“সদা সত্য কথা বলিব, কখনও মিথ্যা কথা বলিবনা?
১৭ জানু ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ণ
এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
সদা সত্য কথা বলিব, কখনও মিথ্যা কথা বলিব না। প্রবাদটি আমার স্যার ক্লাস ‘টু’ তে অধ্যয়নকালিন সময়ে বোর্ডে স্ব-হস্তে শত শতবার লিখিয়েছেন এবং শিখিয়েছেন। টুটস্থ করে অধ্যাবদি লালন এবং পালন করার চেষ্টা করিতেছি। কেনই বা টুটস্থ এবং আমল করব না? ইসলামের পথ প্রদর্শক, হযরত মোহাম্মদ (সঃ) সদা সত্য কথা বলিতেন, কখনও মিথ্যা কথা বলিতেন না। সেইজন্য ধর্ম-বর্ণ-শত্রæ মিত্র এমন কি অবিশ্বাসীরা ও তাঁহাকে সত্যবাদী বা আল-আমীন হিসাবে মূল্যায়ন করিত। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর শত্রæরা শত চেষ্টা করেও একটি বার তাহার জীবনে মিথ্যা বা অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছেন তা কিন্তু বলতে পারে নাই-পারবেও না। এককথায় হযরত মোহাম্মদ (সঃ) সত্যের পথ প্রদর্শক ছিলেন, আছেন, থাকবেন।
ইদানিংকালের বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের কথা বার্তা থেকে ক্লাস টু এর টুটস্থ করা প্রবাদটির প্রতি সন্দেহের দানা বাধতে বা ক্ষত ধরতে শুরু করেছে। কালের বিবর্তনে প্রবাদটি পরিবর্তন করে নতুন প্রজন্মকে শিখানো উচিত এভাবে “সদা মিথ্যা কথা বলিব, কখনও সত্য বলিব না।” যুগের বিবর্তনে অনেক কিছুই পরিবর্তন হতে পারে। হালের রাজনীতিতে রাজনীতিবিদরা প্রায়-ই বলে থাকেন “আমার অনংড়ষরঁঃষু চড়বিৎ” চাই। আর এই কর্তৃত্ববাদী পাওয়ার থাকলে যা বলব তা-ই সত্য। অন্যের নাক গলানোর সুযোগ নেই। যদি কেহ টু-শব্দ করেন “রাষ্ট্রীয় গোলাম আছেন, তাহারা কিন্তু আইনের দোহাই দিয়ে হয়ত জেলখানা নয়ত ক্রসফায়ার এর যেকোন একটির মাধ্যমে সলিল সমাধি করতে ভ‚ল করবে না। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ফরমান জারি করেছেন কাহারও পিতা মাতা মৃত্যুবরণ করলে, দুঃখ বা কান্নাকাটি বা শোক, প্রকাশ করতে চাইলে, দৃর্শত তাঁহার পিতার নামে এসব করতে হবে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের নমুনা তা-ই।
জনৈক পার্লামেন্ট মেম্বার। বিশাল জানাযায় লোক সমাগম। চতুর পার্লামেন্ট মেম্বার। নিজের পরিচিতিটা লোকজনকে জানাতে চেষ্টা করলেন। ২০১৪ মালের মনোনীত পার্লামেন্ট মেম্বার। সমম্বরে জানাজার মাঠ থেকে উচ্চস্বরে আওয়াজ উঠল, “রাখেন আপনার পার্লামেন্টগিরি। আমরা তো আপনাকে ‘ভোট দেইনি, দিব ও না। কারণ আপনি চাটুকার। ভদ্রলোক অপমানিত হলেন। মাঠ থেকে একজন লোকও তাহার পক্ষাবলম্বন করেনি। অপমান সহ্য করে জানাযার মাঠ থেকে চলে গেলেন। শিক্ষিত মানুষ হিসাবে আমি ভাবলাম হয়ত জানাযার মাঠে-ই জনগণের উদ্দেশ্যে পদত্যাগের ঘোষনা দিবেন, হাজার হাজার জনতার সামনে। এমন অপমানের পার্লামেন্ট মেম্বার থেকে পদত্যাগের ঘোষনা দিয়ে জনতার কাতারে শরিক হবেন। কিন্তু লাভজনক পদ থেকে কি পদত্যাগ করা যায়? জনগণের দেওয়া সম্মান বা ভালবাসা দিয়ে কি লাভ?
