সিলেটে চাঞ্চল্যকর পর্যটক হত্যাকাণ্ড, স্ত্রী-পরকীয়া প্রেমিকসহ গ্রেফতার ৪
২০ এপ্রি ২০২৩, ০৪:৪৭ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের জাফলংয়ে রিসোর্টের পাশ থেকে পর্যটকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ওই পর্যটকের স্ত্রী এবং তার পরকীয়া প্রেমিকসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে বিষয়টি জানিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। জেলা পুলিশ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ সুপার বলেন- গত ১৭ এপ্রিল বিকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানাধীন জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্টের পাশে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ পাথরচাপা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। গোয়াইনঘাট থানাপুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে জানা যায়, লাশ পাওয়া ওই যুবকের নাম আলে ইমরান (৩২)। তিনি কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।
এ ঘটনায় পরদিন গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে গোয়াইনঘাট থানাপুলিশ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৯ এপ্রিল) রাতে গোয়াইনঘাট থানাপুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক দুটি অভিযানে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি খুশনাহার (২১) এবং নাদিম আহমেদ নাঈম (১৯)- এ দুজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে খুশনাহার ওই পর্যটক ইমরানের স্ত্রী এবং নাদিম খুশনাহারের পরকীয়া প্রেমিকের বন্ধু বা সহযোগী। তিনি নারায়নগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানার বেলদি গাজীরটেক গ্রামের মো. জিন্নাতের ছেলে। আর খুশনাহার কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার ছেত্রা গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে।
এ দুজনের মধ্যে নাদিমকে নিজ বাড়ি এবং খুশনাহারকে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে- ইমরানের স্ত্রী খুশনাহারের সঙ্গে মাহিদুল হাসান মাহিন (২৪) নামে এক তরুণের দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরের অবৈধ প্রেম চলছে। মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত। ইমরানের সঙ্গে গত পাচঁ বছর আগে খুশনাহারের বিয়ে হয়। মাহিনের সাথে প্রেমে জড়ানোর পর থেকেই খুশনাহার এবং তার প্রেমিক মাহিন বিভিন্ন সময় ইমরানকে হত্যা করার চেষ্টা করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যা করার উদ্দেশ্যে খুশনাহার বেড়ানোর কথা বলে স্বামীকে নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল রাতে ভৈরব হতে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন। অন্যদিকে একই দিনে প্রেমিক মাহিন ও মাহিনের অফিসে কর্মরত গ্রেফতারকৃত আসামি নাদিম এবং রাকিব নামের এক সহযোগী ঢাকা কমলাপুর হতে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ১৬ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে জাফলং বল্লাঘাটস্থ ‘রিভারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল’র ১০১ নং কক্ষে স্ত্রীকে নিয়ে উঠেন ইমরান। এসময় অন্য তিন আসামি জাফলং বল্লাঘাটের হোটেল শাহ আমিনে অবস্থান করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে খুশনাহার কৌশলে ‘রিভারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল’র তাদের কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন। পরবর্তীতে মাথাব্যথার ঔষধের কথা বলে রাত ১০টার দিকে ইমরানকে তার স্ত্রী খুশনাহার ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর ইমরান গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে স্ত্রী খুশনাহার রাত ১২টার দিকে তার প্রেমিক মাহিন ও সহযোগিদের হোটেলকক্ষে নিয়ে আসেন। রাত ২টার দিকে ইমরানের গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুশনাহার ও তার প্রেমিক মাহিন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন।
এসময় আসামি নাদিম পর্যটক ইমরানের পা চেপে ধরেন এবং রাকিব নামের একজন রুমের বাহিরে পাহারা দেন। একসময় ইমরানের মৃত্যু নিশ্চিত হলে রাত ৩টার দিকে হত্যাকালী সবাই ইমরানের মৃতদেহ লুকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে হোটেলের পাশে পাথরচাপা দিয়ে রাখেন। পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে তারা হোটেল থেকে বের হয়ে সিএনজিচালিতে অটোরিকশাযোগে সিলেট ছেড়ে পালিয়ে যান।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট জেলা পুলিশ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে আসামি খুশনাহার ও নাদিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় খুশনাহারের পরকীয়া প্রেমিক মাহিন ও তার আরেক সহযোগী রাকিবকে গ্রেফতারে কিশোরগঞ্জ এবং নারায়নগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করছিলো পুলিশ। প্রেস ব্রিফিং শেষ হওয়ামাত্র খবর আসে- ওই দুজনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
এসময় সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন- গ্রেফতারকৃত ওই দুজনকে সিলেট নিয়ে আসা হবে এবং গ্রেফতারকৃত দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।