“২০২৪ বাংলাদেশ কোটাসংস্কারকারীদের আগাম লাল গোলাপ শুভেচ্ছা”।

Daily Ajker Sylhet

admin

০১ আগ ২০২৪, ০৫:৫৩ অপরাহ্ণ


“২০২৪ বাংলাদেশ কোটাসংস্কারকারীদের আগাম লাল গোলাপ শুভেচ্ছা”।

এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
১৯৭১ সাল। শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় সাধারন জনগনকে আহবান জানালেন, আমি যদি নাও থাকি, তোমরা প্রত্যেকে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রæর মোকাবিলা করিবে। নানা টালবাহানার পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ২৫ শে মার্চ গনহত্যা চালাতে লাগল। ২৫ শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান কে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নেওয়া হল। ২৭ শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সম্মান জানিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান সাধারন জনগনকে উদ্দেশ্য করে স্বাধীনতার ঘোষনা দিলেন। সাধারন জনগন স্বধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহন করলেন। সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও পাঠ্য পুস্তকের হিসাব মতে ৩০ লক্ষ মানুষ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শহীদ হলেন। শতকরা হিসাবে ৯৮ ভাগ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে মাঠের যুদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমদ সহ অগনিত বীর সেনানী। সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে মাত্র ৯ মাসে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয় পৃথিবীর মানচিত্রে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার দ্বার প্রান্তে তখন ভারতীয় শাসক গোষ্ঠী বাংলাদেশকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়। স্বার্থে হউক বা সহযোগীতার কারণে অল্প দিনে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদের ঐতিহাসিক বিজয় মুহুর্তে ১৬ই ডিসেম্বর কথিত আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয় তড়িঘড়ি করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে জেনারেল নিয়াজি ভারতীয় কমান্ডার জেনারেল আরোরার নিকট আত্মসমর্পন সনদে স্বাক্ষর করলেন। কোথায় ছিলেন জেনারেল আতাউল গনি ওসমানি? মুক্তিকামী সাধারন জনগনের নেতৃবৃন্দ কোথায় ছিলেন? ঐতিহাসিক দিক থেকে বিচার বিশ্লেষন করলে, বলা যায় পশ্চিম পাকিস্তান তো আর বাংলাদেশের নিকট আত্মসমর্পন-ই করে নাই। কতিপয় নেতৃবৃন্দ ইদানিং কালে দাবী করেন, পশ্চিম পাকিস্তানকে বাংলাদেশের নিকট ক্ষমা চাইতেই হবে। অনেকে টাট্টা করে বলেন, এটা পাগলের প্রলপে। তখন থেকেই শুরু ভারত নামক রাষ্ট্রের বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর উপর খবরদারী, শাসন, শোষন, বঞ্চনা, ফেলানী হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে বিমাতামূলভ আচরন করতে থাকে ভারত। তখন কোথায় থাকেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযুদ্ধারা। ১৬ই ডিসেম্বরের পর অদ্যাবদি কি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করার সাহস দেখিয়েছেন? ১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখে, অত্মীয়স্বজনের মায়া ত্যাগ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন সাধারন জনগন। অনেক শহীদ হয়েছেন। তাদের সকলের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রহিল। জাতি তাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করে। তাদের এই আত্মত্যাগকে সামান্য টাকা দিয়ে অসম্মানীত করার অধিকার কে দিল? তাহারা তো আর জীবদ্দশায় মুক্তিযুদ্ধা ভাতা বা বিশেষ কোটা বা বিশেষ আনুকুল্য দাবী করেননি। করার কথাও তো নহে। কারন যাহারা জীবন দিতে জানে, তাহারা কাহার ও দয়ার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকতে চায় না। এই ভাতা গরিব দুঃখী মেহনতি মুক্তিযুদ্ধারাপাওয়ার একমাত্র