সিলেটে ১৬ বছরে বিএনপির ২৬ নেতাকর্মীকে ‘ক্রস ফায়ার’
১১ জানু ২০২৫, ১২:২২ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
আওয়ামী লীগের ১৬ বছর শাসনামলে সারা দেশে ২ হাজার ২৭৬ নেতকর্মীকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এমন অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ‘ক্রসফায়ারে’ নিহতদের মধ্যে সিলেট বিভাগের ২৬ নেতাকর্মী রয়েছেন। এছাড়া সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলীসহ ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগ এনেছে দলটি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের কাছে এমন অভিযোগ তুলে দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন দলটির গুম, খুন তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা মো. সালাউদ্দিন খান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা গুমের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অতি উৎসাহী সদস্য বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অপহরণপূর্বক গুম করে হত্যা করেছেন এবং এখন পর্যন্ত অনেককেই গুম করে রাখা হয়েছে। বিএনপির তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত মোট ১৫৩ জনকে গুম করে হত্যা ও অপহরণপূর্বক গুম করে রাখা হয়েছে। এ গুমসংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত করে মামলা গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।
ক্রসফায়ারের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য এবং আনসার ও বিজিবির সহায়তায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর দমন-নিপীড়ন-নির্যাতন করে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আনেন। একইভাবে অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৪ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০১৮ ও ২০২৪ সালেও অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকে আওয়ামী লীগ।
অভিযোগে বলা হয়, এর প্রতিবাদে বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি অংশ গ্রহণ করলে মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে নির্যাতন করে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার, অপহরণ, গুম, খুনসহ নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতন করে অনেককে দেশ ত্যাগ করতে ও বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ভোটারবিহীন অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু সদস্য দমন-নিপীড়ন-নির্যাতন করে বিএনপিকে ধ্বংস, নিশ্চিহ্ন এবং দল থেকে লোকজন বিচ্ছিন্ন করার জন্য ক্রসফায়ারের নামে জঘন্যতম হত্যাকা চালান। ক্রসফায়ারের নামে মোট ২ হাজার ২৭৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
অভিযোগের সঙ্গে জেলাভিত্তিক ক্রসফায়ারের তালিকা তুলে ধরেছে বিএনপি। তালিকায় সিলেট বিভাগে ক্রসফায়ারে নিহতের সংখ্যা ২৬ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন সিলেট জেলায়। সিলেটে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ১১ হন। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৪ জন, হবিগঞ্জে ৬ জন ও মৌলভীবাজারে ৫ জন নিহত হয়েছেন।
ক্রসফায়ারের তালিকায় আরও রয়েছেন ঢাকা মহানগর ৫২, নারায়ণগঞ্জ ১৫, গাজীপুর ২১, ঢাকা জেলা ৮, নরসিংদী ১১, টাঙ্গাইল ১৫, মুন্সিগঞ্জ ২৬, ফরিদপুর ২৭, নেত্রকোনা ৫, ময়মনসিংহ ৫৪, জামালপুর ১১, শরীয়তপুর ৮, কিশোরগঞ্জ ৭, রাজবাড়ী ১১, সাতক্ষীরা ৫১, চুয়াডাঙ্গা ১৬, যশোর ৮৮, খুলনা ৫৪, মেহেরপুর ৩৭, মাগুরা ১১, নড়াইল ৮, বাগেরহাট ২৮, কুষ্টিয়া ৬২, ঝিনাইদহ ৫৯, নাটোর ২১, রাজশাহী জেলা ৩৩, রাজশাহী মহানগরী ৪৩, জয়পুরহাট ২৬, পাবনা ৮৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৯, সিরাজগঞ্জ ৪২, বগুড়া ১৭, ফেনী ৫৭, নোয়াখালী ৫৪, চট্টগ্রাম জেলা ১০৪, চট্টগ্রাম মহানগর ১৯, কক্সবাজার ২০০, খাগড়াছড়ি ৫, রাঙামাটি ৭, লক্ষ্মীপুর ৮৮, চাঁদপুর ৩৮, কুমিল্লা ৭৩, রংপুর ২৬, দিনাজপুর ১৮, গাইবান্ধা ২৮, নীলফামারী ৯, লালমনিরহাট ১০, ঠাকুরগাঁও ১৭, কুড়িগ্রাম ৬, পটুয়াখালী ৯, ভোলা ১২, বরগুনা ৮, বরিশাল ১১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৮, ঝালকাঠি ২, মাদারীপুর ৬ ও শেরপুরে ১ জন।