Beanibazarer Alo

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে জোরালো হচ্ছে অতিউৎসাহীদের গ্রেপ্তারের দাবি

admin

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:৩৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:৩৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সিলেটে জোরালো হচ্ছে অতিউৎসাহীদের গ্রেপ্তারের দাবি

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) দিনভর সিলেট উত্তাল ছিল বিক্ষোভে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। বন্ধ থাকে দোকানপাট, শপিংমলসহ অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যান চলাচলও ছিল সীমিত। যেন পুরো নগরী পরিণত হয় একটুকরো ফিলিস্তিনে।

সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বের হন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও ইসলামিক সংগঠন, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা। বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ইসরায়েলের চলমান হামলা ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার একটি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, বন্দরবাজার, দরগাগেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিল ও মানববন্ধন হয়। নার্সিং কলেজ, মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামীয়ার কর্মীরাও এতে অংশ নেন।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের পরিচালিত বর্বরোচিত হামলা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারা জাতিসংঘ, ওআইসি, আরব লিগসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরব ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করেন।

তবে এই আবেগঘন আন্দোলনের আড়ালে ঘটে যায় একাধিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকায় অবস্থিত কেএফসি রেস্টুরেন্ট ও দরগাহ গেইটে বাটার একাধিক শোরুমে হামলা চালায় একদল সুযোগসন্ধানী যুবক। নগরীর কয়েকটি বাটার শোরুমে ভাঙচুরের পাশাপাশি জুতা লুটের ঘটনাও ঘটে। কেএফসিতে ভাঙচুর করে নষ্ট করা হয় কোমল পানীয়। হামলাকারীরা দাবি করেন, এসব প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলি মালিকানাধীন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়ের লোদী এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সিলেটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল সুযোগ নিচ্ছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিকে বিকৃত করে তারা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট চালিয়েছে। অবিলম্বে ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

এসময় সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “যারা হামলা-ভাংচুর করছে তারা ডাকাত। তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করছে, তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া উচিত।”

সাথে ছিলেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজিবুর রহমান নজিব, সাংগঠনিক সম্পাদক দেওয়ান জাকির, জিয়া মঞ্চ মহানগর শাখার আহ্বায়ক মাসুদ আহমদ কবির, তারেক আহমদ খান প্রমুখ।

Manual7 Ad Code

ঘটনার পর সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএমসিসিআই) ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স হামলা ও লুটপাটের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এসএমসিসিআই সভাপতি খায়রুল হোসেন বলেন, “এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির ওপরও আঘাত।”

সিলেট চেম্বার সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু বলেন, “ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদ ধ্বংস করে প্রতিবাদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

Manual6 Ad Code

সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীও এক বিবৃতিতে হামলাকারীদের ‘তৌহিদি জনতার ছায়ায় লুকানো দুষ্কৃতিকারী’ বলে আখ্যা দিয়ে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলা শাখাও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার বিরুদ্ধে মাঠে নামে। তারা নগরজুড়ে মাইকিং ও পথসভা করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে স্লোগান দেন।

Manual6 Ad Code

ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে সিলেটের জনসাধারণের এই ঐক্য ও আবেগ প্রশংসনীয় হলেও, আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে সব মহলে। এখন সবার প্রত্যাশা—প্রতিবাদের ভাষা হোক শান্তিপূর্ণ ও আইনের আওতায়।

এদিকে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা কেবল সিলেট নয় চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ বলছে এই হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ চলছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি স্পষ্ট করে দেন, সরকার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে বাধা দেয় না, তবে অপরাধ বরদাশত করা হবে না।

Manual4 Ad Code

শেয়ার করুন