Beanibazarer Alo

  সিলেট     সোমবার, ১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া গিয়ে ৩শ যুবক বন্দি

admin

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৪:৪৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৪:৪৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া গিয়ে ৩শ যুবক বন্দি

Manual4 Ad Code

প্রবাস ডেস্ক:
মালয়েশিয়া রাজধানী কুয়ালালামপুরের সালাক সালাতান নামের একটি ক্যাম্পে বাংলাদেশি তিন শতাধিক যুবক বন্দি রয়েছেন। তারা বিভিন্ন দালালেল মাধ্যমে সে দেশে গিয়েছিলেন। তারা ৫/৬ মাস আগে সেখানে যান। তাদের মধ্যে অনেকেই এসব দালালের মাধ্যমে সহায় সম্বল বিক্রি করে চার মাস আগে মালয়েশিয়া গিয়েও আটকা পড়ে আছেন ওই ক্যাম্পে। তাদের বন্দি থাকা কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

বন্দীরা ভিডিও বার্তায় বলেন, আমরা বেশ কয়েক মাস যাবৎ এই ক্যাম্পে আটকা আছি। আটকদের মধ্যে একজন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের আজমত আলীর ছেলে লাঁলচাদ ইসলাম। তিনি সাহেবনগর গ্রামের আদম পাচারকারি সুরজ আলীর মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ৩ মাস আগে গেছেন মালয়েশিয়াতে। কাজিপুর গ্রামের গোলাম বাজার এলাকার বজলুর ছেলে মাজেদ মাস্টারের হাতে ৫ লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া যান কাজিপুর গ্রামের কাদের হেলালের ছেলে আনারুল ইসলাম। তিনি জানান, মাজেদ মাস্টারের হাত ধরে এলাকার ৩ শতাধিক যুবক মালয়েশিয়া এসেছেন। সবার ভাগ্যে জুটেছে একই অবস্থা।

মোহাম্মদ পুর গ্রামের ইয়ারুল ইসলামের ছেলে জমিরুল ইসলাম মালয়েশিয়া গেছেন সাহেবনগর গ্রামের দালাল আব্দুল্লাহর মাধ্যমে। তার কাছ থেকে নিয়েছে ৫ লাখ টাকা। জমিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৫ মাস আগে মালয়েশিয়াতে এলেও এখন পর্যন্ত কোনো কাজ দেয়নি। সাপ্লাই ভিসা দিয়ে এখন আটক রেখেছে এই ক্যাম্পে। আমরা এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এখানে খাওয়া নেই, পানি নেই। ছোট্ট রুমে গাঁদাগাদি করে রেখেছে। কিছু বললে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।

মুজিবনগর উপজেলার পুরন্দরপুর গ্রামের বাহাদুর আলী বলেন, আমি গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের আদম পাচারের দালাল নাড়া মেম্বরের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া এসেছি। প্রায় ৪ মাস এই মানব ক্যাম্পে আটকা পড়ে আছি। আমরা খাওয়ার না খেয়ে মারা যাব। আবার বাড়িতেও ঋণের কিস্তি। কথা বললে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। শুধু তুহিন, বাহাদুর, আনারুল, জমিরুল বা লালচাদ ইসলাম নয়, ওই ক্যাম্পে আটকা পড়ে আছে প্রায় ৩ শতাধিক যুবক।

পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে জমিজমা বিক্রি করে, ঋণ-ধারদেনা করে দালালদের মাধ্যমে এসেছেন মালয়েশিয়ায়। একমাত্র সম্বল ভিটে মাটির বিক্রি করে তারা জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন। মালয়েশিয়া গেলেও আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) না পাওয়ায় কর্মহীনভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

মালয়েশিয়ায় থাকা ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, স্থানীয় গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের কেএনএসএইচ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক মাজেদ মাস্টার, কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে ন্যাড়া, বালিয়াঘাট গ্রামের আনিসুল হক মাস্টারের ছেলে শোভন, সাহেবনগর গ্রামের সুরজ ও তার ভাই আওয়াল এবং ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিমের মাধ্যমে ঢাকায় নাভিরা ও মুসাকলি এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। গেল ৩-৬ মাসেও দালাল চক্রের সদস্যরা কোন কাজ দিতে পারেনি। দালাল চক্রের পক্ষ থেকে প্রথমে খাবার ও পানি দেওয়া হলেও এখন তা বন্ধ করে দিয়ে টাকা দাবি করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি।

Manual7 Ad Code

মালয়েশিয়াতে আটকে থাকা একাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কেউ দিয়েছেন জমি বন্ধক রেখে, কেউ সুদের উপরে টাকা নিয়ে, কেউ বা তুলেছেন ঋণের কিস্তি। এখন যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তারা বাড়ির উপর এসে টাকা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।

Manual3 Ad Code

কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, আমার এলাকার অনেক যুবক দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। তিন মাস যাবত কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা তাদের পরিবারের পাশে আছি সব সময়।

দালাল চক্রের সদস্য সাহেবনগর গ্রামের বাবলু জানান, আমি চার জনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে মুছা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছি। ৩/৪ মাস পাঠানো হলেও আমার লোকজনকে কোনো কাজ দেইনি এজেন্সি মুসা এন্টারপ্রাইজ। আজকে আমি তাদের খাবারের জন্য পাঁচ হাজার করে টাকা পাঠিয়েছি।

Manual7 Ad Code

মানব পাচারকারী আলোচিত দালাল গাংনী উপজেলার সাহেব নগর গ্রামের সুরুজ আলীর মোবাইলে কল করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মানব পাচারকারী এজেন্সি মুছা এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু মুছার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা থানায় অথবা আমার নিকট অভিযোগ করলে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার এস এম নাজমুল হকবলেন, আমরা প্রাইমারি ইনভেস্টিগেশন শুরু করেছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Manual1 Ad Code

শেয়ার করুন