শীত আসতেই কমলগঞ্জে বাড়ছে পাখিশিকারিদের আনাগোনা

Daily Ajker Sylhet

admin

১৩ ডিসে ২০২৩, ০৬:২৭ অপরাহ্ণ


শীত আসতেই কমলগঞ্জে বাড়ছে পাখিশিকারিদের আনাগোনা

মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা চা-বাগান এলাকায় পাখি শিকারের ঘটনা ঘটছে। শিকারিরা জালসহ নানা রকমের ফাঁদ ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পাখি শিকার করছেন। এদিকে শীতের শুরুতে স্থানীয় দেশি পাখির পাশাপাশি চা-বাগানের বিলঝিলে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শিকারিদের তৎপরতা। বিপন্ন হচ্ছে দেশি-বিদেশি অনেক বিরল পাখি।

পরিবেশকর্মী, বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন বিভাগের রাজকান্দি সংরক্ষিত বন-সংলগ্ন স্থানে কুরমা চা-বাগানের অবস্থান। কুরমা এলাকা কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নে পড়েছে। রাজকান্দি সংরক্ষিত বনে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখি ও বন্য প্রাণীর বসবাস। বনের পাখি ও বন্য প্রাণীরা প্রায়ই কুরমা চা-বাগানের খোলা জায়গায় খাদ্যের খোঁজে বেরিয়ে আসে। এ সুযোগে শিকারিরা সারা বছর কমবেশি পাখি শিকার করছেন। কুরমা চা-বাগানের কুরঞ্জি হাওর, চা-বাগানের খালি টিলা, আশপাশের জায়গা, সরিষা বিলের হাওর, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া-সংলগ্ন আখখেতসহ চা-বাগানের বিভিন্ন সেকশনে এই পাখি শিকার হয়ে থাকে। শিকারিরা পোষা ঘুঘু ও মুনিয়াকে উন্মুক্ত স্থানে বেঁধে রাখেন। বাঁধা পাখির চারপাশে ধান, গমসহ পাখির খাদ্য ছিটিয়ে দেন। বাঁধা পাখি দেখে বন্য পাখিরা ছুটে আসে। এরপর জালের ফাঁদে আটকা পড়ে।

এ ছাড়া লেকের পাশে টোপ দিয়ে জাল পেতে রেখে বিস্তীর্ণ ধানখেতের বিভিন্ন স্থানে ধান ছিটিয়ে পাখিদের আকৃষ্ট করা হয়। পাখিরা খাবারের লোভে এসে জালের ফাঁদে ধরা পড়ে। আখখেতে জালের ফাঁদ দিয়ে ধরা হয় চড়ুই, মুনিয়াসহ ছোট ছোট পাখি।

অন্যদিকে রাতের বেলা যখন পাখিরা দিনের ক্লান্তি নিয়ে গাছের ডালে ঘুমিয়ে থাকে, তখন টর্চ লাইটের আলো ফেলে শিকারিরা গুলতি (কাঠের তৈরি হাতলে রাবারের বেল্ট বেঁধে, তা থেকে মার্বেল বা পাথর ছুড়ে পাখি মারার একপ্রকার যন্ত্র) দিয়ে ঘুমন্ত পাখি শিকার করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি সোমবার বলেন, পাখি শিকার বন্ধে এখানে বন বিভাগের তেমন কোনো তৎপরতা দেখেননি তিনি। মাঝেমধ্যে পরিবেশকর্মীরা শিকারিদের দিনে ও রাতে তাড়া করেন। কিন্তু পরিবেশকর্মীরা সরে গেলেই শিকারিরা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পেশাদার শিকারিদের পাখি বিক্রি করতে হাটবাজারে যেতে হয় না। তাঁদের নির্দিষ্ট ক্রেতা আছেন। ক্রেতার বাড়িতে তাঁরা পাখি পৌঁছে দেন। আর্থিকভাবে সচ্ছল লোকজনই এসব পাখির ক্রেতা।

বন্য প্রাণী সংরক্ষক ও বন্য প্রাণীর আলোকচিত্রী খোকন থৌনাউজম বলেন, তিনি কুরমা এলাকায় পরিযায়ী পাখির মধ্যে বিরল প্রজাতির চায়নিজ রুবিথ্রোট, সাইবেরিয়ান রুবিথ্রোট ও পাঁচ প্রজাতির বান্টিং পেয়েছেন। দেশীয় পাখির মধ্যে সাদা কোমর মুনিয়া, তিলা মুনিয়া, লাল মুনিয়া, ঘুঘু, শালিক, বক, জিটলিং ক্রিস্টিকোলা, গোল্ডেন হেডেড ক্রিস্টিকোলা, ইয়েলো আইড বাবলার ও বন্য কোয়েল অন্যতম।

ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সুলেমান মিয়া বলেন, ‘লুকিয়ে লুকিয়ে কেউ শিকার করতে পারে। আমার চোখের সামনে পড়ে না। ধরতে পারলে সোজা পুলিশ বা বন বিভাগের কাছে চালান করে দেব।’

বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, পরিযায়ীসহ কোনো পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড, ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম পাখি শিকার বন্ধে মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন জায়গায় সভা করছেন বলে জানালেন। কুরমা এলাকায় পাখি শিকার বেশি হচ্ছে—এমনটি শোনার পর তিনি বলেন, এখানে আরও বেশি প্রচারণা চালানো হবে।

Sharing is caring!