বহিষ্কার হয়েও দল ছাড়বেন না নির্বাচনে অংশ নেওয়া সিলেটের বিএনপি নেতারা
২৯ এপ্রি ২০২৪, ০৬:২১ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সিলেট বিভাগের ৯ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এর মধ্যে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চেয়াম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন নেতা।
বহিষ্কারাদেশ পাওয়া নেতারা জানান, দলের সিদ্ধান্তকে তাঁরা সম্মান করেন। দল নির্বাচনে যাচ্ছে না, নির্বাচনে গেলে তাদের বহিষ্কার করা হবে। সেটি অনেকটা জেনেবুঝেই তাঁরা প্রার্থী হয়েছেন। দল বহিষ্কার করলেও বিএনপির রাজনীতিই করে যাবেন তাঁরা।
শুভাকাঙ্ক্ষী ও জনগণের চাপে তাঁরা প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি বিএনপি প্রার্থীদের। তাঁদের পরিষ্কার ভাষ্য, দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তাঁরা দল ছেড়ে যাবেন না। দলের কর্মী কিংবা নেতা পরিচয় দিতে না পারলেও তাঁরা সমর্থক হিসেবে আজীবন দলের হয়ে কাজ করবেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৭৩ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। গত শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে এই বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
সিলেট অঞ্চলে বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে আছেন, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রব, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ কাওছার খান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক স্বপ্না বেগম। তাঁরা জানান, দলের সিদ্ধান্তের বিষয়টি তাঁরা সংবাদ মাধ্যমে জেনেছেন। তবে কেউই দলের পক্ষ থেকে লিখিত কিছু পাননি।
গৌছ খান বলেন, রাজনীতি করায় জনগণের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা আছে। জনগণের ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়েই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের চাপেই প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছেন। তবে তিনি আশাবাদী—নির্বাচনের পরে বহিষ্কৃতদের দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাচনে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী সেবুল মিয়া জানান, দলের সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে এলাকার যুবসমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, দল যতই বহিষ্কার করুক না কেন, অন্তরে দলের জন্য জায়গা রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন স্থানীয় পর্যায়ের। দল নির্বাচনে নেই এটি ঠিক। দলের কোনো প্রতীক নিয়ে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। এ ছাড়া তৃণমূলের কর্মীরাও চাচ্ছেন যাতে তাঁরা নির্বাচনে থাকেন।
একই রকম ভাষ্য ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রবের। তিনি বলেন, দল নির্বাচনে নেই, এমন সময়ে তাঁদের নির্বাচনে যাওয়া ঠিক নয়, এমন মনে হলেও স্থানীয় জনগণের চাপে অনেক সময় অংশ নিতে হয়। দল যেহেতু বহিষ্কার করেছে, এখন তিনি নেতা নন, কর্মী কিংবা সমর্থক হিসেবে থাকবেন।
দলের বহিষ্কারাদেশ মেনে নিয়েছেন বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ কাওছার খান। বিষয়টিকে জেনেশুনে বিষপানের মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি জাতীয়তাবাদের সূতিকাগার। দলে না থেকেও তিনি দলের জন্য আরও শ্রম দেবেন।
আগেও একবার উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক স্বপ্না বেগম। এবারও একই পদে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানান, রাজনীতি করছেন জনগণের সেবা করার জন্যই। এজন্য এবারো প্রার্থী হয়েছেন। তবে বিএনপির অধীনেই রাজনীতি করে যাবেন।
সিলেট বিভাগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত অপর চারজন হলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাপ মিয়া, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি গণেন্দ্র চন্দ্র দাস। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি ও দিরাই উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ছবি চৌধুরী এবং মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রাহেলা বেগম।
দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, দলের ত্যাগী নেতা–কর্মীদের বহিষ্কার করার তাঁদের কোনো ইচ্ছা ছিল না। দল থেকে বারবার দেশ, জাতি এবং নেতা–কর্মীদের জানানো হচ্ছিল, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ না নেন। কিন্তু যাঁরা এ ফাঁদে পা দিয়েছেন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত দলের নেতা–কর্মীদের বলা হয়েছিল যাতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। যাঁরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তাঁদের সঙ্গে আর দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।