ফিরেদেখা- কুলসুমা’র হাতে মেহেদী চোখে জল
১০ এপ্রি ২০২৪, ০৭:৪১ অপরাহ্ণ
আব্দুল খালিক:
হাতে মেহেদী, চোখে জল নিয়ে অপেক্ষার প্রহর আর ফুরাচ্ছেনা হতভাগী কুলসুমার। ভালোবাসাহীনতায় তার হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরী হয়েছে সেগুলো নিয়ে আয়নার সামনে আর দাঁড়াতে চায়না সে। সম্প্রতি সময় মাসের বেশীরভাগ সময় কাটে সিলেটের আদালতের বারান্দায়, আইনশৃংখলা বাহিনীর নিয়মিত জিজ্ঞাসার জবাব দিতে-দিতে বড় ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত কুলসুমা। জীবনের প্রতি অনিহা, ভাগ্যের প্রতি বিরক্তি নিয়ে সে যেভাবে বেঁচে আছে-তাকে বেঁচে থাকা বলেনা। বিয়ানীবাজারের দুবাগ ইউনিয়নের চরিয়া গ্রামে কুলসুমা বেগমের বাড়ি। কি হয়েছে কুলসুমারঃ প্রতিবেশী গয়লাপুর গ্রামের ময়নুল ইসলাম ময়না মিয়ার পুত্র সৌদি প্রবাসী বাহার উদ্দিন (৩২) এর সাথে পারিবারিকভাবে আক্দ সম্পন্ন হয় কুলসুমার। টেলিফোনে বিয়ের ওই ‘বড় অধ্যায়’ শেষ হলেও স্বামী বাহার সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে, আর স্ত্রী কুলসুমা গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন। কথা ছিল-স্বামী দেশে ফিরলে প্রীতিভোজ হবে, সানাই বাজবে। কিন্তু প্রাণের স্বামী দেশে ফেরার আগেই ভূল বুঝেন স্ত্রীকে। কুলসুমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাকি সারাক্ষণ ব্যাস্ত থাকতো, এ নিয়ে দু’জনের লাজুক মান-অভিমান হয়েছে বহুবার। তবে দু’জনার কাছে আসার আকুতি সব অভিমান দূরে টেলে দেয়। ২০১৩ সালের ১৯ এপ্রিল রাতে ছিল বাহার-কুলসুমার বাসর শয্যা। পারিবারিক সিদ্ধান্তমতে, ওইদিন দুপুরে ছিল প্রীতিভোজ। তবে তা আর হলনা, আচমকা দমকা হাওয়ায় সবকিছু লন্ডভন্ড। বাহারের লাশ পাওয়া গেল কুলসুমাদের বাড়ির পাশে কুশিয়ারা নদীতে আর ‘অপবাদ নিয়ে’ কুলসুমার ঠাঁই হয়েছিল সিলেটের কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্টে।
বর্তমানে কুলসুমা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তবে মুক্ত জীবনের তিক্তস্বাদ তার ভালো লাগেনা। পরিবারের অপর সদস্যরা আদালত কর্তৃক দুশী সাবস্ত হয়ে কারাগারে জীবন যাপন করছেন। তারা দীর্ঘসময় কারাগারে কাটিয়ে ফের আইনশৃংখলা বাহিনীর ধরপাকড়ে বিপর্যস্ত তারা। নিজের কারনে পরিবারের এমন দূর্দিন তার ভালো লাগেনা। তাই বিষন্ন বদনে, মলিন মুখে সারাক্ষন প্রস্তুত থাকেন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সুত্রে জানা যায়, প্রবাসী বাহার খুনের ঘটনায় এজাহার নামীয় আসামী আলতাফ হোসেন (৩০)কে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ। ২৪ ফেব্রæয়ারী শেওলা জিরো পয়েন্ট নামক স্থান থেকে তাকে গ্রেফতার করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে সিলেটের সিনিয়র চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করেছিল। প্রাথমিকভাবে সিআইডি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে বাহার উদ্দিনের খুনের ঘটনা কৌশলে এড়িয়ে যেতে চাইছে বলে সূত্রে জানা গিয়ে ছিলো। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের চরিয়া কুশিয়ারা নদীর খেয়া ঘাট থেকে সৌদি আরব প্রবাসী বাহার উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত প্রবাসী বাহার উদ্দিন (৩২) একই ইউনিয়নের গয়লাপুর গ্রামের ময়নুল ইসলাম ময়না মিয়ার পুত্র। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আলতাফসহ ৯ জনকে আসামী করে বিয়ানীবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সূত্র জানায়, বাহার উদ্দিন ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল সৌদি আরব থেকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে বাড়ীতে আসেন। এপ্রিল মাসে তার বিয়ের পীড়িতে বসার কথা ছিল। পাত্রী দুবাগ আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষিকা কুলসুমা বেগম। সৌদি আরবে থাকাবস্থায় টেলিফোনে তার সাথে ওই পাত্রীর আকদ সম্পন্ন হয়। এরপর থেকে বাহার তার স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করলে প্রায়ই তার মোবাইল ব্যস্ত পাওয়া যায়। এনিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয় বলে সূত্রে জানা গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সিআইডি এ.এস.পি জয়নাল আবেদীন জানান, খুনের রহস্য উদঘাটন করে অভিযোক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করলেন আদালত দীর্ঘ স্বাক্ষী প্রমান ও পারি পাশিকতা শেষে প্রদত্তর রায়ে ২জন আসামীকে যাবতজীবন কারাদন্ড ও কুলসুমাকে খালাসের আদেশ প্রধান করেন। বর্তমানে আসামীরা সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।