মন্ত্রীত্ব নিয়ে সিলেটে উচ্ছ্বাস, হতাশা

Daily Ajker Sylhet

admin

১৩ জানু ২০২৪, ১২:২২ অপরাহ্ণ


মন্ত্রীত্ব নিয়ে সিলেটে উচ্ছ্বাস, হতাশা

স্টাফ রিপোর্টার:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগে চমক দেখিয়েছিলেন নতুন প্রার্থীরা। বিভাগের ১৯টি আসনের ৮টিতে পুরনোদের পেছনে ফেলে বিজয়মাল্য পরেছিলেন নতুনরা। নির্বাচনের পর গত বুধবার ঘোষিত মন্ত্রীদের নামের তালিকায়ও সিলেটবাসীর জন্য ছিল চমক। একাদশ জাতীয় সংসদে দায়িত্ব পালনাকরী সিলেট বিভাগের ৪ মন্ত্রী ও ১ প্রতিমন্ত্রীর কারোই স্থান হয়নি নতুন মন্ত্রীসভায়। মন্ত্রীসভায় সিলেট বিভাগের অংশীদারিত্ব কমে দাঁড়িয়েছে তিনজনে। এই তিনজনের সবাই প্রথমবারের মতো মন্ত্রীসভায় দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। নতুন মন্ত্রীসভা নিয়ে সিলেটে একদিকে যেমন উচ্ছ¡াস চলছে, তেমনি অন্যদিকে বেশ হতাশাও রয়েছে। তবে, দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মনে করছেন মন্ত্রীসভা বর্ধিত হলে বাদপড়া প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রীরা অন্তর্ভূক্ত হবে।

 

সিলেটে এখন আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু বাদপড়া মন্ত্রীরা। একাদশ জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, জলবায়ূ ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এবং বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলীর বাদ পড়া নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন।

 

সিলেট-১ আসনকে সবসময় দেশের মর্যাদাপূর্ণ আসনগুলোর একটি মনে করা হয়। যে কারণে এই আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসন থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে কেবলমাত্র বিএনপির খন্দকার আবদুল মালিক ছাড়া বাকি সবাই মন্ত্রী হয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ড. এ কে আবদুল মোমেন। এবারও তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু নতুন মন্ত্রীসভায় ঠাঁই হয়নি তাঁর। ড. মোমেন মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়বেন এটা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না সিলেটের মানুষ। বুধবার মন্ত্রীদের নামের তালিকা ঘোষণার পর ড. মোমেনের নাম দেখতে না পেয়ে হতাশ হন সিলেটবাসী।

 

এবার মন্ত্রীসভায় আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন সদ্য সাবেক প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী ইমরান আহমদ- এমনটা মনে করেছিলেন তার নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলার মানুষ। ইমরানের ফের মন্ত্রী হওয়ার গুঞ্জন ছিল সারা সিলেটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুন মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়েন ইমরানও। এতে হতবাক তার নির্বাচনী এলাকার মানুষ। কোনভাবেই বাদপড়ার হিসেব মিলাতে পারছেন না তারা।

 

একইভাবে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের নাম মন্ত্রীসভায় না থাকায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। মান্নান গেল পাঁচ বছর বেশ দক্ষতা ও সফলতার সাথে তার মন্ত্রণালয় সামলে রেখেছিলেন। মান্নানের বাদপড়াটা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না সিলেট বিভাগের মানুষ।

 

জলবায়ূ ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আহমদ শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রীসভায় থাকছেন- এমন প্রত্যাশা ছিল মৌলভীবাজারের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের। কিন্তু তিনিও বাদ পড়েছেন। আর বেসরকারি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী নির্বাচনে পরাজিত হলেও টেকনোক্রেট মন্ত্রী হওয়ার গুঞ্জন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যের চাকার আর খুলেনি।

এই পাঁচমন্ত্রী বাদ পড়ায় নিজেদের বলয়ের নেতাকর্মী ও অনুসারী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রীর বাদ পড়াকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সিলেটের মানুষের।

 

এদিকে, নতুন মন্ত্রীসভায় ঠাঁই করে নিয়েছেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের ৭ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, টেকনোক্রেট মন্ত্রী হয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথের কৃতিসন্তান ডা. সামন্ত লাল এবং সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। উপাধ্যক্ষ শহীদ মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়ায় মৌলভীবাজারের নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ¡াস দেখা দিয়েছে। একইভাবে শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় সিলেট জেলাজুড়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ উচ্ছ¡সিত। ‘২৪ ঘন্টার রাজনীতিবীদ’ খ্যাতি পাওয়া শফিকুর রহমান চৌধুরী পরিশ্রম এবং দলের প্রতি অনঢ় আস্থা ও ত্যাগের মূল্যায়ন পেয়েছেন বলে মনে করছেন সিলেটবাসী। বুধবার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণার পর তার নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে মিষ্টিবিতরণ করেন দলের নেতাকর্মীরা।

 

সিলেটের পুরনো মন্ত্রীরা বাদ পড়া ও নতুনরা অন্তর্ভূক্ত হওয়া প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘আগের সংসদে সিলেট বিভাগের পাঁঁচজন মন্ত্রী ছিলেন। এবার তিনজন দায়িত্ব পেয়েছেন। আগামীতে মন্ত্রীসভা বর্ধিত হলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’

Sharing is caring!