ইয়াবা পাচারে জনপ্রিয় রুট সিলেট!
০৯ সেপ্টে ২০২৩, ০১:৪৫ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
ইয়াবা পাচারে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত রুটে ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে মাদক কারবারি চক্র। মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে আসা চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসতে তারা ব্যবহার করছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই সীমান্ত এলাকা। দীর্ঘদিন এই রুটে ইয়াবা পাচার প্রায় বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি সিলেট নগরীতে দুটি বড় চালান ধরা পড়ার পর পুনরায় আলোচনায় এসেছে জকিগঞ্জ সীমান্ত। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত ও সিলেট শহরের সঙ্গে একাধিক সড়ক যোগাযোগ থাকায় মাদক কারবারিরা
জকিগঞ্জকে তাদের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নেয়। সিলেট শহরে আসার পর ইয়াবার চালান হাত বদল হয়ে ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সূত্র জানায়, এক সময় টেকনাফ ছিল ইয়াবা পাচারের সবচেয়ে বড় রুট। ওই রুট দিয়েই মিয়ানমার থেকে অবাধে আসত ইয়াবার চালান। কিন্তু গত কয়েক বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের পর আন্তর্জাতিক মাদক কারবারি চক্রের সদস্যরা পাচারের নতুন নতুন রুট তৈরি করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সিলেটের জকিগঞ্জ। মিয়ানমারের মান্দালে-সাগাইং-মনেয়া ও কালে অঞ্চল হয়ে ইয়াবার চালান ঢুকত ভারতে। এরপর ভারতের মণিপুরের মোরে-মিজোরামের আইজল-ত্রিপুরার পানিসাগর-মেঘালয়ের শিলং ও আসামের করিমগঞ্জ হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার বৃহৎ চালান প্রবেশ করত বাংলাদেশে।
এই রুট ব্যবহার করে বেশ কয়েক বছর ধরে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান ঢুকছিল। দুই দেশের সীমান্তের মধ্যখানে থাকা কুশিয়ারা নদী পার করে সহজেই কারবারিরা ইয়াবার চালান নিয়ে আসে জকিগঞ্জে। এরপর চালান চলে আসত সিলেট শহরে। দুই বছর আগেও এই রুট দিয়ে আসা ইয়াবার চালান প্রায়ই ধরা পড়ত র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে। মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে জকিগঞ্জের অনেকেই। তাদের দেখে জকিগঞ্জের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং জনপ্রতিনিধিও নাম লেখান এ নিষিদ্ধ ব্যবসায়। এক পর্যায়ে ইয়াবার কারবারি ও পাচারের সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে যখনই কোনো চালান ধরা পড়ত তখন কেবল আটক হতেন ক্যারিয়াররা। আর এই ব্যবসার মূল কারবারি ও পুঁজি বিনিয়োগকারীরা থেকে যেতেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও সাঁড়াশি অভিযানের ফলে গত প্রায় দুই বছর এই রুট দিয়ে ইয়াবা পাচার কমে আসে। কিন্তু সম্প্রতি সিলেট শহরে পরপর দুটি বড় চালান ধরা পড়ে। চালানের সঙ্গে জড়িতদের বাড়িও জকিগঞ্জে। ফলে ইয়াবা পাচারে ফের আলোচনায় আসে জকিগঞ্জ রুট।
সিলেটে সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর মহানগরীর বটেশ্বর এলাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান আটক করে পুলিশ। এ সময় রায়হান উদ্দিন নামের এক যুবককে আটক করা হয়। রায়হান জকিগঞ্জ উপজেলার খারিজা গ্রামের মৃত রইব আলীর ছেলে। রায়হানের কাছেই ইয়াবার চালান পাওয়া গেছে এবং জকিগঞ্জ থেকেই সে এগুলো নিয়ে আসছিল বলে নিশ্চিত করেছেন শাহপরান থানার ওসি খায়রুল ইসলাম। তবে সূত্র জানিয়েছে, রায়হান ওই চালানের ক্যারিয়ার ছিল। ইয়াবার চালানের মূলহোতা এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এর আগে ৩০ আগস্ট মহানগরীর আম্বরখানা পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে তিন মাদক কারবারিকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা। আটককৃতরা হলেন- জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মিল আলীর ছেলে মুহিবুর রহমান, বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর ছেলে আজির উদ্দিন ও সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে রাসেল আহমদ। মুহিব নগরীর পীরমহল্লার প্রভাতী ৪১/সি নম্বর বাসার বাসিন্দা। ওই চালানের মূলহোতা ছিলেন মুহিবুর রহমান। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুহিবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তার পীরমহল্লার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ৯ হাজার পিস ইয়াবা, মাদক বিক্রির ৫০ হাজার টাকা ও লেনদেনের রসিদ উদ্ধার করে। মাদকের রুট প্রসঙ্গে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সেলিম জানান, এক সময় জকিগঞ্জ দিয়ে ইয়াবা আসত। কিন্তু পুলিশের তৎপরতার কারণে এখন মাদক আসা প্রায় বন্ধ। ১৫ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবাসহ আটক মুহিবুর রহমানের বাড়ি জকিগঞ্জ হলেও সে সিলেট শহরের বাসিন্দা। এরপরও ওই রুট ব্যবহার করে মাদক কারবারি ইয়াবা আনার চেষ্টা করছে কি-না তা পুলিশের গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, সম্প্রতি ইয়াবার চালানসহ যারা আটক হয়েছে তাদের বেশির ভাগের বাড়ি জকিগঞ্জে। আটককৃতদের কাছ থেকে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। ওই নেটওয়ার্কের সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে।