গ্রামে লোডশেডিং বৃদ্ধি
০৫ অক্টো ২০২৩, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ
সম্পাদকীয় :
গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সন্ধ্যা পার হলেই অন্ধকারে ডুবছে গ্রাম। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অপরদিকে এডিস মশার উৎপাত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যান ঘুরছে না; কিন্তু মশার কারণে অসহ্য গরমে থাকতে হচ্ছে মশারির ভেতর। সব মিলে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ গ্রামের মানুষ। প্রকাশ-বিয়ানীবাজর, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নেত্রকোনাসহ দেশের অনেক জেলার চিত্রই এমন।
এ পরিস্থিতিতে শুধু গ্রাহকই নন, লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের প্রায় সব গ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দিনে চাহিদার তুলনায় ৬০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। রাত ১০টার পর এর পরিমাণ আরও কমে। তখন লোডশেডিং পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কোথাও কোথাও লোডশেডিং হয় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা।
যদিও সরকারি হিসাবে উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে গড়ে ফারাক দেখানো হচ্ছে মাত্র ৭০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট। বিতরণ কোম্পানিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সিস্টেম লসও আগের মতো বেশি নয়। তাহলে গ্রামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে কেন? বিদ্যুৎ তো আর জমা করে রাখা সম্ভব নয়। তাহলে কি যে পরিমাণ উৎপাদন দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে সে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিশ্চয়ই উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে বড় ধরনের কোনো ঘাপলা আছে। তা না হলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য কোনো চক্র বিদ্যুৎ বিতরণ নিয়ে কারসাজি কিংবা ষড়যন্ত্র করছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে গ্রামের নিরীহ মানুষকে। বাস্তবতা যাই হোক, সংশ্লিষ্টদের কাছে নিশ্চয়ই এর সদুত্তর রয়েছে।
আমরা মনে করি, এ লুকোচুরির দ্রুত অবসান হওয়া দরকার। কারণ কৃষিকাজে সেচের জন্য তো বটেই, নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গ্রামীণ জীবনও এখন বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। দিনের অর্ধেকেরও বেশি সময় যদি গ্রামের মানুষকে অন্ধকারে ডুবে থাকতে হয়, তাহলে দেশের অগ্রযাত্রার যে কথা বলা হয়ে থাকে, তা স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হচ্ছে।
উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। মূল্যবৃদ্ধির বিনিময়ে জনগণ যেটা চায়, সেটা হলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। কাজেই গ্রামাঞ্চলে যে হারে লোডশেডিং হচ্ছে, এর দ্রুত অবসান হওয়া দরকার। সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।