Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘নতুন পাওয়া বডিটাই আমার মাইয়া, ডিএনএ টেস্টে প্রমাণ বাইরোইবো’

admin

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | ০২:১৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | ০২:১৭ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
‘নতুন পাওয়া বডিটাই আমার মাইয়া, ডিএনএ টেস্টে প্রমাণ বাইরোইবো’

Manual5 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
নেত্রকোনার সবুজ মিয়া ও মোহাম্মদ সুলতান দুই ভাই। একই গর্ভে জন্ম, একসঙ্গে বেড়ে ওঠা—এই সম্পর্কের বন্ধন আরও মজবুত করতে তারা নিজেদের সন্তান জয় মিয়া ও মারজিয়া সুলতানার বিয়ে দেন পারিবারিক সম্মতিতে। বিয়ের পর কর্মসূত্রে ঢাকায় চলে আসেন নবদম্পতি। ৪ অক্টোবর মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন তারা। কিন্তু মাত্র ১০ দিন পরই, ১৪ অক্টোবর সেই কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে—যা তাদের নতুন জীবনের সব স্বপ্ন পুড়িয়ে দেয়।

Manual1 Ad Code

অগ্নিকাণ্ডের পর জয় মিয়ার মরদেহ উদ্ধার হলেও তার স্ত্রী মারজিয়া সুলতানা নিখোঁজ ছিলেন। পরিবারের দাবি, তিনিও আগুনে পুড়ে মারা গেছেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার লাশ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে।

Manual2 Ad Code

অবশেষে অগ্নিকাণ্ডের ১২ দিন পর, গত রোববার (২৬ অক্টোবর) মিরপুরের ঘটনাস্থল থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ‘মিরপুর থেকে উদ্ধার হওয়া একটি লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

উদ্ধার হওয়া লাশটি যে তার মেয়ের, সেই দাবি করেছেন মারজিয়ার বাবা মোহাম্মদ সুলতান। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা মেডিকেলের মর্গে বইসা ছিলাম। ১৬ জনের লাশ দিছে, কিন্তু আমরা দাবিদার ছিলাম ১৭ জনের। আমার মাইয়াটারে পাই নাই। নতুন পাওয়া বডিটাই আমার মাইয়া। ডিএনএ টেস্টে প্রমাণ বাইরোইবো।’

Manual4 Ad Code

অগ্নিকাণ্ডের ১২ দিন পর লাশ উদ্ধারের পেছনে ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের নেতারা। তাদের সহযোগিতায় পুলিশের উপস্থিতিতে কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। মারজিয়ার বাবা জানান, ‘শ্রমিক সংগঠনের নেতারা আমারারে নিয়া পুলিশের কাছে গেছে। পুলিশ আগেই কইছিল, কেমিক্যালের দুর্গন্ধ আছে, এখন গেলে দুর্ঘটনা হইতে পারে। আমরা বলছি, দায় আমরাই নিব। পরে সিগনেচার নিছে পুলিশ, যদি আমরা মারাও যাই, দায়ী আমরা। তারপর আমরা তল্লাশি চালাই।’

তল্লাশি অভিযানে ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, ‘মেয়ের পরিবার থানায় অভিযোগ করলেও কেউ শুনছিল না। পরে আমরা পরিবারসহ থানায় যাই। ওসি বললেন, কেউ ভেতরে গেলে দায় পুলিশ নিবে না। তখন আমরা বললাম, আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি। ১০ জনের একটা টিম নিয়ে ঢুকলাম। তিনতলায় যেতেই পচা গন্ধ পাই। দেখি, লোহার টেবিলের নিচে কাপড়ের সঙ্গে হাড় বের হয়ে আসছে। তখন বুঝি এখানেই লাশ।’

Manual2 Ad Code

তিনি বলেন, ‘তখন আর সানলাইট নাই, আলো নাই। মোবাইলের টর্চ দিয়ে আমরা বুঝলাম, লাশে পোকা ধরে গেছে। এইটা দেখার পরে আমরা বের হয়ে ফায়ার সার্ভিসকে কল দিয়ে বললাম, আমরা লাশ শনাক্ত করেছি। কিন্তু ততক্ষণে মাগরিবের আজান হয়ে গেছে। রাত হয়ে যাচ্ছে। তখন আমরা পুলিশকে বললাম, ফায়ার সার্ভিস যদি না আসে, আমরা কি করব? আমরা কি অপেক্ষা করব? পুলিশ বললো, আপনারা দায়িত্ব নেন, আমরা ব্যাগ নিয়ে আসছি, আপনারা লাশটা তুলে দিতে পারবেন? আমরা বললাম হ্যাঁ, আমরা পারব। তখন পরিবারের লোকজনসহ আমরা নিজেরা লাশটাকে পুলিশের সহায়তায় তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দিলাম।’

এ বিষয়ে রূপনগর থানার ওসি মোরশেদ আলম বলেন, ‘স্বজনেরা অভিযোগ জানালে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরে সেখান থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করি। তবে ডিএনএ পরীক্ষার আগে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।’

অগ্নিকাণ্ডের পর ২১ অক্টোবর উদ্ধার অভিযান শেষ করে ফায়ার সার্ভিস দায়িত্ব হস্তান্তর করে রূপনগর থানা পুলিশের কাছে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে সার্চ করেছি। আগুন নেভানোর পর দায়িত্ব হ্যান্ডওভার করেছি পুলিশের কাছে। এরপর লাশ পাওয়া গেলে সেটি আমাদের জানা সম্ভব নয়।’

তবে ওসি মোরশেদ আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের রেফারেন্সে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

মারজিয়ার পরিবারের এখন একটাই অপেক্ষা—ডিএনএ পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার। যাতে নিশ্চিত হওয়া যায়, ১৪ অক্টোবরের সেই ভয়াবহ আগুনে সত্যিই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন ২১ বছরের তরুণী মারজিয়া সুলতানা।

শেয়ার করুন