর নীতিনির্ধারণী ফোরামে প্রভাব ছিল বৃহত্তর সিলেটের প্রভাবশালী এসব রাজনীতিকের। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে সিলেটের রাজনীতিকদের সেই দাপুটে অবস্থান এখন আর নেই। প্রবীণ নেতাদের মৃত্যুতে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। নতুন যাঁরা জাতীয় রাজনীতির সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরাও পূরণ করতে পারছেন না অগ্রজদের সেই স্থান।

জাতীয় রাজনীতিতে সিলেটের যে রাজনীতিকরা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তাঁদের তালিকা ছোট নয়। এ তালিকায় থাকা আবদুস সামাদ আজাদ ছিলেন আওয়ামী লীগের দাপুটে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিএনপির এম সাইফুর রহমান জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেছেন সবচেয়ে বেশিবার। এ ক্ষেত্রে তাঁর স্থান প্রথম। বাজেট পেশে সাইফুরকে টপকে যাওয়া অর্থমন্ত্রীও ছিলেন সিলেটের আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, সাবেক মন্ত্রী ফরিদ গাজী, এরশাদ আমলের রিয়ার অ্যাডমিরাল এম এ খান- প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় এই রাজনীতিকরা সবাই ছিলেন সিলেটের কৃতী সন্তান। এসব রাজনীতিক উদ্ভাসিত ছিলেন নেতৃত্বগুণে। নিজ দলের নীতিনির্ধারণে তাঁরা রাখতেন অগ্রণী ভূমিকা। তাঁদের হাত ধরেই সমৃদ্ধির পথে এগিয়েছিল বৃহত্তর সিলেট। এ তালিকার সবাই এখন না-ফেরার দেশে। তাঁদের মৃত্যুতেই মূলত জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বশূন্যতায় পড়ে যায় সিলেট।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এসব প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের পর আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। আর বিএনপিতে আলো ছড়িয়েছিলেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী। কিন্তু রাজনৈতিক ঝড়ে ঝরে পড়েছেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। পদপদবিহীনভাবে বঙ্গবন্ধুর জয়গান গেয়ে যাচ্ছেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতান।

তবে সিলেটের নেতারা এখনো মনে করেন সুলতানের আলো নিভে যায়নি। সুযোগ পেলে তিনি আবারও উজ্জ্বল হয়ে উঠবেন। আর পদহারা মিসবাহর ঠাঁই হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে।

বিএনপির ইলিয়াস উধাও রহস্য এখনো উন্মোচনহীন। সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর জাতীয় রাজনীতিতে সিলেটের বিএনপি নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশা জাগিয়েছিলেন ইলিয়াস আলী। তার নেতৃত্বে একদিকে যেমন সিলেটে দলীয় অবস্থান শক্তিশালী হয়েছিল, তেমনি জাতীয় রাজনীতিতেও তিনি নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

Manual3 Ad Code

বাম রাজনীতিতেও সিলেটের নেতাদের একসময় ছিল শক্ত অবস্থান। কমরেড বরুণ রায়, পীর হবিবর রহমান প্রমুখ দেশপ্রেমিক নেতা দেশের বামধারার রাজনীতিতে এখনো পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁদের কাতারে যেতে পারেননি সিলেটের অন্য কেউ।

Manual7 Ad Code

বিশ্লেষকদের মতে, সিলেট থেকে জাতীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক দেখা না যাওয়ার শূন্যতা নিকট-ভবিষ্যতে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে যেসব নেতা রয়েছেন তাঁরাও মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। জাতীয় রাজনীতিতে পোক্ত করতে পারেননি নিজেদের অবস্থান।

Manual6 Ad Code

এদিকে বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। আর মধ্যখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ প্রভাবের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন শমসের মবিন চৌধুরী। শমসের মবিন চৌধুরী ইতোমধ্যে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। আর নাহিদ ও জেবুন্নেছা দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও প্রভাবশালী রাজনীতিক হয়ে উঠতে পারেননি।

Manual4 Ad Code

এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আবদুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, দেওয়ান ফরিদ গাজী ও হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মতো নেতা আর তৈরি হবে কি না সন্দেহ। তাঁদের তুলনা তাঁরাই। তাঁদের মৃত্যুতে শুধু সিলেটের নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। নতুন যাঁরা জাতীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তাঁদের পক্ষে সেই শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব নয়।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলীর মতো নেতা জাতীয় পর্যায়ে দেশ ও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তাঁরা থাকলে হয়তো তাঁদের হাত ধরে সিলেট থেকে আরও ভালো নেতৃত্ব তৈরি হতো। নেতৃত্বের যোগ্যতা ও গুণাবলীর কারণে সিলেটের মানুষ এখনো তাঁদের স্মরণ করে। তাঁদের শূন্যতা অনুভব করে।’

 

শেয়ার করুন