সহিসংতায় ছেলের মৃত্যু: চিৎকার দিয়ে একবারই কেঁদে উঠেছিলেন মা

Daily Ajker Sylhet

admin

৩০ জুলা ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ণ


সহিসংতায় ছেলের মৃত্যু: চিৎকার দিয়ে একবারই কেঁদে উঠেছিলেন মা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
একমাত্র ছেলের মৃত্যু সংবাদ আসার পর একবারই চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলেন মা ময়না খাতুন। এরপর বুকে পাথর চাপা দিয়েছেন। কারো কোনো প্রশ্নের জবাব দেন না। কেউ কথা বললে শুধু তাকিয়ে থাকেন। এখন ছেলের শোবার ঘরে স্মৃতি হাতরে ফেরেন। নিহত ছেলের ঘরে তালা দিয়ে চাবিটা নিজের কাছে রেখেছেন। ইচ্ছে হলে ওই রুমে গিয়ে টেবিলের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। ছেলের ব্যবহারের বাইসাইকেলটি নেড়েচেড়ে দেখেন।

মায়ের সঙ্গে ভাইয়ের হাতের স্পর্শ খুঁজে ফেরে একমাত্র ছোট বোন মাইসাও। কোটা আন্দোলনের সময় রাজধানীতে নিজের ভাড়া বাসার সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী মারুফ হোসেন প্রাণ হারায়। একমাত্র ভাইয়ের স্মৃতি তাড়া করে ফেরে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মাইসাকে। সন্ধ্যার পরপরই ভাই মাকে ফোন করত। তার সঙ্গেও কথা বলত। চাকরি পেলেই তার পছন্দের অনেক খেলনা কিনে দেওয়ার কথা দিয়েছিল। কিন্তু ভাই আর নেই। এখনো সন্ধ্যা নামলেই ভাইয়ের ফোনের অপেক্ষা থাকে। ভাইয়ের কথাগুলো তার কানে বাজে।

নিহত মারুফ কুষ্টিয়ার খোকসা পৌর এলাকার থানাপাড়ার শরিফ উদ্দিনের ছেলে। সে শেষবর্ষের চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে ইন্টার্ন ও চাকরির খোঁজে ২৯ জুন ঢাকায় যায়। বন্ধুদের সঙ্গে বাড্ডায় একটি মেসে ওঠে। ১৯ জুলাই দুপুরে সে ওই বাসার সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়। উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২০ জুলাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়। মারুফের মৃত্যুর পর বাবা মা ও ছোট বোনটি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফুটপাতে ফল বিক্রেতা শরিফ উদ্দিন কাজে যান না। গত ৭ দিনে বাড়িতে উনুন জ্বলেনি। প্রতিবেশীরা পালা করে খাবার যোগাচ্ছেন পরিবারটির।

সরেজমিন দেখা যায়, দুই কক্ষের চার চালা টিনের ঘরের বারান্দায় মা ময়না খাতুনকে ঘিরে প্রতিবেশীরা বসে আছেন। তারা নানা কথা বলে তাকে (ময়নাকে) সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কারো কথায় সাড়া নেই ময়না খাতুনের। নির্বাক তিনি শুধু শুনছেন। হঠাৎ করেই ছেলের ঘরের তালা খুলে টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। সরে গিয়ে ছেলের শোয়ার খাটে বসে বলে উঠলেনÑ‘বাবার সাইকেল। এই সাইকেলেই বাবা (মারুফ) স্কুল করেছে। বাজারে ঘুড়তে যেত।’

মারুফের বাবা শরিফ উদ্দিন জানান, ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বেলা ১১টার দিকে ছেলের সঙ্গে শেষবার কথা হয়। তখনো তাদের (মারুফ) মেসে খাবার হয়নি। কথা শেষ হওয়ার আগেই লাইন কেটে যায়। আর কথা হয়নি। বিকাল ৫টার পর ছেলের এক সহপাঠী তাকে ফোন দিয়ে মারুফের মৃত্যুর খবর জানায়। তিনি এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

Sharing is caring!