৩০০ বছরের ঐতিহ্য ভাটিপাড়া জমিদার বাড়ি মসজিদ
২৯ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৩ অপরাহ্ণ


দিরাই সংবাদদাতা:
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে রয়েছে বড় তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ। মসজিদের ভেতরে প্রতিদিন একসাথে ৫০/৬০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। দিল্লির মসজিদের আদলে এটি ১৭ শতকের শেষের দিকে নির্মিত হয়। ৩০০ বছর ধরে দিরাই উপজেলায় ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে আজও হাওরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। ভাটিপাড়া জমিদার বাড়ি মসজিদ নামেই পরিচিত এই মসজিদটি।
জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ভাটিপাড়া জমিদারদের এলাকা ছিলো বর্তমানের দিরাই, জামালগঞ্জ, শাল্লা এবং তাহিরপুর এই চার উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে। এই এলাকা মূলত হাওর কেন্দ্রিক। ভাটিপাড়ার মানুষদের কাছে জমিদার বাড়ীর নাম ‘সাব বাড়ী’ বা সাহেব বাড়ী হিসেবে পরিচিত। ভাটিপাড়ার জমিদারদের উদ্যোগে দিল্লির জামে মসজিদের আদলে ভাটিপাড়া গ্রামে পিয়ান নদীর পাশে ৩০০ বছর পূর্বে ১৭ শতকের শেষের দিকে নির্মাণ করা হয় মসজিদটি তবে স্থানীয় অনেকের ধারণা ১৮৩০ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
চুন-সুরকির তৈরি এ মসজিদের ওপরে রয়েছে বিশাল আকারের তিনটি গম্বুজ। রয়েছে ছোট-বড় ১৬টি মিনার।সাদা মার্বেল ও সিরামিক পাথরে ফুল,লতাপাতা ও প্রকৃতির নান্দনিক নকশা ও কারুকাজ করা হয়েছে মসজিদের ভিতর ও বাহিরের দেয়ালে। মসজিদের বারান্দা,ছাদ,পিলার,গম্বুজ,মেঝেসহ সবখানে রয়েছে শৈল্পিক নির্মাণশৈলীর পরিচয়। এমন দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে সাজানো মসজিদের সামনের অংশ মসজিদের ভেতরে প্রবেশের জন্য আছে সাতটি দরজা,দরজার ওপর নজরকাড়া নকশা। মসজিদটির সামনে বিশাল পুকুর,পুকুরে নিস্তরঙ্গ পানির বুকে মসজিদের ছায়া। হাওর ও পিয়াইন নদীর তীরে ১০ বিঘা জমির উপর নির্মিত ঐতিহাসিক এই মসজিদ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে ভাটি অঞ্চলের মুসলিম ইতিহাস ঐতিহ্যের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জমিদার ফতেহ মোহাম্মদ আলিফাত্তাহ একসময় এই বিশাল এলাকাজুড়ে জমিদারত্ব ছিল । তিনিই খরস্রোতা পিয়ান নদীর পাড়ে নির্মাণ করেন তিন গম্বুজওয়ালা বিশাল মসজিদটি।মসজিদটিতে কোনো ধরনের পাথর ও রড ব্যবহার করা হয়নি। কেবল ইট আর চুনাপাথরের আস্তরণ দিয়ে তৈরি করা হয়।
এই মসজিদটি নির্মাণ করতে নদীর পাড়ে তিনটি ইটভাটাও স্থাপন করা হয়েছিল। যেখানে সনাতন পদ্ধতিতে ইট তৈরি করে মসজিদের গায়ে স্থাপন করা হতো। ভারত থেকে হাতির পিঠে করে মসজিদের পাথরের আস্তরণ এনে ব্যবহার করা হয়েছিল। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ নির্মাণ করতে বেশ বছর সময় লেগেছিল।
ভাটিপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন,মসজিদটির যখনি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল তখন ছিল চুনসুরকির আস্তর, পরে সিমেন্ট আবিস্কারের পর পুরাতন আস্তর ফেলে নতুন করে আস্তর করা হয়। তখন এক টাকায় তিন বেগ সিমেন্ট পাওয়া যেত যা কলিকাতা হতে জাহাজে করে আনা হয়েছিল।
মসজিদে নামাজরত মুসল্লিরা বলেন,আমাদের ভাটি অঞ্চলে এটাই একমাত্র পুরোনো মসজিদ এবং নান্দনিক নকশা ও কারুকাজ করা। মসজিদটিতে নমাজ পড়লে হৃদয়ে খুব প্রশান্তি আসে।এর সুন্দর্য যত দেখি ততই ভালো লাগে বলে তারা জানান।