অভিশপ্ত শিক্ষা পদ্ধতি কি সংশোধন করা যায় না?
২৭ মার্চ ২০২৪, ১০:৫২ অপরাহ্ণ
এডভোকেট মো. আমান উদ্দিন:
দুর্ভিক্ষ প্রবণ দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে সাধারণ জনগনকে চাঙ্গাঁ দেখাতে চতুরতার আশ্রয় গ্রাহণ করল সরকার। টাকা ছাপানোর কারখানা “টাকশাল” কর্তৃপক্ষকে বলা হল, টাকা ছাপিয়ে সাধারণ জনগনকে ক্ষেপে উঠার আগে দেশের সাধারণ জনগন প্রত্যেককে ৫০ লক্ষ টাকা নিজস্ব হিসাবে জমা দিয়ে তাদেরকে বুঝানো হয় যেন, আপনারা সকলেই তো ধনি। প্রত্যেক শ্রমজীবি, ব্যবসায়ী, সবজি বিক্রেতা, কৃষক, সবার হিসাব নং এ জমা হতে লাগল ৫০ লক্ষ টাকা করে। রাজ্যে সকলেই ধনির তালিকাভুক্ত হল। আয়েশী জীবন-যাপন করতে নিজ নিজ পেশা ছেড়ে দিল। ধনি লোকের পারিবারিক প্রয়োজনে যখন বাজারের সওদাপাতি ক্রয় করতে গেল, তখন তাহারা দেখতে পেল বাজারে লোক নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নেই। ধনি লোকেরা খালি হাতে বাড়ি ফিরল। দেশে দেখা দিল, সার্বিক অব্যবস্থাপনা তথা দুর্ভিক্ষ। সকলের হাতে টাকশাল থেকে ছাপানো টাকা আছে। মদ্রানীতির আলোকে টাকশাল থেকে টাকাগুলো ছাপানো হয়নি। হালের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবাই এ+। কিন্তু কর্ম ক্ষেত্রে বাস্তব অবস্থা উপরোক্ত গল্পের সাথে তুলনীয়।
১৯৮৫ সালে মাধ্যমিক পাশ করেছি। তদানিন্তন সময়ে ফলাফল ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হত, ৩৩৩+ মার্ক পেলে ৩য় শ্রেণি, ৪৫০+ মার্ক পেলে ২য় শ্রেণি, ৬০০+ মার্ক পেলে ১ম শ্রেণি এবং সর্বোচ্চ মার্ক প্রাপ্ত শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ১ম থেকে ১০ম পর্যন্ত প্রাপ্ত ছাত্র ছাত্রীকে রাষ্ট্র বিশেষ সম্মাননা পদকে ভূষিত করিত। এমনকি রাষ্ট্রের প্রধান কর্তা ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্রিয় সফরে যখন যেতেন, তাদেরকে সফর সঙ্গী করা হত। রাষ্ট্র ব্যবস্থা তখন ছাত্রদের ফলাফল নিয়ে গর্ব করিতো। তখন ছাত্র ছাত্রীরা পরীক্ষাতে ভাল ফলাফল করার জন্য, মেঘ বৃষ্টির মধ্যে ভাল শিক্ষকদের কাছে প্রতিটা ছাত্র পড়াশোনা শিখতে যেত। এত কষ্ট করে পড়ার পরেও ফলাফল বের হলে দেখা যেত ৩০% বা ৩৫%, ক্ষেত্র বিশেষ ৮-৯% পাশ করিত। যোগ্যতা অর্জন করে কর্ম ক্ষেত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজ নিজ পেশায় উন্নত জীবন গড়ার আশা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে বিচরন করিত। তাদের বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত থাকার কারণে অনৈতিক কাজ করা সম্ভব হত না। তখনকার দিনে ঘুষ দুর্নিতি বাইনোকোলার দিয়ে খোজে পাওয়া যেত না। কেননা, তাহারা নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষিত জাতি ছিলেন। সাধারণ জনগন তাদেরকে সমিহ, শ্রদ্ধা ও ভালবাসার জালে আটকে রাখিত। আর এসব শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সমাহার বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যতম সভ্য রাষ্ট্র সুইজারল্যান্ড, মালেশিয়া, কুয়েত, কাতার এর মত দেশের সাথে তুলনা করা অমূলক হত না। কিন্তু হায়! বর্তমানে কি কোন শিক্ষা ব্যবস্থা আছে?
