সিলেট বিএনপিতে তারেক রহমানের ‘আত্মতৃপ্তি’
২৭ নভে ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের ক্ষমতাকালে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত রাজনৈতিক দল ছিলো বিএনপি। অবিরত হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়েও সিলেটসহ সারা দেশে বৃহৎ এ দল পালন করে গেছে টানা আন্দোলন-কর্মসূচি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পর বাঁধাহীনভাবে এবার ব্যতিক্রমী কৌশলে আয়োজন করছে বিভিন্ন কর্মসূচির।
এরকম একটি হলো- ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক’ বিভাগীয় কর্মশালা। প্রতিটি বিভাগে বিএনপি এমন আয়োজন করছে। এ ক্ষেত্রে সিলেট তৃতীয়। এর আগে দুটি বিভাগীয় শহরে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সিলেট বিভাগের তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত সকল ইউনিটের ৫ জন করে নেতা প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় কর্মশালায় প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. অধ্যাপক মওদুদ হোসেন পাভেল।
কর্মশালায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১ ঘণ্টা বক্তৃতা করেন তিনি। আলোচনাকালে নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন। দলীয় নেতাদের প্রতি দেন দেশ ও জাতির স্বার্থ এবং কল্যাণমূলক গুরুত্বপূর্ণ সব নির্দেশনা। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সিলেটের আয়োজন নিয়ে বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বিএনপির শীর্ষ নেতা।
তারেক রহমান বলেন- ‘আজকের প্রধান প্রশিক্ষক ডা. অধ্যাপক মওদুদ হোসেন পাভেল বগুড়ার মানুষ। তিনি যখন বললেন- অনুষ্ঠিত বাকি কর্মশালার মধ্যে সিলেটেরটি-ই সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, তখন আমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি। কারণ- সিলেটের সঙ্গে আমার অন্যরকম সম্পর্ক।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন- স্বৈরাচাররা পালালেও দেশে এখনও তাদের ষড়যন্ত্র চলছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিভিন্নভাবে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। তাই গণতন্ত্র রাখা গেলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। মানুষের ভোটের অধিকার অর্থাৎ গণতন্ত্র অব্যাহত রাখা গেলে দেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচাররা পালিয়ে গেছে কিন্তু তার লেজ রয়ে গেছে। সবাইকে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা সকল দলের পক্ষ থেকে ৩১ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। এটির মধ্যে রাষ্ট্রকাঠামোর অধিকাংশই আছে। আরো যত প্রস্তাব আসবে তা যুক্তি সংগত হলে যুক্ত করা হবে। আজকে বিভাগ পর্যায়ে ৩১ দফা নিয়ে আলোচনার পর জেলা, ইউজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বইয়ে অনেক কিছু সুন্দরভাবে লিখা থাকে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে হয় মানুষকে। তাই ভালো নিয়ত নিয়ে ভালো নিয়ত থাকলে আমরা ভালো কিছু করতে পারব।
তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র চলার পথে বিভিন্ন ভাবে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। বিগত ১৬ বছরে বহু মানুষ গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। জুলাই-আগস্টে দেড় হাজারেরও বেশী মানুষ শহীদ হয়েছেন। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন সম্ভব। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে বজায় রাখলে জবাবদিহিতা তৈরি হবে। এজন্য যেকোনো মূল্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখব।
বিভাগীয় কর্মশালায় তারেক রহমান বলেন, পতিত স্বৈরাচারের সময়ে যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে তারা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তি, দেশের মানুষ আমাদের সাথে রয়েছে। মানুষ মনে করে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নিরাপদ। এজন্য মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। জনগণের এই আস্তাকে ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার।
তিনি বলেন, আজকে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দল কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ ও দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আসুন আমরা মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিজেদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।পলাতক স্বৈরাচারের অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করে যারা টিকে আছেন তারা আগামীতেও টিকে থাকবেন বলে আমি মনে করি। বিএনপির শীর্ষ নেতা জোর দিয়ে বলেন, আমাদেরকে গণতন্ত্রের পক্ষে থাকতে হবে, গণতন্ত্রকে চালু রাখতে হবে। যেখানে যেটাই নির্বাচন হউক সেটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে হতে হবে।
উল্লেখ্য, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কৃতিকন্যা জুবাইদা রহমান তারেক রহমানের সহধর্মিনী। জুবাইদার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল প্রয়াত মাহবুব আলী খান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন।