মৃত ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বাবার শুয়ে থাকার দৃশ্য নাড়া দিয়েছে সবাইকে
০৮ জুন ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ণ
বড়লেখা সংবাদদাতা:
‘ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি। করুণ চোখে চেয়ে আছে সাঝের ঝরা ফুলগুলি…’-কবি নজরুলের কবিতার পঙক্তির মতো যেন চিরদিনের জন্য শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে ৭ বছরের ছোট্ট শিশু রাহিমুল সাজিদ।
আর সাজিদের নিথর দেহকে জড়িয়ে ধরে বাবার শুয়ে থাকার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে গত দুইদিন ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে। যা নেটিজেনদের হৃদয়ে তুমুলভাবে নাড়া দিয়েছে। অনেকেই ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে ওই শিশুর পরিবারকে শোক-সমবেদনা জানাচ্ছেন। কেউ আবার সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার বিরল দৃশ্য বলেও মন্তব্য করেছেন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মৃত ছেলের নিথর দেহকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন বাবা। যেন শেষবারের মত আদরের সন্তানকে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এই ছবির পেছনের গল্পটি করুণ। ঘটনাটি মৌলভীবাজারের বড়লেখার। নিহত সাজিদ উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সোয়ারারথল গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে।
জানা গেছে-বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) দুপুর দুইটার দিকে রাহিমুল সাজিদ (৭) বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দেওছড়া খালের পাশে বন্ধুদের সাথে খেলছিল। একপর্যায়ে সে খালের পানিতে পড়ে তলিয়ে যায়। পরে সাজিদের বন্ধুরা বিষয়টা তার পরিবারকে জানায়। এরপর স্থানীয়দের পাশাপাশি স্বজনরা খালের পানিতে নেমে তাকে খুঁজতে থাকেন। পরে বিষয়টা বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। বড়লেখা ফায়ার সার্ভিস থেকে খবর পেয়ে বিকালে সিলেট থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্ধ্যায় খালে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত উদ্ধারকারী দল অভিযান চালিয়েও ওই শিশুর কোনো সন্ধান পায়নি। কিন্তু স্বজনরা সাজিদকে খোঁজা অব্যাহত রাখেন। প্রায় ৮ ঘন্টা পর রাত ১০টার দিকে বাড়ির পাশ থেকে কিছুটা দূরে খালের পানিতেই শিশু সাজিদের নিথর দেহ খুঁজে পান তারা। এরপর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শামীম মোল্লা বলেন, খালের পানিতে পড়ে এক শিশু নিখোঁজ হয়। আমরা বিকেল ৪টার দিকে খবর পাই। পরে সিলেট থেকে ডুবুরি দল এসে খালে নেমে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে ওই শিশুর কোনো সন্ধান মেলেনি। শুক্রবার সকালে আবারও উদ্ধার অভিযান চালানোর কথা ছিল। ওই শিশুর লাশ পাওয়ায় উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।
বড়লেখা থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী বলেন, ওই শিশুর পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের জন্য তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ায় লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।