Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিয়ানীবাজারে ২০ বছরে বিলুপ্ত হাজারো পুকুর-দিঘি

admin

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৩ | ০৭:৫৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩ | ০৭:৫৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বিয়ানীবাজারে ২০ বছরে বিলুপ্ত হাজারো পুকুর-দিঘি

Manual1 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
পুকুর-দিঘি-জলাশয়ের জন্য বিয়ানীবাজারের অতীত ঐতিহ্য আজ বিলুপ্ত। জমির চাহিদা বাড়াসহ নানান কারণে এসব জলাশয় ভরাট করে নির্মিত হচ্ছে স্থাপনা। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে পুকুর-জলাশয়। এতে উষ্ণ জনপদে পরিণত হচ্ছে বিয়ানীবাজার। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সময়ের ব্যবধানে বিগত ২০ বছরে হাজারের মতো পুকুর-দিঘি ভরাট হয়েছে উপজেলায়। এর মধ্যে রয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী পুকুর-জলাশয়।

বিয়ানীবাজার পৌরশহরের অন্যতম বৃহৎ বারোপালের দিঘী ঠিকে থাকলেও সংকুচিত হচ্ছে। শহরের অন্যান্য পুকুরগুলো দখল, দূষণ ও আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। টিএন্ডটি সড়কের পুকুরের চারদিকে উঠেছে বহুতল স্থাপনা।

উপজেলা পরিসখ্যান কর্মকর্তার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিয়ানীবাজার উপজেলায় প্রায় ২২শ’ পুকুর-জলাশয় ছিল। দুই দশকের ব্যবধানে দখল-দূষণে হারিয়ে গেছে এর বেশিরভাগ। ১৯৯১ সালে মৎস্য অধিদপ্তরের এক জরিপে বিয়ানীবাজারে ১৯শ’ পুকুর-জলাশয়ের অস্তিত্ব মেলে।

Manual4 Ad Code

মূলত জমির মূল্য অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে নব্বইয়ের দশক থেকে বিয়ানীবাজারে পুকুর-জলাশয় ভরাটের মহোৎসব শুরু হয়। রাতারাতি পুকুর ভরাট করে তৈরি হয়েছে অগণিত স্থাপনা। বিগত কয়েকবছরে ছোট ছোট অসংখ্য পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে মালিকরা। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা কিংবা মামলা করে দায় সেরেছে। পুকুর ভরাটের মামলার বিচারে সাজা হওয়ার নজিরও নেই উপজেলার কোথাও।

পরিবেশ আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক শাহীন আলম হৃদয় বলেন, যারা পুকুর ভরাট করেন কিংবা পাহাড় কাটেন, যারা পরিবেশ দূষণ করেন তারা অনেক প্রভাবশালী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভূমিদস্যুরাই পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মানুষ কৌশলে পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করছে। এক্ষেত্রে খতিয়ানে জমির শ্রেণির পুকুর লেখা না থাকলে প্রতিকার পাওয়া দুষ্কর।

Manual6 Ad Code

সুজন বিয়ানীবাজার শাখার সভাপতি এডভোকেট আমান উদ্দিন বলেন, পরিবেশ আইনে পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি মামলা করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি নিতে হয়। আবার পরিবেশ আদালত গঠন করা হলেও তেমন লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। পরিবেশ আদালতে যাদের পদায়ন করা তাদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সবশেষে পুকুর ভরাটসহ এ ধরনের মামলাগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকজন ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেন না। যারা মামলা করেন, তারা পরবর্তীসময়ে সমঝোতা করে ফেলেন।

Manual1 Ad Code

বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন বলেন, পুকুর-জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন জনপ্রতিনিধিরা। জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে এলেও পরিবেশ অনেকাংশে রক্ষা সম্ভব। তাছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতার বিকল্প নেই। এই শহর আমাদের। এই শহরে আমরা বাস করছি। এই শহরকে রক্ষার দায়িত্বও আমাদের।

পুকুর-জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে ভালো নেই বিয়ানীবাজারের পরিবেশ-প্রকৃতিও। পুকুর-জলাশয় ভরাট, নদীর নাব্যতা সংকট, পানি দূষণ, নদীগুলোকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করাসহ নানা পরিবেশের বহুমাত্রিক সংকটে এই জনপদ।

Manual1 Ad Code

উপজেলার প্রতিটি খাল বা ছড়ায়ও আবর্জনার স্তূপ। ছড়াগুলোতে পচা-বাসী গৃহস্থালি আবর্জনা থেকে শুরু করে পলিথিন, প্লাস্টিক বোতল, রাবার, কাচ-এর মতো অপচনশীল দ্রব্য ফেলা স্বাভাবিক বিষয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিয়ানীবাজার উপজেলায় প্রায় ৭০ ভাগ জলাভূমি, পুকুর ও দীঘি ভরাট করা হয়েছে। এ কারণে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্রও। পরিবেশবিদরা বলেন, প্রায় ৩ লাখ মানুষের এ উপজেলায় ভূমির সংকট আছে। কিন্তু সেই সংকট সমাধানে প্রাকৃতিক পরিবেশকে গুরুত্ব না দিয়ে গত দুই দশকে নদী-বিল-হাওড় ভরাট ও দখল করায় বিয়ানীবাজারের প্রাকৃতিক রুপ-বৈচিত্র্যকে ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করে ফেলেছে।

বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা পুকুর শ্রেণিতে কোনো প্ল্যান অনুমোদন দেই না। পুকুর ভরাটেরও অনুমোদন দেই না। আইনগতভাবেও কোনো ধরনের জলাশয় ভরাটের সুযোগ নেই। তবে বিএস খতিয়ানে জমির শ্রেণি পুকুর, দিঘি কিংবা জলাশয় উল্লেখ না থাকলে সেক্ষেত্রে কোনো প্ল্যান ফিরিয়ে দেওয়া কঠিন। ডিটেল এরিয়া প্ল্যানে পুকুরের জায়গা চিহ্নিত করা আছে। নিজেদের বাঁচতে, নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষায় পুকুর-জলাশয়ের সুরক্ষা দেওয়া জরুরি।

 

শেয়ার করুন