Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘রাজাকার সবগুলাকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না’

admin

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৫ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
‘রাজাকার সবগুলাকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না’

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। ‘রাজাকার’ স্লোগানে কেঁপে ওঠে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। দ্রুত সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

আন্দোলনের উত্তাল সেই রাতে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাবির তৎকালীন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের মধ্যে হয় এক টেলিফোন আলাপ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চানখারপুল গণহত্যা মামলার সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই ফোনালাপের লিখিত রূপ উপস্থাপন করেন। তার দাবি, আলাপের একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ফাঁসি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন শেখ হাসিনা।

Manual3 Ad Code

তাজুল ইসলাম বলেন, সেদিন মাকসুদ কামাল শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক হল থেকে তো ছেলেমেয়েরা তালা ভেঙে বের হয়ে গেছে। এখন তারা রাজু ভাস্কর্যে, চার–পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে জমা হইছে। মল চত্বরে জমা হয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে আমার বাসাও অ্যাটাক (আক্রমণ) করতে পারে।’

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমার বাসা প্রটেকশনের (সুরক্ষার) কথা বলে দিছি।’ তখন মাকসুদ কামাল ‘জি জি’ বলে সাড়া দেন। শেখ হাসিনা তখন বলেন, ‘আগে একবার করছে…।’

Manual7 Ad Code

এরপর মাকসুদ কামাল জানান, ‘ওই রকম একটা প্রস্তুতি…লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হইছে।’ সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হলে হবে না, আমি পুলিশ এবং বিডিআর হয়ে বিজিবি আর…বলছি খুব অ্যালার্ট (সতর্ক) থাকতে এবং তারা রাজাকার হইতে চাইছে তো, তাদের সবাই রাজাকার। কী আশ্চর্য কোন দেশে বসবাস করি।’

মাকসুদ কামাল জবাব দেন, ‘জি জি…বলতেছে আমরা সবাই রাজাকার।’ তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘তো রাজাকারের তো ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও তাই করব। একটাও ছাড়ব না, আমি বলে দিছি। এই এত দিন ধরে আমরা কিন্তু বলিনি, ধৈর্য ধরছি, তারা আবার বাড়ছে।’

এরপর মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বেশি বেড়ে গেছে এবং অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, অতিরিক্ত…। আপা একটু ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাটা আরেকটু বাড়ানো…। আর আমার বাসার ওইখানেও…।’

শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের…ব্যবস্থা করছি, সমস্ত ক্যাম্পাসে…বিজিবি, র‍্যাব এবং পুলিশ—সব রকম ব্যবস্থা হইছে। তোমার বাসার ভেতরে লোক রাখতে বলছি। ভেতরে কিছু রাখা আছে…এত বাড়াবাড়ি ভালো না।’

Manual5 Ad Code

সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর পুরো ফোনালাপ পাঠ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ওইদিন মাকসুদ কামাল আরও বলেন, ‘বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের ছেলেদেরকে মেরেছে। আরও দু–একটা হলে একই কাজ করেছে। ছাত্রলীগের ছেলেপেলে সাদ্দাম (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি), ইনান (নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক), শয়ন (নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি) ওরা আমার বাসায় ছিল সন্ধ্যা থেকে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, ওদেরকে আমি ডেকে নিয়ে আসছি, ওরাও আসছে। ওদের সাথে বসে ওদের হলে হলে যেন ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ রাখে এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণকে যেন খবর দেয়। এগুলা করতে করতেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে গেছে।’

এ পর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোন দেশে বাস করি আমরা। এদেরকে বাড়তে বাড়তে তো…রাজাকারদের কী অবস্থা হয়েছে দেখিস নাই, সবগুলাকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না।’

তখন মাকসুদ কামাল বলেন, ‘হ্যাঁ, এবার এই ঝামেলাটা যাক, এরপরে আমিও নিজে ধরে ধরে যারা এই অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, মেইন যারা আছে, এদের বহিষ্কার করব ইউনিভার্সিটি থেকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব এইগুলাকে বাইর করে দিতে হবে…আমি বলে দিচ্ছি আজকে সহ্য করার পরে অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) করবে, ধরে নেবে এবং যা অ্যাকশন নেওয়ার নেবে…কারণ ইংল্যান্ডে এ রকম ছাত্ররাজনীতির জন্য মাঠে নামল, কতগুলি মেরে ফেলায় দিল না?’

মাকসুদ কামাল ‘জি জি জি’ বলে সাড়া দেন। শেখ হাসিনা তখন বলেন, ‘ওই অ্যাকশন না নেওয়া ছাড়া উপায় নাই। আমরা এত বেশি সহনশীলতা দেখাই আজ এত দূর পর্যন্ত আসছে।’

Manual8 Ad Code

এরপর মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এটা তো…আমরাও তো সহনশীলতা…আমি ছাত্রলীগকে বলছি যে তোমরা কোনো ধরনের ইয়ে করতে যাইও না। যেহেতু আদালতের বিষয়, আদালত নিষ্পত্তি করবে।’

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘না, এ আদালত হবে না, আবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিছে।’

তখন মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আবার রাষ্ট্রপতিকে কেউ এই রকম বলে যে ২৪ ঘণ্টার রাষ্ট্রপতিকে কেউ আলটিমেটাম দেয় একটা দেশে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছে…বেয়াদবির একটা সীমা থাকে…!’

মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আপা, আমি আপনাকে যদি অন্য কোনো খারাপের দিকে যায়, আমি আবার একটু জানাব। কিন্তু রাতের বেলা জানাব না, হয়তোবা আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টার মধ্যে হলে জানাব।’

শেখ হাসিনা উত্তর দেন, ‘কোনো অসুবিধা নাই…আমি আমি সব সময়ই ফ্রি।’

শেষে মাকসুদ কামাল বলেন, ‘জি জি জি, স্লামুআলাইকুম।’

শেয়ার করুন