Beanibazarer Alo

  সিলেট     সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তরুণীদের আপত্তিকর ভিডিও দেশ-বিদেশে বিক্রি, গ্রেপ্তার চক্র !

admin

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৩ | ০৫:০৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২২ মে ২০২৩ | ০৫:০৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
তরুণীদের আপত্তিকর ভিডিও দেশ-বিদেশে বিক্রি, গ্রেপ্তার চক্র !

Manual7 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
টেলিগ্রাম গ্রুপ থেকে উঠতি বয়সের তরুণীদের আপত্তিকর ভিডিও বেচা-কেনা করা চক্রের নয়জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

Manual4 Ad Code

সোমবার (২২ মে) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এ তথ্য জানান।

 

গ্রেপ্তাররা হলেন, হোতা মার্ক-সাকারবার্গ ওরফে আবু সায়েম, শাহরিয়ার আফসান অভ্র, বোগদাদী শাকিল, ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান, মো. জসীম, ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তুর্য ওরফে মারুফ ও মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট।

সিআইডি জানায়, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছে। একইসঙ্গে অভিভাবকদেরও দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে তারা। চক্রটি তরুণীদের ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম আইডি হ্যাক করে ‘পমপম’ নামের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে গোপন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখাত। পরে তারা ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ দাবি করত। অর্থ দিতে না পারলে সেসব তরুণীদের ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করা হতো। আর কোনো প্রস্তাবেই সাড়া না দিলে ভিকটিমদের নাম-পরিচয় আর ব্যক্তিগত তথ্যসহ সেসব গোপন ছবি ও ভিডিও লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবারের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে দিত।

সিআইডি প্রধান বলেন, চক্রটি আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে যে কেবল টাকা নিত তা নয়, তারা সেসব ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও কোটি টাকা আয় করত। মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছে। এসব দেশের নাগরিকরা উঠতি বয়সের মেয়েদের (১২-১৮ বছর) আপত্তিকর কন্টেন্ট কিনে সংরক্ষণ করে।

চক্রটির নেতৃত্ব দেয় মার্ক-সাকারবার্গ নামের এক ব্যক্তি। শুরুতে খুবই চতুর এই মার্ককে চিহ্নিত করা সহজ ছিল না। মার্কের আসল নাম আবু সায়েম। বেকার সায়েম থাকে চট্টগ্রামে। এনআইডি অনুযায়ী তার বয়স ২০ বছর। সে চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেছে। তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এরইমধ্যে এক ভুক্তভোগী ও তার প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পমপম গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মার্ক-সাকারবার্গ ও তার দলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগীরা।

তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মার্ক ওরফে সায়েমকে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শাহরিয়ার আফসান অভ্রকে চট্টগ্রামের হাউজিং এলাকা থেকে এবং বোগদাদী শাকিলকে উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্ক ওরফে সায়েমের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গ আইডিটি লগইন করা অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আবু সায়েমই মার্ক-সাকারবার্গ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পমপম গ্রুপের যতগুলো চ্যানেল ও গ্রুপ আছে তার অ্যাডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। অ্যাডমিনদের কাজ ছিল মার্কের হয়ে নতুন নতুন কন্টেন্ট জোগাড় করা। নতুন কন্টেন্ট পেতে তারা ফেইক এনআইডি বানিয়ে টার্গেটের ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম আইডি হ্যাক করত।

মূলত ভুক্তভোগী তরুণীদের সাবেক প্রেমিকরাই এই চক্রটিকে নতুন নতুন কন্টেন্ট দিত। অর্থাৎ সুসময়ে প্রেমিকার যেসব অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তারা ক্যামেরাবন্দি করেছে, সেগুলোই প্রতিশোধের মার্ক-সাকারবার্গদের গ্রুপে নেশায় তুলে দিত। মার্ক তার অ্যাডমিনদের ফেসবুক থেকে ছবি নিয়ে ও মিউজিক বসিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ডের ভিডিও বানিয়ে গ্রুপগুলোতে আপলোড করত। এ প্রমো দেখে যারা ফুল ভার্সন দেখতে চায়, তাদের এক থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করতে হয়।

মার্ক ওরফে সায়েম, অভ্র এবং শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের ডিভাইস তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গের বিভিন্ন পেজের অ্যাডমিনদের আসল পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে। দেখা যায়, তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান। মশিউরের দায়িত্ব ছিল গ্রুপ থেকে কৌশলে কন্টেন্ট সেভ করে রাখা ও নানা প্রলোভনে তরুণীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও হাতিয়ে নেওয়া। মশিউর চট্টগ্রামের একটি ফিশিং কোম্পানিতে চাকরি করে। অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে কর্ণফুলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী জসীমকেও।

সিআইডি প্রধান বলেন, সায়েম ও মশিউরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়- এই অ্যাডাল্ট গ্রুপগুলোর অ্যাডমিনদের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছে। ফলে তাদেরকে গ্রেপ্তারে বেইলি রোড এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে গেট টুগেদারের ফাঁদ পাতা হয়। ফাঁদে পা দিয়ে একে একে গ্রেপ্তার হয় গুরুত্বপূর্ণ অ্যাডমিন ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তুর্য ওরফে মারুফ ও মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

Manual3 Ad Code

মার্ক-সাকারবার্গ এবং তার সহযোগীদের গ্রুপ ও চ্যানেলগুলোয় সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ। আর সেগুলোতে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও ও প্রায় ৩০ হাজার কন্টেন্ট রয়েছে। অন্যদিকে মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা ফি দিয়ে তাদের প্রিমিয়াম গ্রুপের সদস্য হয়েছেন দেশ-বিদেশের প্রায় সাড়ে সাতশ মানুষ। আমরা তাদের বিস্তারিত পরিচয় পেয়েছি। তাদের নিয়েও কাজ করছি। তরুণীদের অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এ ঘটনায় মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়ে তদন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সিআইডি প্রধান। এতে করে টেলিগ্রাম চক্রের হোতাদের পাশাপাশি তাদের দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সহযোগীদেরও আইনের আওতায় আনা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সবাইকে সচেতন করে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, একান্ত মূহূর্তের ভিডিও আদান-প্রদান করে তারা ভুল করেছে। পরে বিপদে পড়লে নির্ভরযোগ্য কাউকেই তারা পাশে পায়নি। এছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তারা কোনো আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি।

Manual6 Ad Code

 

Manual1 Ad Code

শেয়ার করুন