Beanibazarer Alo

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুরগি চুরি করে ছেড়েছিলেন গ্রাম, হত্যা মামলায় দেশ ছাড়েন ‘আরাভ খান’

admin

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩ | ০১:৩৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ | ০১:৩৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
মুরগি চুরি করে ছেড়েছিলেন গ্রাম, হত্যা মামলায় দেশ ছাড়েন ‘আরাভ খান’

Manual4 Ad Code

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন বর্তমানে দুবাইয়ের ‘আরাভ খান’। সেখানে তার স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও কোটিপতি বনে যাওয়ার খবর এখন আলোচনার বিষয়। তাকে নিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না। বর্তমানে তিনি আরাভ খান নামে পরিচিত হলেও তার নিজ জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়ায় তিনি রবিউল ও আপন নামেই পরিচিত।

এলাকাবাসী ও প্রতিবেশীরা জানান, জুয়ার টাকা জোগাড় করতে রবিউল গ্রামের মানুষের হাস-মুরগি চুরি করতেন। এমনকি তার বাবার মেরে আনা মাছ চুরি করেও বাজারে বিক্রি করে দিতেন তিনি। সেই টাকা দিয়ে খেলতেন জুয়া। এক সময় তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন গ্রামবাসী।

জানা যায়, জুয়ার টাকার জন্য হাস-মুরগি চুরি করে তিনি গ্রাম ছাড়েন ২০১০ সালে। চার বছর আগে পুলিশ সদস্যকে হত্যায় মামলায় জড়িত হয়ে দেশ ছাড়তে হয় তাকে।

জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে কোটালীপাড়ার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রবিউল ইসলাম অরফে আপন। তার বাবার নাম মতিউর মোল্লা। তার বাবা খুলনায় ভাঙারি মালামাল ফেরি করতেন। জীবিকার তাগিদে একদিন কোটালীপাড়া চলে আসেন। পরে সেখানে জমি কিনে বাড়ি করেন তার বাবা। এরপর বিলের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় রবিউল ইসলামকে পাঠিয়ে দেন আদি বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারীতে। সেখানে এস এম মডেল স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ফেল করার পর তাকে কোটালীপাড়ায় নিয়ে আসেন তার পরিবার। একসময় রবিউল জুয়া খেলাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। বিল থেকে বাবার মেরে আনা মাছ চুরি করে বাজারে বিক্রি করে দিতেন। তার হাত থেকে রক্ষা পেত না এলাকাবাসীর হাস-মুরগিও। এ নিয়ে এলাকায় কয়েকবার সালিশ বিচার বসেছে। এক সময় অতিষ্ঠ হয়ে বাবা মতিউর মোল্লাকে চাপ দিয়ে রবিউলকে গ্রাম ছাড়াতে বাধ্য করে গ্রামবাসী। গ্রাম ছাড়ার দুই বছর পর একবার এসেছিলেন রবিউল। এক যুগ পরে গণমাধ্যমে রবিউলকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে আলোচনা শুরু হয় এলাকাবাসীর মধ্যে।

Manual7 Ad Code

এ বিষয়ে রবিউলের এক প্রতিবেশী হায়দার রহমান বলেন, আপন (রবিউল ইসলাম) সপ্তম শ্রেণিতে ফেল করার পর জন্মস্থান কোটালীপাড়ায় চলে আসে। এখানে এসে আর সে কোনো স্কুলে ভর্তি হয়নি। আশুতিয়া গ্রামে এসে তার বাবাকে মাছ ধরায় সহযোগিতা করত। এক সময় তিনি জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তখন জুয়ার টাকা যোগানোর জন্য তার বাবার ধরা মাছসহ এলাকার হাস-মুরগি ধরে বিক্রি করে দিত। এ নিয়ে গ্রামের মধ্যে কয়েকবার সালিশ বিচার ও হয়েছে। পরে আপন ঢাকা চলে যায়। চলে যাওয়ার দুই বছর পর একবার গ্রামে আসেন। তখনও আপন সাধারণ ছিল। সম্প্রতি তার এই কোটিপতি বনে যাওয়া আমাদের অবাক করেছে। আপন যদি অবৈধ পথে কোটিপতি হয়ে থাকেন তাহলে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানই কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের আপন মোল্লা বিষয়টি নিশ্চিত করে হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না বলেন, প্রায় এক যুগ অগে আপন একবার বাড়ি এসেছিল। এরপর তাকে গ্রামে আর দেখা যায়নি। তাই তার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানতাম না। তবে কিছুদিন আগে ফেসবুকে দেখে আমরা এলাকাবাসী অবাক হই। কী করে সে এতো টাকার মালিক হলো? বিদেশে গিয়ে নাম বদলে আরাভ খান হলেও আমরা তাকে দেখে চিনে ফেলি। সে মতিউর জেলের ছেলে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন।

