Beanibazarer Alo

  সিলেট     বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজার-১: নিরুত্তাপ নির্বাচনে শাহাব উদ্দিন নির্ভার

admin

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ | ১২:৩৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ | ১২:৩৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
মৌলভীবাজার-১: নিরুত্তাপ নির্বাচনে শাহাব উদ্দিন নির্ভার

Manual2 Ad Code

জুড়ী প্রতিনিধি:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ বলয় ছাড়া কারো মধ্যে নির্বাচনী কোনো আমেজ নেই, উত্তাপও নেই। সাধারণ ভোটারের মধ্যে নেই কোনো আগ্রহ। নিরুত্তাপ এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকী প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহাব উদ্দিন নির্ভার হলেও নিজ বলয়ে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

প্রকাশ্যে কেহ মুখ না খুললেও কী হচ্ছে? কী হবে? আদৌ নির্বাচন হবে কি না এ নিয়ে দলীয় কর্মী সমর্থকরা ভয়ে আছেন।

ভোট হলে নৌকার বিজয় যখন প্রায় নিশ্চিত, ঠিক তখন আতঙ্কের কারণ হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের ভোট ব্যাংক। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন যদি বিএনপি-জামায়াত ভোট দিতে যায় তাহলে লাঙলের নিকট নৌকার পরাজয় মানা ছাড়া পথ থাকবে না। নিরব বিপ্লব ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বিএনপি-জামায়াত সে বিষয়ে কথা না বলে সরকার পতনের চিন্তায় মগ্ন।

নির্বাচনী এলাকা ঘুরে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারের সাথে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া যায়। বিএনপি, জামায়াত কিংবা সাধারণ ভোটারতো দুরের কথা আওয়ামী লীগের সকল ভোটারও কেন্দ্রে যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

Manual7 Ad Code

জানা যায়, মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) নির্বাচনী এলাকায় ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (নেীকা), ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইমান উদ্দিন (নৌকা), ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী এবাদুর রহমান চৌধুরী (লাঙ্গল), ১৯৯১, ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এবাদুর রহমান চৌধুরী (ধানের শীষ), ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো: শাহাব উদ্দিন (নৌকা) এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে এবাদুর রহমান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতি মন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেও মাঝ পথে তাঁকে মন্ত্রীত্ব থেকে বাদ দেয়া হয়।

Manual6 Ad Code

২০১৪ সালে মো: শাহাব উদ্দিন এমপি হয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ-এর দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৮ সাল থেকে এখনও পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তারা হলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো: শাহাব উদ্দিন (নৌকা), জাতীয় পার্টি প্রার্থী আহমদ রিয়াজ উদ্দিন (লাঙল), তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (সোনালী আঁশ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ময়নুল ইসলাম (ট্রাক)।

Manual6 Ad Code

মো: শাহাব উদ্দিন বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি। এ নিয়ে ৬ বার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি বিজয়ী হওয়াটা প্রায় নিশ্চিত বলে তাঁর অনুসারীরা মনে করেন। এখানে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী না থাকায়, দলীয় বিদ্রোহী কোনো প্রার্থী না থাকায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তৃণমূল বিএনপি প্রার্থীর মাঠে তেমন কোনো পরিচিতি বা প্রভাব না থাকায় এবং জাতীয় পার্টির এক সময়ের এই ঘাটিতে এখন লাঙলের ভোটার হাতে গোনা হওয়ায় মো. শাহাব উদ্দিন নির্ভার।

Manual4 Ad Code

মাঠের বিরোধী দল বিহীন এ নির্বাচনে শতভাগ স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোট হলে নৌকা জিতবে- এমন পরিস্থিতিতে তার বলয়ে অজানা একটি ভয় কাজ করছে বলে অনেকে জানান। কেননা, জাতীয় পার্টি প্রার্থীর কৌশল কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ভোটার ভোট দিতে গেলেই পরিস্থিতি পাল্টে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিরব ভোট বিপ্লব ঘটে যেতে পারে বলে তাদের ধারণা। এ আসনে নৌকা পাওয়ার যুদ্ধে তিনিসহ ৫ জন অবতীর্ণ হলেও ঘাম ঝরিয়ে তিনি প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করেন। তবে চা বাগান অধ্যুষিত এ এলাকায় চুড়ান্ত ভাবে বিজয়ী হতে পারবেন কি না সে জন্য ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়, প্রবাসীদের অধিকার আদায় আন্দোলনের নেতা কাতার প্রবাসী আহমদ রিয়াজ উদ্দিন-কে জোকার, কমেডিয়ান, টিকটকার ইত্যাদি বিশেষণে লোকজন অভিহিত করেন। তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা জাতীয় পার্টির উল্লেখ যোগ্য কোনো নেতাকর্মীকে এখনও তার পক্ষে মাঠে দেখা না গেলেও তার নির্বাচনী সভায় মানুষের ঢল নামে।

আঞ্চলিক ভাষায় তার হাস্যরসাত্বক বক্তব্য দর্শক শ্রোতাকে আমোদিত করে। সরকার দলীয় স্থানীয় কয়েক নেতার বিভিন্ন অপকর্মের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী মূলক কড়া ভাষার বক্তব্য জনমনে প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন কৌশলী বক্তব্যে বিএনপি-জামায়াতের ভোটারদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবার আহবান জানান। তার ধারণা বিএনপি-জামায়াতের ভোটার ভোট দিতে গেলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকার হটানো যাবে না। সরকার হটাতে হলে সারাদেশে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লাঙলে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলেই আওয়ামী লীগ সরকার শেষ। কেননা, ভিতরি মাইরের ঔষধ নাই’। সর্বোপরী তার বিনোদনমূলক বক্তব্য ও প্রচারণা মাঠে কিছুটা হলেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে।’

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জুড়ী উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা থেকে সর্বশেষ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তার প্রতি দলের অবিচার ও অবমূল্যায়নের ফলে গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূল বিএনপিতে যোদ দেন এবং এ আসনে উক্ত দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। যদিও যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল তাকে বহিস্কার করে। তার অনুগত কিছু কর্মী ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ, জুড়ী উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নিকাহ রেজিস্ট্রার, মুফতী মোহাম্মদ ময়নুল ইসলাম হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অনেকেই বলছেন তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে নির্বাচন করছেন। তবে এক ভিডিও বার্তায় সে অভিযোগ প্রত্যাখান করে তিনি বলেছেন মানবসেবা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলেম-উলামারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রার্থী হয়েছেন।

শেয়ার করুন