পার্লামেন্ট হল জনস্বার্থে আইন তৈরীর কেন্দ্রবিন্দু। নিজেরা যেমনি আইন মানতে বাধ্য। কিন্তু জনগনের উপর এমন আইন কানুন মানাতে বাধ্য করবেন রাষ্ট্রের টাকায় পোষা কর্মচারীদের দ্বারা। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ সদস্যগন সংবিধানের আলোকে শপথ করেন। শপথের ভাষা কিন্তু অতি অল্প। যেমন: রাগ-অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোন কিছু করিব না। রাষ্ট্রের গোপনীয়তা রক্ষা করতে বাধ্য ইত্যাদি।
আইনের ছাত্র-হিসাবে আমি জানি, যেভাবেই ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের তফশিল ঘোষনা বা মনোনীত হউন না কেন, জনগন কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষন করার যোগ্যতা রাখেন। জনগন কিন্তু ভায়লেশন করে না আইন কানুুন। করবে ও না। বোকা জনগন প্রশ্ন তুলেছেন বর্তমান সংসদ বা সরকারের মেয়াদ ২৯/১/২০২৪ইং পর্যন্ত। গত- ০৯/১/২০২৪ সালে প্রচার মাধ্যমে দেখতে পেলাম আরেকটি সরকার ও পার্লামেন্ট শপথ করেছেন। দায়িত্ব ও বুঝিয়ে নিয়েছেন। বোকা জনগনের প্রশ্ন বর্তমানে আমরা ২০১৮ সালের সরকার না ২০২৪ সালের সরকার দ্বারা শাসিত হচ্ছি। আমার ধারণা যেহেতু বিশেষ ব্যক্তি দ্বারা সংসদ সদস্যগণ মনোনীত হয়ে নিয়োগ পেয়ে থাকেন, সেহেতু মেরুদন্ডহীন সরকারের চাটুকারিতা-ই তাদের কাজ। সুতরাং সাহস করে আইনের আশ্রয় নিয়ে সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। কে এই দুঃসাহস দেখাবেন? প্রবাদ আছে, মেরুদন্ডহীন প্রানী কেচু যেমন সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না, ঠিক তদ্রæপ মেরুদন্ডহীন অপেশাদার রাজনীতিবিদ, দয়া বা দাক্ষিনা বা বিশেষ আশির্বাদে পদ পদবী পেয়েছেনে। সুতরাং প্রশ্ন-ই আসে না, আইনকে মেনে আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করার সাহস দেখাবেন। সাংবিধানিক সরকার সংবিধানের ভিতরেই নির্বাচন ব্যবস্থার সমাধান নিশ্চিত করা হইয়াছে। শুধু সংবিধানকে নিজস্ব স্বার্থে জনগনকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতার পালা বদল হচ্ছে। যেমনঃ জনগনের একটা নির্দিষ্ট শতাংশের সরাসরি ভোট কাষ্ট না হলে, নির্বাচনের জন্য রি-সিডিউল ঘোষনা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে দেখা গেল চ্যানেল আরটিভি এর দেওয়া তথ্য মতে………? ক্ষমতাশীন সরকারকে বলতে চাই, এই প্রশ্নবোধক তামাশার নির্বাচনে অহেতুক জনগনের ট্যাক্সের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা খরচ না করে সংসদের মেয়াদ আমমৃত্যু বৃদ্ধি করলেই পারতেন। জনগন স্বাভাবিক ভাবে-ই মেনে নিত। কারণ জনস্বার্থে এই ২ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রেখে খরচ করতে পারতেন। যেহেতু সরকার নিজ দায়ীত্বে বিরোধী দল বা ডামি ব্যবস্থা চালু করেছেন, সেহেতু এককথায় সরকার ব্যবস্থাকে বাংলা অবিধানের বাগধারার ভাষায়, আমি, তুমি বা ডামি এবং সে এই তিন অংশকে আমরা বলি। এখানে বিরোধী দলের অস্থিত্ব বলতে কিছু নেই। জনাবা রওশন এরশাদের বদলে জি এম কাদেরকে গরূর হাঠ থেকে কিনে জাতীয় পার্টি হয়ত ইতিহাসের পাতা থেকে চিরতরে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত পাওয়া নাও যেতে পারে।
লেখক, সভাপতি- সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।