কালের বিবর্তনে বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই আছে। পরীক্ষাতে উপস্থিত হলে এবং সাদা কাগজে কাল কালি দিয়ে যা ইচ্ছা তা লিখবেন। শিক্ষক মহোদয়কে সম্পূর্ণ লিখার উপর মূল্যায়ন করে তাহাকে ৯৯.৯৯% পাশ দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। কোন শিক্ষক অকারণে নিজের বিবেককে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে ছাত্রকে যদি অকৃতকার্য রাখেন, শিক্ষককে শোকজ বা ভর্ৎসনার শিকার হতে হবে। পশ্চিমা বিশে^ গ্রেডিং ব্যবস্থা চালু আছে। শিক্ষককে এ প্লাস, এ,এ-,বি,সি, এর ব্যবস্থা করে পাশ দেখাতেই হবে ছাত্রকে। সুতরাং ছাত্রের চেয়ে শিক্ষকের দায়বদ্ধতা বেশী। হালের ছাত্রদের বাড়ি ঘরে গেলে দেখবেন, ছাত্রের বই-খাতা, টেবিল,সেল্ফ, চেয়ার পৃথকভাবে পড়ার পরিবেশ বান্ধব রিডিং রোম কোন কিছুই নেই। মাতা-পিতাকে গর্ব করে এ যুগের ছাত্ররা বলে থাকেন, ফলাফল তো এ+ বা ৮০ এর উর্ধে মার্ক পাব। তাহলে অযথা চিন্তা না করাই ভাল।
শিক্ষা ব্যবস্থার নীতিনির্ধারনির সাথে যাহারা জড়িত, তাহারা কিন্তু প্রভাবশালী। তাদের ছেলে মেয়েরা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে তেমন পরিচিত নহে। পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে লেখা পড়া শেষ করে দেশে এসে ক্ষমতায় বসাবে কৌশলে। সাধারণ জনগনকে কিভাবে শাসন-শোষন করতে হয়, তা কিন্তু অভিভাবকরা কৌশলে অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। আর এদের সংখ্যা শতভাগ। তবে উন্নত দেশে লেখাপড়া করাতে খরচ বহন করে থাকেন কিন্তু সাধারণ জনগন। প্রভাবশালী ও সাধারণ জনগনের মৃত্যু কিন্তু একই ধরনের স্বাদ গ্রহন করতে হবে। কোরআন, হাদিসের ভাষ্য মতে ৬টি জগতের মধ্যে ৫টি জগৎ থেকে স্থানান্তর হতে হবে প্রত্যেককে। প্রথম জগত রুহ, ২য় জগত মাতৃগভর্, ৩য় জগত দুনিয়াবি জিন্দেগী (জেনে রাখা ভাল এ জগতে আসার সময় আযান,তাকবির হয়ে গেছে। মৃত্যুর পর যদি মুসলমান হয়ে থাকেন নামাজ শুরু হতে হয়ত সর্বোচ্চ ১ মিনিট।) ধরে নিতে পারেন, এই ১ মিনিট-ই আপনার জীবন। ৪র্থ জগত কবর, শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার আগ পর্যন্ত, ৫ম জগত বিচার দিবস এবং ৬ষ্ঠ জগত বা স্থায়ী ঠিকানা বিচারের আলোকে জান্নাত বা জাহান্নাম। কর্মের ফলাফলের ভিত্তিতে স্বয়ং আল্লাহ এ ঠিকানা নির্ধারণ করে থাকেন। প্রচার মাধ্যমে একজন মহিলার বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় হতাশ হয়ে আর্তনাদ করেছেন। দেশবাসী নিশ্চয়-ই দেখেছেন। এ কান্নার সাথে সাধারণ জনগনের শতভাগ সমর্থন বিদ্যমান। শিক্ষকবৃন্দ থেকে সচেতন শিক্ষিত সমাজের প্রতিধ্বনি শুনা যায়। এ আর্তনাদের সাথে একাতœœতা প্রকাশ করতে কিন্তু হায়…..! ক্ষমতা ক্ষনস্থায়ী। অভিপ্ত জীবন চীরস্থায়ী। দুইজন আইনজীবি মাহবুব আলম, ও সদ্য পরলোকগত গোলাম কিবরিয়া টিপু। নিশ্চয়ই তাদের আত্মীয় স্বজন কমেন্ট বক্সে মৃত্যুর পর সাধারণ জনগনের মন্তব্যগুলো দেখেছেন। তাদের-ই উত্তরসুরীরা, সমাজ, দেশবাসীর কাছে লজ্জিত হওয়ার কথা। শুভ বুদ্ধির উদয় হউক। সাধারণ জনগনের মনের কথা বুঝে কর্র্তৃৃপক্ষ ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তক পরিবর্তন করে পূর্বের শিক্ষনীয় বিষয়গুলো জাতীয় কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করে দেশের জনগনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হউন। আর্তনাদ হয়ত না শুনলেও আমাদের আর্তনাদ সর্বশক্তিমান শুনবেন। বিচার দিবসে হাজির হব (যদি বিশ্বাসী হয়ে থাকেন)। এই আর্তনাদ তুলে ধরে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার সহযাত্রী হব। সেখানে তো আর চোখ রাঙ্গাঁনি, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আর্মি দিয়ে ভয় দেখিয়ে কন্ঠরোধ করা যাবে না। কোন জাতিকে ধ্বংশ করতে হলে, তাহার শিক্ষা ব্যবস্থাকে-ই প্রথমে ধ্বংশ করতে হবে। ধ্বংশের দায়ভার থেকে বাহির হয়ে সাধারণ জনগনকে মূল্যায়ন করে তাদের মতামত গ্রহণ করুন।
লেখক: সভাপতি- সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।