Beanibazarer Alo

  সিলেট     বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিয়ানীবাজারে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দূর্নীতি-১: তদারকি নেই, মৌলুদ ব্যস্ত আখের গোছাতে

admin

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪ | ০৪:২০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪ | ০৪:২০ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বিয়ানীবাজারে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দূর্নীতি-১: তদারকি নেই, মৌলুদ ব্যস্ত আখের গোছাতে

Manual6 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
শিক্ষাই গড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আর এই প্রজন্মই আগামীতে নেবে রাষ্ট্র, ব্যবসা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চালানোর দায়িত্ব। কিন্তু বিয়ানীবাজারের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কী শিখছে আমাদের সন্তানরা? শিক্ষার মূল লক্ষ্য যখন হয়ে দাঁড়ায় অর্থ আয়ের ধান্দা, বাড়ে মেধাহীনদের রাজত্ব, চলে দুর্নীতির গ্রাস, তখন সেখানে ধস নামতে বাধ্য। দিনে দিনে এ উপজেলার শিক্ষার মান নিম্নগামী। ফলে বিয়ানীবাজারে সবার অজান্তে গড়ে উঠছে আধাশিক্ষিত এক প্রজন্ম, যা এই জনপদের জন্য অশনিসংকেত।

এদিকে নিজ সরকারি পদকে কাজে লাগিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে লুটপাটের আখড়া বানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান। শিক্ষার মানোন্নয়নে নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, একাডেমিক সুপারভিশন, শিক্ষক-অভিভাবক সমন্বয় সভা আয়োজন, প্রতিষ্ঠান-প্রধানদের সমন্বয় সভা আয়োজন ও ক্লাস্টার গঠনকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগতমান সংরক্ষণ ও উন্নয়নের কাজটি তার বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তিনি নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। তার যোগদানের ৫ বছর অতিবাহিত হলেও উপজেলার কোন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমন কার্যক্রম সম্পাদন হয়েছে কি-না, তার উত্তর জানাতে পারেননি অফিসার মৌলুদুর রহমান।

এছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বিয়ানীবাজারের শিক্ষা প্রতিষ্টান পরিদর্শন করা তার দায়িত্ব। সেই পরিদর্শন কখনো আকস্মিক আবার কখনো পূর্বে অবহিত করে করার কথা। নিয়মিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিদর্শন, মনিটরিং করে শিক্ষকদের পরামর্শ প্রদান করা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক রিপোর্ট প্রস্তুত করে তা প্রেরণ করওে তার দায়িত্ব। মৌলুদুর রহমান যোগদানের পর এমন পরিদর্শন কার্যক্রম উপজেলার কোন বিদ্যালয়ে পরিচালিত হয়নি। স্থানীয় একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বহি পর্যালোচনা করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

Manual2 Ad Code

উপজেলার পাতন-আব্দুল্লাহপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ৬ষ্ট থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৭০জন।বহু বছর পূর্বে গড়া এই প্রতিষ্টানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ানোর কোন উদ্যোগ নেই। স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে শিক্ষার্থী বাড়ানোর বিষয়টি তদারকি করার কথা থাকলেও তেমন কিছু করা হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ও ল্যাব শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা কম্পিউটার কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা-ই জানেন না। গত কয়েক বছরে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সবাইকে কম-বেশি টাকা দিয়ে চাকরি নিতে হয়েছে। প্রায় মাস চারেক আগে কসবা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে লাঞ্চিত হন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম উদ্দিন নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের সামনে তাকে কটুকথা বলেন।

Manual8 Ad Code

এখানকার মাধ্যমিক শিক্ষার দৈনদশার চিত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রে বিয়ানীবাজারের ১৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ প্রশ্ন নিজেরা করতে পারে। ২৭ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন আংশিক নিজেরা করে আর বাকী ৫৫ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠান বাইরে থেকে প্রশ্ন কিনে নেয়। উপজেলার গ্রামীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর চিত্র আরো করুণ। বিয়ানীবাজারে একটিমাত্র সরকারি বিদ্যালয় বাদে মাধ্যমিকের বিদ্যালয়গুলো সবই বেসরকারি। এগুলোর শিক্ষক নিয়োগ পুরোটাই ত্রুটিপূর্ণ। অযোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে বলয়, আঞ্চলিকতার প্রভাব প্রকট। পড়ালেখার পুরোটাই টিউশনি ও কোচিংনির্ভর। স্কুলে পড়ালেখা হয় খুবই কম। আর যাঁরা শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেন, তাঁদের মানও যথেষ্ট কি না সেটাও দেখা উচিত। তাই সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে মাধ্যমিকই। আর এসব দূর্বলতার পিছনের কারিগর স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান।

Manual3 Ad Code

 

স্থানীয় শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার চার স্তরের মধ্যে বিয়ানীবাজারে মাধ্যমিকের অবস্থাই সবচেয়ে দুর্বল। এ স্তরের শিক্ষকদের বেশির ভাগ অযোগ্য ও অদক্ষ। বর্তমান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মেয়াদে তারা নিয়োগ পান। তাঁদের কাছ থেকে মানসম্মত শিক্ষা আশা করা যায় না। তারা বলেন, পাসের হার বাড়লেই মান বেড়েছে, সে দাবি ঠিক নয়। কারণ একটা সিস্টেমের মধ্যে কিছু জিনিস পড়লেই জিপিএ ৫ পাওয়া যায়। মান বাড়ার সঙ্গে পাঠ্যসূচির বাইরের জ্ঞান, সামাজিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, মূল্যবোধসহ বিভিন্ন ব্যাপার জড়িত। তাই সত্যিকার অর্থে যেভাবে মান বাড়া উচিত সেভাবে বাড়ছে না।

জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ আলী আহমদ বলেন, ‘বিয়ানীবাজারে শিক্ষার গড়পড়তা মান বাড়ছে না। পারিবারিকভাবে সামর্থ্যবানরা কিছু শিখছে। কিন্তু বেশির ভাগেরই তো সেই সামর্থ্য নেই, তাই তারা তেমন কিছুই শিখছে না। আমাদের শিক্ষকদের গুণগত মান নেই। তাঁরা ক্লাসরুমবহির্ভূত কাজে ব্যস্ত। আসলে মান বৃদ্ধিকে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকরাও গুরুত্ব দেন না।’ তিনি বলেন, প্রশাসনিক তদারকির অভাবে উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন বিপর্যয়।

Manual1 Ad Code

বিয়ানীবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান জানান, তার যোগদানের ৫ বছরের বেশী হয়ে গেছে। এই সময়ে প্রায় ২শ’ শিক্ষককে নিয়োগ ও এমপিওভূক্ত করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী শামীম জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দূর্নীতির খবর পেয়েছি। আমি শিক্ষা অফিসারকে তলব করে পুরো বিষয় জানতে চাইবো।

শেয়ার করুন