তিনি আরও বলেন, এত অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, অবৈধ পথেই এই টাকা সে আয় করেছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। সে দোষী হলে তার বিচার হওয়া উচিত।

স্থানীয় সমাজকর্মী এম আরমান খান জয় বলেন, আরাভ খানকে আমরা ‘আপন চিটার’ নামেই জানতাম। আরাভ আমাদের পাশের গ্রামের ছেলে। আজ থেকে ১০ বছর আগে একবার আমার খালাতো ভাই আরাভের একটি ছবি দিয়ে বলেন এই লোক ঢাকা থেকে একটি লেটেস্ট মডেলের বাইক চুরি করে নিয়ে পালিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা আশুতিয়া গ্রামে খোঁজ নেই। কিছুদিন পরে জানতে পারি সে বাড়িতে আসছেন। পরের দিন ভোর রাতে গিয়ে আপন (রবিউল ইসলাম) ওরফে আরাভকে হাতে নাতে ধরি। তাকে ধরার পর সে আমাদের হাত-পা ধরে ক্ষমা চায়। পরে আমরা বাইকটা উদ্ধার করে তাকে ছেড়ে দেই। বাইকটা ছিল আমার খালাতো ভাইয়ের অফিসের বসের। তার বায়িং হাইজের ব্যবসা ছিল। মূলত আপন ঢাকায় গিয়ে বড়লোকদের টার্গেট করে বন্ধুত্ব গড়ত পরে তাদের দামি মালামালগুলো চুরি করে পালিয়ে যেত।

Manual4 Ad Code

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শককে হত্যা করা হয় যেভাবে

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ২০১৮ সালের ৭ জুলাই রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তির আমন্ত্রণে ঢাকার বনানীর একটি বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, মামুনকে ফাঁদে ফেলে বনানীর ওই বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। তাকে ফ্ল্যাটে নিয়ে বেঁধে, স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকে পেটানো হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে মামুন মারা যান। পরে গাজীপুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই হত্যাকাণ্ডে রহমত উল্লাহ, রবিউল ইসলাম, সুরাইয়া আক্তার কেয়া, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারওয়ার হোসেন, মেহেরুন্নিসা ওরফে স্বর্ণা ও ফারিয়া বিনতে মাইসাকে আসামি করে বনানী থানায় হত্যা মামলা করে পরিদর্শক মামুনের পরিবার।

তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় রহমত উল্লাহ এবং রবিউল ইসলাম ওরফে আপনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেখানে রবিউল ইসলামকে পলাতক উল্লেখ করা হয়। পরে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

Manual6 Ad Code

যেভাবে ‘আয়নাবাজি’র ছক এঁকেছিলেন আরাভ খান

সম্প্রতি ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে একটি গয়নার দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ইউটিউবার হিরো আলমসহ দেশের বিনোদন জগতের বেশ কয়েকজন তারকার দুবাই যাওয়ার পর থেকেই বিষয়টি সবার নজর কাড়ে। এরপর জানা যায় আরাভ জুয়েলার্সের মালিক কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম। যিনি প্রায় চার বছর আগে ঢাকায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। এ মামলায় তিনি নিজেকে বাঁচাতে এঁকেছিলেন বাংলা সিনেমা ‘আয়নাবাজি’র ছক। আবু ইউসুফ লিমন নামে এক তরুণকে বিকেএসপিতে খেলার সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে আদালতে তার বদলে আত্মসমর্পণ করান লিমনকে। পরে আদালত লিমনকে কারাগারে পাঠায়। এই ফাঁকে আরাভ ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তার সহায়তায় নকল পাসপোর্ট বানিয়ে দেশ ত্যাগ করে দুবাই চলে যান। পরে এ বিষয়টি জানাজানি হলে লিমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়। এখনও প্রতারণার মামলার হাজিরা দিতে হয় ওই তরুণকে। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ৯ মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পান লিমন।

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, নিজেকে বাঁচাতে প্রতারণার মাধ্যমে আবু ইউসুফ নামের আরেক যুবককে রবিউল সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হয়। রবিউলের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে আবু ইউসুফ লিমন ২০২০ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাকে জেলে পাঠান। প্রায় ৯ মাস জেলে থাকার পর সেই তরুণের খোঁজ-খবর নেওয়া বন্ধ করে দিলে ওই তরুণ একপর্যায়ে সত্য প্রকাশ করে দেন। পরে ওই তরুণের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

Manual1 Ad Code

 

শেয়ার করুন