নাটকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ: হামলা, মঞ্চ ভাংচুর
০৫ জুন ২০১৮, ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার: বিয়ানীবাজার পৌরশহরের শেখ ওয়াহিদুর রহমান একাডেমির বর্ষবরণ অনুষ্টানে তান্ডব চালিয়েছে হেফাজতে ইসলামের অনুসারীরা। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মাইকযোগে গানবাজনা, নাটকে ইসলাম বিদ্বেষী, ধর্ম অবমাননা ও আলেম-ওলামাদের নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে অনুষ্টানে এ তান্ডব চালানো হয় বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ৪ জুন সোমবার পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্টানের আয়োজন করে শেখ ওয়াহিদুর রহমান একাডেমি। কিন্তু এই অনুষ্টান নিয়ে আপত্তি জানান খাসাড়িপাড়া এলাকায় প্রতিষ্টিত জামেয়া ফুরক্বানীয়া কাওমী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা আব্দুল কারীম হাক্কানী। তিনি এলাকার কিছু লোকজন ও হেফাজতে ইসলামের অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্টানে গিয়ে আয়োজিত অনুষ্টান বন্ধ করার নির্দেশনা দেন। এ সময় শেখ ওয়াহিদুর রহমান একাডেমির অধ্যক্ষ আসলাম আহমদ অনুষ্টান আয়োজনে প্রতিষ্টানের বেশ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। তখন শর্তসাপেক্ষে শেখ ওয়াহিদুর রহমান একাডেমিকে অনুষ্টান আয়োজন করার কথা জানিয়ে দেন তারা। বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান শেষ হলে অনুমান সাড়ে ৫টার দিকে মঞ্চনাটক পরিবেশন শুরু করে বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক কমান্ড (বিসাক)। আর তখনই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান হেফাজতে ইসলামের অনুসারীরা। হামলাকারীরা নাট্যমঞ্চটি পুরোটাই গুড়িঁয়ে দেয়। এ সময় নাট্যকর্মীসহ উপস্থিত দর্শক ও শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা প্রাণ বাচাঁতে দিগি¦বিদিক পালিয়ে যান। বিষয়টি জানতে পেরে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা তাদের মারধর করে। এ সময় ৩-৪ জন লোক আহত হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত থাকার পরও পুলিশ হেফাজতে ইসলামের কাউকে আটক করেনি বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ ঘটনায় জামেয়া ফুরক্বানীয়া কাওমী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও হেফাজতে ইসলামের উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি মাওলানা আব্দুল কারীম হাক্কানী বাদী হয়ে থানায় মামলা (নং ৪৬, তাং ০৪-০৬-২০১৮ইং) দায়ের করেছেন। মামলায় সুপাতলার দুদু মিয়ার ছেলে আসলাম আহমদ (৪৫), মেওয়ার মো: জসীম উদ্দিনের ছেলে জয়নুল ইসলাম (৩০), মাথিউরার মৃত ছমির উদ্দিনের ছেলে আতিকুল ইসলাম রুকন (৩০), শ্রীধরার রহমত আলীর ছেলে বেলাল আহমদ (২০), আব্দুল্লাপুরের মো: হাবীবুর রহমানের ছেলে মো: মাহবুবুর রহমান (২০), কসবার সফিক উদ্দিনের ছেলে সুমন আহমদ (২০), দাসউরার মৃত আফসার আহমদের ছেলে আব্দুল ওয়াদুদ (৩২), খাসার কয়েস আহমদের ছেলে মাসুম সানী (২৪), সুপাতলার আলাউদ্দিনের ছেলে রাসেল আহমদ (২৮), বাউরভাগের বশির মিয়ার ছেলে লায়েক আহমদ (৩০), পাতনের মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে এরফান আহমদ (২৬), তাজপুরের বুরহান উদ্দিনের ছেলে ইমতিয়াজ আহমদ (৩১), নয়াগ্রামের আবু বকরের ছেলে শামীম আহমদ (২৩), নয়াগ্রামের মৃত ওহাব আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম ও সুপাতলার দিলীপ চন্দের ছেলে বিমল চন্দ। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
শেখ ওয়াহিদুর রহমান একাডেমির অধ্যক্ষ আসলাম আহমদ অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনে জানান, উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিষ্টান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হয়েছে।
মামলার বাদী মুফতি মাওলানা আব্দুল কারীম হাক্কানী বলেন, শেখ ওয়াহিদুর রহমান একাডেমিতে প্রায়ই গানবাজনা চর্চা করা হয়। এই প্রতিষ্টানের অদূরে একটি মাদ্রাসা থাকার পরও তারা গানবাজনা বাজিয়ে তারা দ্বীনি-ইসলামি পরিবেশ নষ্ট করেন। তিনি বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক কমান্ডকে নষ্টদের আস্থানা এবং নাট্যকর্মীদের আলেম-ওলামা এবং ইসলামের শক্র বলে উল্লেখ করেন।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: জুবের আহমদ জানান, পুলিশ ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। ধর্ম অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্থির জন্য আদালতে সোপর্দ করা হবে।