Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে চিনিসহ চোরাই পণ্য বহনে কারবারিদের অভিনব তিন কৌশল

admin

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সিলেটে চিনিসহ চোরাই পণ্য বহনে কারবারিদের অভিনব তিন কৌশল

Manual1 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। অনেক অফিস-জায়গায় কমেছে অনিয়ম-দুর্নীতি। গ্রেফতার ও শাস্তির ভয়ে অনেকটা আড়াল হয়েছেন অপরাধীরা। কিন্তু কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না সিলেটের চোরাকারবারিদের।

Manual4 Ad Code

ভারতীয় গরু, মহিষ, চিনি, রসুন, শাড়ি ও প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পণ্য সীমান্তের চোরাই পথ দিয়ে নিয়ে আসছেন দেদারছে। পরে সেগুলো সিলেট থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশজুড়ে।

সিলেটে আসার পর চিনিসহ চোরাই পণ্যগুলো বহনে কারবারিরা এবার বেছে নিয়েছেন নতুন ৩ কৌশল। সেগুলো হচ্ছে- ট্রাকে বালুর নিচে লুকিয়ে, বাসে বাহকের সঙ্গে দিয়ে ও কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতে করে বহন। তবে এসবের পরও নিজস্ব ও গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাচ্ছে পুলিশ এবং বিজিবি। নিয়মিত অভিযানে ধরা পড়ছে কোটি কোটি টাকার চোরাই পণ্যের চালান। সর্বশেষ বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে বিজিবি অভিযান চালিয়ে কানাইঘাট উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় একটি ট্রাকে তল্লাশি করে বালু সরিয়ে জব্দ করেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার চিনি। বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার মো. আসাদুন্নবি (পিএসসি) জানান- বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে সুরাইঘাট বিওপি’র একটি টহল দল কানাইঘাট উপজেলার মালিগ্রাম নামক স্থানে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে একটি সন্দেহজনক ট্রাক থামিয়ে এতে থাকা বালুর নিচ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ভারতীয় চোরাই চিনি জব্দ করেছে।

এটি ছাড়াও পরিচালিত বেশিরভাগ অভিযানে ট্রাকে বালুর নিচ থেকে কোটি কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে পুলিশ-বিজিবি। এছাড়া বাসে ও কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতে করেও সিলেটের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চোরাই পণ্য। জানা গেছে- গত ২১ সেপ্টেম্বর সিলেটের শাহপরাণ থানাধীন পীরেরবাজার এলাকায় জাফলং থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকার ৩৪ বস্তা চিনি জব্দ করে থানাপুলিশ। এসময় দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তারা বাহক ছিলেন। অপরদিকে, সিলেটের শেরপুর এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া ২৫০ বস্তা ভারতীয় চিনিবোঝাই সুন্দরবন কুয়িরায় সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যান (ঢাকা মেট্টো-ট ১৪-০৭৬২) ৪ অক্টোবর রাতে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসদরের জানাইয়া এলাকা থেকে জব্দ করে থানাপুলিশ। পরে এ ঘটনায় সিলেটের ওসমানীনগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় গাড়িচালককে আটক করেছে পুলিশ। তবে মূল হোতারা এখনো আটক হননি।

Manual2 Ad Code

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলায় গত এক মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চোরাই চিনি জব্দ করেছে যৌথ বাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। বিজিবি জানায়, সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে গোয়েন্দা তৎপরতাসহ নিয়মিত চোরাচালানবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে তারা। এদিকে, ৫ আগস্টের আগে সীমান্ত এলাকাসহ সিলেটজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা জড়িত ছিলেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা এসব কর্মকাণ্ড চালাতেন। তবে শেখ হাসিনার পর তারা সবাই পলাতক। তারপরও থামছেন সিলেট সীমান্তের চোরা কারবার। অভিযোগ রয়েছে- হাত-বদল হয়ে বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কতিপয় নেতাকর্মী এতে জড়িয়ে গেছেন।

Manual4 Ad Code

এখন পর্যন্ত সিলেটে চিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক ছাত্রদল নেতার ভাই ও এক যুবদল নেতা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহপরাণ থানাপুলিশের একটি দল বটেশ্বর বাজারের পান্না মার্কেটে তামাম বস্ত্রালয়ে অভিযান চালিয়ে প্যাকেটজাত করার সময় ৫০ বস্তায় মোট ২ হাজার দুইশত ষাট কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করে। যার আনুমানিক বাজার মুল্য দুই লক্ষ একাত্তর হাজার দুইশত টাকা। এসময় তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- খাদিমপাড়া ইউনিয়নের কানুগুল গ্রামের সুফিয়ান আহমেদ, জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল এলাকার অঞ্জন রায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কলিম উদ্দিন ও জৈন্তাপুরের পশ্চিম ঠাকুরের মাটি এলাকার মৃত লুৎফুর রহমানের ছেলে মো. আলাউদ্দিন। এর মধ্যে সুফিয়ান আহমদ সিলেট সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রুফিয়ান আহমেদ সবুজের ভাই।

Manual1 Ad Code

অপরদিকে ৫ অক্টোবর বিকালে সিলেটের শাহপরাণ থানাপু‌লিশের এক‌টি টহল দল সিলেট-তামা‌বিল মহাসড়কের সুরমা গেট থেকে শাহপরাণ মাজার গেটের দিকে যা‌চ্ছিল। মাজার গেটের সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে জৈন্তাপুরের দিক থেকে আসা এক‌টি প্রাইভেট কার দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় মাজার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লেগুনাকে ধাক্কা দেয় প্রাইভেট কারটি। পরক্ষণে প্রাইভেট কারের চালক দ্রুত পালিয়ে যান। তবে প্রাইভেট কারে থাকা যুবদল নেতা ফয়জুল ইসলামকে ভারতীয় অবৈধ প্রসাধনীসহ আটক করেন স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ এসে প্রাইভেট কার তল্লাশি করে অবৈধভাবে ভারত থেকে নিয়ে আসা ৪ হাজার ৩০০টি প্রসাধনী সামগ্রী জব্দ ও যুবদল নেতাকে আটক করে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম-সেবা) বলেন- সিলেট মহানগরে চিনিসহ চোরাই পণ্যের কারবার ঠেকাতে নিয়মিত কাজ করছে আমাদের পুলিশ। এটি ঠিক যে- চোরাচালান পণ্যের সঙ্গে থাকা বাহকরা ধরা পড়ে, মূল হোতারা বেশিরভাগ সময় থেকে যায় অন্তরালে। তবে মহানগর পুলিশের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে- যেন এখন থেকে সব জব্দ-মামলার তদন্তকালে চোরাচালানের মূল হোতাদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

শেয়ার করুন