Beanibazarer Alo

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরীমনির সঙ্গে রাত্রিযাপনে সাকলায়েনের ‘গুরুদণ্ড’, তদন্তে যা পেল পুলিশ

admin

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪ | ০৬:১৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪ | ০৬:১৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
পরীমনির সঙ্গে রাত্রিযাপনে সাকলায়েনের ‘গুরুদণ্ড’, তদন্তে যা পেল পুলিশ

Manual8 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার ও বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গোলাম সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে নিজেদের তদন্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ কর্ম কমিশনে (পিএসসি) পাঠিয়ে তাদের মতামত চেয়েছে মন্ত্রণালয়।

Manual2 Ad Code

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসিকে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়েছে, তদন্তে উঠে এসেছে, নায়িকা পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। সাকলায়েন পরীমনির বাসায় গিয়ে রাত্রিযাপন করতেন। সাকলায়েনের স্ত্রী তার (সাকলায়েন) সরকারি বাসায় না থাকার সময় পরীমনিও গিয়ে তার বাসায় রাত্রিযাপন করেছেন। এমনকি সাকলায়েনের বাসায় টানা ১৭ ঘণ্টা দুজন (পরী ও সাকলাইন) ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ১৩ জুন পিএসসিকে ওই চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ কারণে সাকলায়েনকে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালের ৯ জুন রাতে সাভার থানার ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৪ জুন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন নায়িকা পরীমনি। সেই মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ছিলেন সাকলায়েন। পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ ওঠার পর তাকে বদলি করা হয়েছিল এবং তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল।

পরীমনির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৮ জুলাই নাসির উদ্দিন মাহমুদ হত্যাচেষ্টা, মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। ২০২১ সালের ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। পরে তাকে বিদেশি মদসহ গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় তিন দফায় মোট সাত দিন তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেফতারের ২৭ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর পরীমনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন।

পরীমনির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের সময় সাকলাইন গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগের এডিসির দায়িত্বে ছিলেন।

আলোচনা শুরুর পর প্রথমে সাকলায়েনকে ডিবি থেকে সরিয়ে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে ঝিনাইদহ ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়। গত ১৩ই জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খালা-২ শাখা থেকে উপসচিব রোকেয়া পারভিন জুঁই স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।

পরে পরীমনিকাণ্ডে বিভাগীয় মামলায় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি তথা পুলিশ অধিদপ্তরের স্মারকে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত স্মারকের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, গোলাম সাকলায়েন, পিপিএম (বিপি-৮৬১২১৪৭৫৫১), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, ঝিনাইদহ ইতোপূর্বে এডিসি, ডিবি গুলশান বিভাগ, ডিএমপি, ঢাকায় কর্মকালে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে ঘটনাক্রমে দেখা হয় এবং যোগাযোগ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রি যাপন করতে শুরু করেন। পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা কর্তৃক প্রদান করা তার ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ অনুযায়ী গত ০৪/০৭/২০২১ তারিখ থেকে ০৪/০৮/২০২১ তারিখ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন। নায়িকা পরীমনির মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট (সিআইডি কর্তৃক মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত) পর্যালোচনায় দেখা যায়, তার ও পরীমনির আদান-প্রদান করা মেসেজসমূহ (২৯ জুলাই, ২০২১ তারিখ হতে ৩ আগস্ট, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত) সামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির ফেসবুক আইডি ও গোলাম সাকলায়েন সিথিল নামে আপনার ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথোপকথন এবং তাদের হোয়াটস্অ্যাপ নম্বরে (১১ জুলাই, ২০২১ তারিখ হতে ৪ আগস্ট, ২০২১ তারিখ পর্যন্ত) কথোপকথন সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয় বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক। সিআইডির স্মারক নং-আইটি-ফরেনসিক/১৫৭৩, তারিখ-২/৯/২০২১ মূলে গত ১ আগস্ট, ২০২১ তারিখ ভোর ৬ টা থেকে ২ আগস্ট ২০২১ তারিখ রাত ৩ টা পর্যন্ত রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের ধারণ করা সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, গত ১ আগস্ট, ২০২১ তারিখে তার পূর্ব পরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে সাকলায়েনের স্ত্রী না থাকাবস্থায় নায়িকা পরীমনি তার রাজারবাগের সরকারি বাসায় যান এবং প্রায় ১৭ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে ২ আগস্ট ২০২১ রাত ০১.৩০ মিনিটে বাসা ত্যাগ করেন। তার ও নায়িকা পরীমনির সম্পর্কের বিষয়টি বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায়, টেলিভিশনে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং যার ফলে জনমনে এ বিষয়ে নানারূপ বিরুপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার জন্ম দেয়।

Manual3 Ad Code

এতে আরও বলা হয়, গোলাম সাকলায়েন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক হওয়া সত্ত্বেও পরীমনির সঙ্গে তার বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমনির সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন ও নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মত ঘটনা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তা প্রচারিত হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। উল্লেখিত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নম্বর ৭১/২০২২ রুজু করা হয়।

Manual4 Ad Code

গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর দায়ে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয় (সংলাগ-ক)। অভিযুক্ত কর্মকর্তা আনীত অভিযোগের জবাব প্রদানপূর্বক ব্যক্তিগত শুনানি প্রার্থনা করেন (সংলাগ-খ)। উক্ত বিভাগীয় মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য জনাব হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন, যুগ্মসচিব (প্রশাসন), জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’কে বলা হয় (সংলাপ-গ)। তদন্তে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় (সংলাগ-ঘ)।

Manual3 Ad Code

তদন্ত প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি পর্যালোচনাপূর্বক অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপ-বিধি ৩(ঘ) বিধি মোতাবেক গুরুদণ্ডের আওতায় কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ করা হবে না সে মর্মে ২য় কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। অভিযুক্তের কারণ দর্শানোর নোটিশ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় যথাযথ জারির প্রমাণ রয়েছে (সংলাগ-চ)। তিনি ২য় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেন (সংলাগ-ছ)। জবাবে তিনি চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চান।

গোলাম সাকলায়েনের বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক লিখিত জবাব, মৌখিক বক্তব্য ও অন্যান্য কাগজপত্রাদি পুনরায় বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। সার্বিক পর্যালোচনান্তে ২য় কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন, পিপিএম (বিপি-৮৬১২১৪৭৫৫১), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, ঝিনাইদহ-কে একই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপ-বিধি ৩(খ) বিধি মোতাবেক ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।

পিএসকে পাঠানো পত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এমতাবস্থায় গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপ-বিধি ৩ (খ) বিধি মোতাবেক ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার দণ্ডের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

পিএসসি থেকে পরামর্শ দেওয়ার পর সাকলায়েনকে অব্যাহতি দেওয়া নিশ্চিত হবে।

শেয়ার করুন