Beanibazarer Alo

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তুমুল আলোচনায় সিলেটের চাঁদাবাজি, মাঠে নেমেছে পুলিশ-র‍্যাব

admin

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৭:০৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৭:০৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
তুমুল আলোচনায় সিলেটের চাঁদাবাজি, মাঠে নেমেছে পুলিশ-র‍্যাব

Manual1 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ চাঁদাবাজির আলোচনা চলছে স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত। বিষয়টি তুমুল আলোচনায় আসার পর এবার সিলেটের চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোরভাবে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

Manual6 Ad Code

গত কয়েক মাস ধরে কতিপয় অসাধু পুলিশের মদদে সিলেটজুড়ে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি- এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন- সিলেট মহনগরের কালিঘাটে বেপরোয়া চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে অহরহ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে চাঁদাবাজির ঘটনা নিত্য-নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সশস্ত্র চাঁদাবাজদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পান না। প্রায় প্রতিদিনই কালিঘাটে এমন ঘটনা ঘটছে। কেবল কালিঘাটেই নয়; এমন চাঁদাবাজি হচ্ছে সিলেটের অন্যান্য পাইকারি হাটে- এমনকি সড়কেও।

ব্যবসায়ীরা জানান, কালিঘাটে পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। জৈন্তাপুর থেকে সবজি ভর্তি ট্রাকটি সিলেট মহানগরে প্রবেশের পর সেটি লুট করে নেওয়া হয়। সুবহানিঘাট সবজির পাইকারি আড়তে আসা সবজি ভর্তি ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। চাহিদা মাফিক চাঁদা দেওয়া না হলে সবজি লুট করে নেওয়া হয়। কখনো ট্রাক নিয়ে যায়; আবার কখনো নিয়ে যায় টাটকা সবজি। সিলেটের পাইকারি আড়তে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে সবজি নিয়ে আসা হয়। জৈন্তাপুর থেকে সবজি নিয়ে আসার পথে বটেশ্বর পার হওয়ার পরে, এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে কিংবা টুকেরবাজার থেকে সবজি নিয়ে আসার পথে গাড়িকে ফলো করা হয়। তাদের সুবিধামতো জায়গায় এসে গাড়ি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। অনেক সময় পুরো গাড়ি নিয়ে নেয়; আবার কখনো টাকা নেয় ছিনতাইকারী চক্র। মাসের পর মাস ধরে এভাবে চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এই সুযোগে চাঁদাবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এসব চাঁদাবাজি দ্রুত বন্ধ করে এর সাথে সম্পৃক্ত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে সিলেটের ব্যবসায়ীরা গত ১ ফেব্রুয়ারি সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও সিলেটের পুলিশ সুপারের নিকট পৃথক স্মারকলিপি দিয়েছেন। পরে স্বারকলিপি দেওয়া হয় বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে। এতে তারা ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, এই সময়ের মধ্যে চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে সিলেটের ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামবেন।

Manual1 Ad Code

এরপরই নড়ে-চড়ে বসে প্রশাসন। সিলেটে চাঁদাবাজি বন্ধে এবার কঠোরভাবে মাঠে নেমেছে পুলিশ। চাঁদাবাজদের পাকড়াও করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুরুতেই গত রবিবার রাতে সোবাহানীঘাট থেকে শান্ত নামের এক চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান জানিয়েছেন, চাঁদাবাজ যেই হোক তার ছাড় নেই। চাঁদাবাজদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে। ইতোমধ্যে এক চাঁদাবাজকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্য চাঁদাবাজদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। চাঁদাবাজির ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে। সিলেটে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোরভাবে পুলিশ মাঠে নেমেছে। যেকোনো মূল্যে চাঁদাবাজদের দমন করা হবে।

এদিকে, মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এসএমপি’র উদ্যোগে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ সভায় সভাপতির বক্তব্যে কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন- পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি এবং পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাই কাজে যেই জড়িত থাকবে- তাকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

অন্যদিকে, সিলেটে চাঁদাবাজি দমনে মাঠে নেমেছে র‍্যাব-৯-ও। শুরুতেই এ বাহিনী ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে মঙ্গলবার বিকালে গোলাপগঞ্জ থেকে ৪ জন এবং দক্ষিণ সুরমা থেকে ৩ জন আটক করে। তবে আটকের পর সিলেটজুড়ে সড়ক অবরোধ করেন জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। পরে র‍্যাবের সঙ্গে বৈঠক করে রাত পৌনে ১০টার দিকে তারা অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এর আগে মুচলেকা দিয়ে এ ৭ জনকে ছাড়িয়ে নেন নেতৃবৃন্দ।

র‍্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি মো. মশিউর রহমান সোহেল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ- চাঁদাবাজি জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসতে হবে। এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই সিলেটে এই অপরাধ দমনে মাঠে জোরালোভাবে কাজ শুরু করেছে র‍্যাব-৯।

Manual3 Ad Code

সিলেটের চাঁদাবাজির আলোচনা জাতীয় সংসদে:
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিলেটে কতিপয় সন্ত্রাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাক থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। তিনি এই চাঁদাবাজি বন্ধ এবং চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায় করা টাকা বাজেয়াপ্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে ‘জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ’ নোটিশের আলোচনায় এ কে আব্দুল মোমেন এই আহ্বান জানান।

সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ৭১ ধারায় আনা নোটিশের মধ্যে যেগুলো গ্রহণ করা সম্ভব হয় না, সেগুলো নিয়ে দুই মিনিট করে আলোচনার সুযোগ পান সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যরা।

আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী প্রতি রাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী যেমন শাকসবজি, চিনি ইত্যাদি পরিবহনে আসা ট্রাকগুলোর প্রতিটি থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা জোর করে নেয়। চাঁদা না দিলে ট্রাক ছিনতাই করে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর দুই–এক দিনের জন্য সন্ত্রাসী তৎপরতা কিছুটা কমেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা আবার শুরু হয়। এই চাঁদাবাজদের অত্যাচারে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট।

Manual2 Ad Code

স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে মোমেন এই চাঁদাবাজি বন্ধ এবং সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজির মাধ্যমে যে টাকা সংগ্রহ করেছে, তা বাজেয়াপ্ত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন