আবারও ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি

Daily Ajker Sylhet

admin

২৪ ডিসে ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ণ


আবারও ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার:
তফশিল ঘোষণার পর যে কোনো পর্যায়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা আবারও নির্বাচন কমিশনের হাতে ফিরতে যাচ্ছে। ওই ক্ষমতা পেলে তফশিল ঘোষণা থেকে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিরূপ পরিবেশ তৈরি হলে পুরো নির্বাচনই বাতিল করতে পারবে ইসি।

এজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১(এ) উপধারা সংশোধনের সুপারিশ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। এছাড়া প্রার্থীদের হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করলে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা যে কোনো সময়ে বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি। এমনকি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও তা বাতিল করতে পারবে কমিশন। এটিসহ আরও কিছু ক্ষমতা ইসিকে দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করতে যাচ্ছে এ কমিশন। ১ জানুয়ারির মধ্যে কমিশনের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব করার সুপারিশের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। এর মধ্যে নির্বাচন বাতিলে ইসির ক্ষমতা বিষয়টিও রয়েছে। তিনি বলেন, ওই ক্ষমতা যখন কমানো হয়েছিল, তখনই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আমরা মনে করছি, এই ক্ষমতা ইসির হাতে থাকা উচিত।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার আরপিও সংশোধন করে জাতীয় সংসদে বিল পাশ করে। ওই সময়ে অন্যান্য সংশোধনীর মধ্যে আরপিওর ৯১(এ) উপধারা ছিল। ওই ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব করেছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ওই ঘটনায় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসির মনোভাব নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। যদিও তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল দাবি করেন, ৯১(এ)-এর সঙ্গে আরেকটি উপধারা যুক্ত হয়ে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরও বেড়ছে।

জানা যায়, আরপিও ৯১(এ) উপধারা অনুযায়ী, নির্বাচনে ভীতি প্রদর্শন, বল প্রয়োগ, চাপ প্রয়োগ বা বিরাজমান বিভিন্ন অপকর্মের কারণে ইসি যদি মনে করে তারা আইনানুগ ও ন্যায়সংগত নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না, তাহলে নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা ছিল। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার তা সংশোধন করে শুধু ভোটের দিন যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, সেগুলো বন্ধের বিধান করে। পুরো নির্বাচন বাতিলের পথ বন্ধ করে দেয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা মনে করছেন, ওই ক্ষমতা ইসির হাতে ফেরত যাওয়া দরকার। প্রয়োজনে ৯১(এ) উপধারার প্রয়োগ আরও সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারে।

এছাড়া আরপিওর ৭৩ থেকে ৯০ ধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব করতে যাচ্ছে সংস্কার কমিশন। ওইসব ধারায় নির্বাচনি অপরাধে সাজার বিধান রয়েছে। নির্বাচনি অপরাধ করলে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, নির্বাচনি ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং সাধারণ মানুষের জন্য পৃথক সাজার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। কমিশন সদস্যরা মনে করেন, সবার জন্য একই ধরনের সাজা দেওয়ার বর্তমান বিধান যৌক্তিক নয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় জমা দেওয়া তথ্য যাচাইয়ের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে এ কমিশন। বিদ্যমান আইনে প্রার্থীর সাত ধরনের তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক। ওই তথ্য নির্বাচন কমিশন যাচাই করে না। প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের বিষয়টি প্রমাণ করলে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের ওই প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো পর্যায়ে হলফনামায় তথ্য গোপন বা অসত্য তথ্য দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই ইসির। এক্ষেত্রে কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার পক্ষে আইন সংস্কার কমিশন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য যাচাইয়ে সময় বাড়ানো, হলফনামায় প্রার্থীর তথ্য সুনির্দিষ্ট করা, সম্পদের প্রকৃত দাম উল্লেখ করাসহ বেশকিছু সংশোধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এমনকি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সদস্যপদ বাতিল করতে পারবে ইসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য বলেন, মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা একাধিক বাড়ির তথ্য হলফনামায় গোপন করেছিলেন। ওই সময়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রার্থীরা হলফনামা আমাদের একটা জমা দেবে। কিন্তু সেই হলফনামার সত্য-অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কোনো কিছু করার আইনের ভিত্তি নেই। হলফনামা যেটা দেবে, সেটা জাতিকে তথ্য জানানোর একধরনের দায়িত্ব। সংস্কার কমিশনের ওই সদস্য বলেন, এভাবে সম্পদ লুকানোর প্রবণতা বন্ধে হলফনামার বিধানে সংস্কার প্রস্তাব করার বিষয়ে প্রায় সব সদস্য একমত হয়েছেন।

সূত্র আরও জানায়, ভোটার তালিকা আইন ও জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনেও সংস্কার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সংস্কার কমিশনের সদস্যরা একমত হয়েছেন। তারা পোস্টাল ব্যালট সহজ করার পক্ষে রয়েছেন। এছাড়া জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনেও বড় সংশোধনীর প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। ওই প্রস্তাবে জাতীয় সংসদের আসন সীমানা পুনর্বিন্যাসে ইসির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ভূগোলবিদ, পরিসংখ্যানবিদসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের যুক্ত করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এক আসনের সঙ্গে আরেক আসনের জনসংখ্যার ব্যবধান ১০ শতাংশের মধ্যে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। এতে শহর এলাকায় আসন সংখ্যা বাড়বে। অপরদিকে যেসব এলাকায় জনসংখ্যা কম, সেখানে আসন কমবে। তবে পার্বত্য অঞ্চলে আসন যাতে না কমে, সেজন্য সুপারিশ থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান আইনটি আন্তর্জাতিক মানের নয়। এ আইনে সরকারি দলের ইচ্ছামতো সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ফাঁকফোকর রয়েছে। এতে নির্বাচনের ফলাফলও বিশেষ ব্যক্তির পক্ষে যায়। ওই ফাঁকফোকর বন্ধ এবং স্বচ্ছতা আনতে এ সংশোধনী প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে খসড়া সীমানা শুনানি মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠানের সুপারিশ করা হবে। এতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন। ভবিষ্যতে সীমানা পুনর্নির্ধারণে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করা হতে পারে।

অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বিদ্যমান আইন বাতিল করে আরেকটি নতুন আইনের প্রস্তাব করা হবে। ওই আইনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হবে। এছাড়া ‘না’ ভোটের বিধান আবারও ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হবে। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ হবে। নির্বাচন কমিশনের জনবল নিয়োগের ক্ষমতা ইসির হাতে দেওয়া, নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভোটে প্রার্থী চূড়ান্ত করা, একই দলে অন্তত তিন বছর সদস্য থাকা এবং সরকারি খরচে প্রার্থীদের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে।

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সোমবার রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে না ভোট এবং নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বন্ধে সুপারিশ করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোয় যারা ইভিএম ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের বিচারের সুপারিশ করা হবে।

Sharing is caring!