Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পানি নামছে, বাড়ছে দুর্ভোগ

admin

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪ | ০৫:৪৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ | ০৫:৪৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
পানি নামছে, বাড়ছে দুর্ভোগ

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার :
বৃষ্টিপাত কমেছে। সিলেটের আকাশও দু’দিন ধরে রৌদ্রজ্জল। ফলে সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অল্প উন্নতি হয়েছে। ধীরগতিতে হলেও নগরের প্লাবিত বেশিরভাগ এলাকার পানিও নেমেছে। কিন্তু ভয় কাটছেনা। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিলেটে ফের বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ওদিকে, পানি কমার সাথে সাথে বেরিয়ে আসছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। এতে পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে, ভোগান্তি ততই বাড়ছে।

সিলেট শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে জাঙ্গাইল গ্রাম। প্রায় তিনশ’ পরিবারের বাস এ গ্রামে। গ্রামটির দেড়শ’ বাড়িই প্লাবিত হয়েছে। হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি ছিল। গতকাল অনেক জায়গা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় বন্যার ক্ষত দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। শুধু এই গ্রামই নয়, বন্যাকবলিত প্রায় সব এলাকার চিত্র এটি।নগরে সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে ১০ থেকে ১২টি এলাকায় এখনো পানি জমে আছে। নগরের টুকেরবাজার এলাকার সবজির বাজার এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। উপশহর ও সোবহানীঘাট এলাকার অনেক রাস্তা ও বাসাবাড়ি এখনো পানির নিচে। বিভিন্ন এলাকার পানি নেমে যাওয়ায় মানুষজন বাসাবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। কোথাও কোথাও জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সিলেট নগরের একাধিক বাসিন্দা বলেন, পানি কমতে শুরু করলেও এখনো অনেক বাড়িঘরে পানি আছে। মূল সড়ক থেকে পানি নামলেও পাড়া-মহল্লার গলিতে পানি রয়ে গেছে। এছাড়া টানা কয়েক দিন পানিবন্দী থাকায় ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় কাদা-ময়লা জমেছে। নগরের মণিপুরি রাজবাড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, পানি বেড়ে যাওয়ায় ঈদের দিন নিজেদের বসতভিটা ছেড়ে এক স্বজনের বাড়িতে উঠেছিলেন তারা। গতকাল ঘর থেকে পানি নামলেও পরিবারের সদস্যরা ঘরে ফেরেননি। ঘরে পানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পলি মাটিও জমেছিল, সেগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়াতে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিলেটে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমাদের ভয়টা কাটছে না।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, নগরীর প্লাবিত ওয়ার্ডগুলোর বেশির ভাগ স্থান থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। কয়েকটি ওয়ার্ডের কিছু স্থানে পানি রয়েছে। নগরীর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজন বাসা-বাড়িতে যাচ্ছেন। আর যাদের বাসার পানি নামেনি তারা এখনো রয়েছেন।

Manual2 Ad Code

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০১ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া শনিবার লোভা, সারি, ডাউকি, সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি কমেছে।

Manual7 Ad Code

এদিকে নগর ছাড়াও উপজেলাগুলোতে পানি ধীরে নামছে। তবে লাখো পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ কমছেনা। সিলেট জেলার ১৩ উপজেলাই বন্যা কবলিত। বেশি আক্রান্ত ওসমানীনগর ও গোয়াইনঘাট। সব উপজেলায় মানুষের মাঝে খাদ্য ও ওষুধের হাহাকার আছে। বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ কার্যক্রম চললেও বড় একটি অংশ থেকে যাচ্ছে এই কার্যক্রমের বাইরে। ফলে বানভাসী মানুষজন অর্ধহারে-অনাহারে কষ্টে দিন পার করছেন। হাজার হাজার মানুষ স্কুল-কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। পানি ধীরে নামায় তারা বাড়ীও ফিরতে পারছেননা। আয় রোজগার তো একেবারেই বন্ধ। এছাড়া এলাকাগুলোর অনেক গ্রামীণ রাস্তা এখনো পানির নিচে থাকায় যোগাযোগ-বিচ্ছিন্নতা দূর হয়নি।

Manual4 Ad Code

জেলা প্রশাসনের শনিবারের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গতকাল শনিবার পর্যন্ত সিলেট নগর ও জেলায় বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৬৪ হাজার। এর আগের দিন ছিলো ১০ লাখ ৪৩ হাজার। পানি নামায় ধীরে ধীরে এ সংখ্যা কমে আসছে। নগরের ১৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩টি উপজেলার ২২ হাজার ৬২৩ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। জেলায় ৭১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৩৬২টিতে বন্যাদুর্গতরা অবস্থান করছে। এছাড়া

সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ধীরে উন্নতি হচ্ছে। নদীর পানি কমছে। তবে পানি ধীরে কমায় মানুষের ভোগান্তি দীর্ঘ হচ্ছে।চার দিন পর সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। তবে এখনো জেলায় অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি আছে। প্রায় ২৫ হাজার পরিবার আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।জেলার উঁচু এলাকায় পানি কমলেও নিচু এলাকায় পানি এখনো স্থির হয়ে আছে। ছাতক, সদর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় শত শত বাড়িঘরে এখনো পানি আছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত আছে। অনেকের ঘরে খাবারের সংকট আছে।

সুনামগঞ্জ শহরে অনেক মানুষের বসতঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি আছে। অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। কেউবা পরিবার নিয়ে উঠেছেন হোটেলে। আবার কেউ কেউ আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী প্রায় ৮ লাখ মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।
এখনো জেলার সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়ক, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে।

Manual7 Ad Code

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, গত দুদিন সুনামগঞ্জে ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হয়েছে। এতে পাহাড়ি ঢল কম নামছে। মূলত এ কারণেই নদীর পানি কমছে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আপাতত পরিস্থিতি অবনতির কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।উল্লেখ্য যে, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে সিলেট নগরের ২৮টি ওয়ার্ডের ১ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েন। এছাড়া সিলেট জেলার ১৩ উপজেলায় বন্যা আক্রান্ত সাড়ে ১০ লাখ, সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলায় ৮ লাখ, মৌলভীবাজার জেলায় ৩ লাখ ও হবিগঞ্জ জেলায় ১ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হন। তবে পানি নামায় এ সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে।

শেয়ার করুন