পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ

Daily Ajker Sylhet

admin

০৬ এপ্রি ২০২৪, ১২:০২ অপরাহ্ণ


পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ

আনোয়ার আলদীন:
আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর। হাজার মাসের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ রাত। মহামহিমান্বিত এ রাত মুমিন মুসলমানের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত সেরা নেয়ামত। পবিত্র কুরআনের সুরা কদরে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি ইহা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল কদরে। আর তুমি কি জানো মহিমান্বিত কদরের রাত কি? লায়লাতুল কদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা সর্বশ্রেষ্ঠ।’

সুরা কদরে মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘এ রাতে (কদর) ফেরেশতারা এবং জিবরাইল (আ.) তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হন। এটা নিরাপত্তা যা (সন্ধ্যা থেকে) সুবহি সাদেক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা কদর ৪-৫)। মহানবি (স.) বলেন, ‘এ রাতের মর্যাদা ১ হাজার মাস থেকে উত্তম।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা নম্বর-১৭৩) মহানবি (স.) আরো বলেন, ‘যখন কদরের রাত উপস্থিত হয়, তখন জিবরাইল (আ.) বিরাট এক দল ফেরেশতাসহ পৃথিবীতে আসেন।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা নম্বর-১৮২)। লাইলাতুল কদরকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলে অভিহিত করার অর্থ হলো—সাধারণ ১ হাজার মাস তথা, ৮৩ বছর চার মাস প্রতি রাত জাগ্রত থেকে নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদত করলে যে সওয়াব হবে, এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে লাইলাতুল কদরের ফজিলত অতুলনীয়-অভাবনীয়। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং এ রাতের দুটি নাম রেখেছেন। ১. লাইলাতুল কদর বা মহাসম্মানিত রাত; ২. লাইলাতুল মোবারাকা বা বরকতময় রাত। এ রাতে সূর্যাস্তের পর থেকে আরম্ভ হয়ে সুবহি সাদেক পর্যন্ত আল্লাহর খাস রহমত সর্বত্র বর্ষিত হতে থাকে। এই লাইলাতুল কদর কুরআন নাজিলের রাত। এ রাতে পৃথিবীর নিকটতম আকাশে আল্লাহ তার রহমত পুঞ্জিভূত করেন এবং মানুষের প্রার্থনা কবুল করেন। আর তার প্রিয় বান্দাদের ওপর রহমত নাজিল করেন। এ রাতে ইবাদত করা হলে পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করা হয়। (বুখারি প্রথম খণ্ড পৃষ্ঠা-১০)। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে কদরের রাতে ইবাদত করে তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করা হয়। (বুখারি)। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, চার শ্রেণির লোককে আল্লাহ তায়ালা এ রাত্রিতে ক্ষমা করেন না। তারা হলো—১. মদ খোর; ২. মাতা-পিতার অবাধ্যচারী নাফরমান; ৩. আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদকারী এবং ৪. অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণকারী। (আত-তারগিব ২য় খণ্ড)।

কদরের ফজিলত পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু নফল ইবাদত করা, অনেক রাকাত নফল নামাজ আদায় করা, কুরআন তেলাওয়াত করা, তাসবিহ তাহলিল ইত্যাদি পাঠ করা কর্তব্য। এ রাতের শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো ক্ষমা চাওয়ার দোয়া। সহিহ হাদিসে আছে হজরত আয়েশা (রা.) মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আমি বুঝতে পারি শবেকদর কোন রাত, তাহলে ঐ রাতে আমি কি বলব? আল্লাহর কাছে কি চাইব? প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুুল আফওয়া, ফায়াফু আন্নি (হে আল্লাহ তুমি অতীব ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে তুমি ভালোবাস, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও)। কেউ যদি জীবনে অনেক কিছু পায়, কিন্তু ক্ষমা না পায়, তাহলে তার জীবন ব্যর্থ। তাই এ রাতে অন্তরকে নরম করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আগে খাঁটি দিলে তওবা ইস্তেগফার করতে হয়। খাঁটি তওবার চারটি শর্ত—১. আগের গুনাহ থেকে ফিরে আসা বা গুনাহ ছেড়ে দিতে হবে। ২. গুনাহর জন্য মনে মনে অনুতপ্ত হতে হবে যে, আমি বড়ই অন্যায় করেছি। ৩. ভবিষ্যতে ঐ গুনাহ আর করব না বলে মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে। ৪. বান্দার কোনো হক নষ্ট করে থাকলে যথাসাধ্য সে হক আদায় করে দিতে হবে। এ রাতের আরেকটি আমল ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেছেন যে, এ রাতে ইবাদতের আগে যদি কেউ গোসল করে নিতে পারে তার সেটাই উত্তম।

পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রমুখ পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে আগামীকাল রবিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতে ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।

Sharing is caring!