হকদার। প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধারা এসব দয়া বা করুনা অতিথে কখন ও চাননি। বর্তমানেও চাইতেছেন না। মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিমের জন্ম ১৯৫৮ সালে। স্বধীনতা যুদ্ধ হল ১৯৭১ সালে। কেমনে এই ১২ বৎসরের অবুঝ শিশু স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করল জাতি জানতে চায়? এসব ভূয়া ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাই আসল মুক্তি যুদ্ধাদের কলঙ্কিত করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাত থেকে দেশর মানুষকে ভোট ভাত এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। ক্ষমতা গ্রহনের পর সেই প্রতিশ্রæতি রক্ষা করেন নাই। যাহার কারনে ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট সংগঠিত হয়েছিল। ২০২৪ সালে দেশ প্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে সাধারন ছাত্ররা দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করে জাতির গর্বিত সন্তান হিসাবে খ্যাতি লাভ করতে যাচ্ছেন। এবারের আন্দোলনে সাধারন ছাত্ররা সবাই নেতা আবার কর্মী ও বটে। কোটা বিরোধী আন্দোলনের শুভ সূচনা করেছিলেন নূরুল হক নূও, ভিপি (ঢা.বি)। সময়ের সাহসী সন্তানদেরকে জাতি সবসময়ে স্যালুট জানাতে প্রস্তুত। ভূয়া, প্রতারকদের কিন্তু নহে। মেধার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের কাঠামো তথা শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে। এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কখন ও বলেন নাই, তাদের টাকা বা দয়া বা কোঠার মাধ্যমে তাদের অযোগ্য ছেলে মেয়েদের প্রশাসনে চাকুরী দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাহারা দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ন্যায়-ও ইনসাফ ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা করতে চেয়েছেন। অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ভূয়া মুক্তিযুদ্ধাদের প্ররোচনায় কোঠা পদ্ধতি চালু থাকার পক্ষে মাননীয় কোর্টকে ব্যবহার করে তাদের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছিলেন। সংবিধানের ২৮,২৯ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, অস্বচ্ছল অনাথ ও অসহায় হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধাদের সন্তান বা তাদের উত্তারাধীকারীদের যে কোন ক্ষেত্রে সহযোগীতা করিতে হইবে। এ সহযোগীতা নিতে হলে অনাথ, অসহায়,অনগ্রসর ইত্যাদি ঘোষনা দিতে হবে। তর্কের খাতিরে যদি বলা হয় অর্থের বা নেতৃত্বের বা রাষ্ট্রীয় সহযোগীতার বিনিময়ে যুদ্ধে গিয়েছেন, তাহলে দেশ প্রেমিক মুক্তিযুদ্ধা উপাধি দিতে জাতি প্রস্তুত নহে। আর্থিক বা রাষ্ট্রিয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহনের জন্য যুদ্ধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে জাতি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধা উপাধি দিতে নারাজ। যদি মুক্তিকামী জনগনের পক্ষে যুদ্ধের খ্যাতি নিতে চান তাহলে প্রকাশ্যে কোটা সংস্কারকারীদের পক্ষে নিজে অথবা উত্তারাধীকারদের বলুন এসব নিস্পাপ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাড়ানোর জন্য। ২০২৪ সালে শাহাদত বরনকারী প্রত্যেককে বীর শ্রেষ্ট এবং তাহাদের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নামকরন করে তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখার আগাম প্রস্তাব দিচ্ছি। কারন ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে হয়তঃ ৬/৭ জন, ১৯৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থানে ১৫/২০ জন, ১৯৯০ সালের গনঅভ্যুত্থানে ২০/২৫ জন হয়তঃ শহীদ হয়েছিলেন, কিন্তু ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত হয়তঃ ২০০/২৫০ শহীদ——। তাহারা কিন্তু সাধারন জনগন নহে। এসব শহীদদের বেশীরভাগই কোমলমতি শিক্ষার্থী।
লেখক: সভাপতি, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

 

Sharing is caring!