সিআইডি’র উপর হামলার এক সপ্তাহ, অপরাধীরা এখনও অধরা
২২ অক্টো ২০২৩, ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের জৈন্তাপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) টিমের উপর হামলাকারীরা এবং হাতকড়াসহ পালিয়ে যাওয়া আসামি এখনো ধারাছোঁয়ার বাইরে। ঘটনার পরদিন পলাতক আসামির বাড়ি থেকে হাতকড়া উদ্ধার করা হলেও জড়িত হামলাকারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
ঘটনার পরদিন অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেন সিআইডির এক কর্মকর্তা। তবে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও পলাতক আসামি এবং হামলাকারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
এ বিষয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম (পিপিএম) শনিবার (২১ অক্টোবর) রাতে সিলেটভিউ-কে বলেন, ঘটনার পরদিন আমরা পলাতক আসামির বাড়ি থেকে হাতকড়া উদ্ধারে সক্ষম হয়েছি। তবে পলাতক আসামি ও হামলাকারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
গত ১৪ অক্টোবর সিলেটের জৈন্তাপুরে ভারত থেকে একটি ডিআই ট্রাকে আসা চোরাই মালামাল ধরতে উপজেলার হরিপুরে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালায় সিআইডি টিম। এসময় ধলাই মিয়া (১৯) নামে এক আসামিকে আটক করা হয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে চোরাকারবারি দলের ৮০/৯০ জন সদস্য অভিযানিক দলের ওপর হামলা চালায়। মারপিট করে সিআইডির এক কর্মকর্তার হাত ভেঙে দেওয়া হয়। ওই দিন আরেকটি অভিযানে ৯৮০ কেজি ভারতীয় চা পাতা জব্দ করে সিআইডি। এ সময় আজগর নামে আরেক পিকআপ চালককে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় জৈন্তাপুর থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে সিআইডি।
ঘটনার পর সিলেটের সিআইডি পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়াসহ হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে হাতকড়াসহ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অপরাধে এসআই দ্বীরাজ ধর প্রিন্স বাদী হয়ে জৈন্তাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নেওয়া আসামি পিকআপ চালক ধলাইসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০/৮০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়। মূলত; সিআইডি সিলেট কর্তৃক গত এক মাসে বেশ কয়েকটি অভিযানে মাদকসহ চোরাই মালামাল ও ভারতীয় গরু উদ্ধারের পর মামলা দেওয়া হয়। এতে মাদক চোরাচালানীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সিআইডি পুলিশের অভিযান রোধকল্পে হামলা চালায়।
এছাড়া ভারতীয় চোরাই চা পাতাসহ আটক চালক আজগরসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামি করে একই থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। হামলার ঘটনার পরদিন হাতকড়া উদ্ধার হলেও এখনও আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
১৪ অক্টোবর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওইদিন ভোর ৪টার দিকে প্রথম অভিযানে একটি ডিআই পিকআপ তল্লাশি চালিয়ে ১৪টি বস্তায় ৭০ কেজি করে ৯৮০ বস্তা ভারতীয় চা পাতা জব্দ করা হয়, যার বাজার মূল্য এক লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অভিযানকালে চা পাতার বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারায় আজগর আলী (৩৫) নামে পিকআপ চালককে আটক করা হয়। তিনি উপজেলার হেমু দত্তপাড়া এলাকার হারিছ মিয়ার ছেলে।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামি স্বীকার করেন, চোরাকারবারিদের সহযোগিতায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে ভারতীয় চা পাতা দেশে আনা হয়। এ সময় চা পাতাসহ নম্বর প্লেটবিহীন হলুদ ও নীল রংয়ে ডিআই পিকআপটি জব্দ করা হয়।
এর আধাঘণ্টা পর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালান উপ-পরিদর্শক দীপরাজ ধর প্রিন্স। এ সময় সিলেট শহর অভিমুখী আরেকটি ডিআই ট্রাক থামিয়ে তল্লাশিকালে চালক চোরাই মালামাল বহনের কথা স্বীকার করে। চালক ধলাই মিয়াকে (১৯) হাতকড়া পরিয়ে গাড়ি তল্লাশির চেষ্টাকালে কয়েকটি ডিআই পিকআপ ও একটি নোহা মাইক্রোবাসে ৭০/৮০ জনের মাদক চোরাকারবারি দলের সদস্য দেশিয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা হাতকড়াসহ চালক ধলাই মিয়াকে ছিনিয়ে নেয়। তাদের হামলায় সিআইডি পুলিশে ওই কর্মকর্তা আহত হন। হামলায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার হাত ভেঙে যায়। ছিনিয়ে নেওয়া চালক ধলাই মিয়া জৈন্তাপুরের লামা শ্যামপুর এলাকার কাদীর পীরের ছেলে।
পরে কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়াসহ হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে হাতকড়াসহ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অপরাধে এসআই দ্বীরাজ ধর প্রিন্স বাদী হয়ে জৈন্তাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় চালক ধলাইসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০/৮০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া ভারতীয় চোরাই চা পাতাসহ আটক চালক আজগরসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামি করে একই থানায় পৃথক মামলা দায়ের করে সিআইডি।